ইয়াসমিনা রেজা ফরাসি নাট্যকার, অভিনেত্রী, ঔপন্যাসিক ও চিত্রনাট্যকার। তাঁর বিখ্যাত নাটক “লা দিয়েউ দু কার্নেজে”র ইংরেজি অনুবাদ গড অফ কার্নেজের বাংলা অনুবাদ করেছেন জাহিন জামাল।
আনিকা একদম কাঁদবেন না মৃন্ময়ী। আপনার এ আচরণ উনাকে শুধু এনকারেজ-ই করছে।
প্রত্যয় (ফারহানকে, সে তখন গ্লাসে আরো রাম ঢালছিল) হ্যাঁ, হ্যাঁ নিজেই নিয়ে নিন। একদমই অন্য রকম স্বাদ, তাই না?
ফারহান একদমই।
প্রত্যয় সিগারেট ধরাবেন নাকি একটা?
মৃন্ময়ী কোনো সিগারেট চলবে না!
ফারহান নাহ্…একদম ঠিক হবে না।
আনিকা তুমি নিশ্চয়ই সিগারেট ধরাতে চাচ্ছো না?
ফারহান আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। আমার যদি সিগারেট ধরাতে ইচ্ছা করে তবে ধরাবো। আর যদি না ধরাই তাহলে এটা শুধুই মৃন্ময়ীর জন্য। বেচারি এর মধ্যেই কেমন আপসেট হয়ে আছে। আনিকা ঠিকই বলেছে, কান্না থামান। মেয়েরা যখন কাঁদে তখন এই ব্যাটাগুলো আরো বেশি লাই পায়।। আমি দুঃখিত কিন্তু প্রত্যয়ের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখলে আমাকে বলতেই হচ্ছে যে, সে আরো বেশি লাই পাচ্ছে। (এর মাঝে তার ফোন বেজে ওঠে।)…হ্যাঁ…রোল্যান্ড…আচ্ছা ঠিক আছে…হ্যাঁ, হ্যাঁ নিউইয়র্ক সেট করে ফেলো…হ্যাঁ তারিখ আর এক্সাক্ট টাইমটা…
আনিকা এর চেয়ে নোংরা আর কিছু হতে পারে না! দিস ইজ জাস্ট অবসিন!
ফারহান (একপাশে সরে গিয়ে নিচু স্বরে কথা বলতে থাকে যাতে আনিকা আরো খেপে না যায়) যখনই হোক তুমি পাঠাও। একদম হট এন্ড ফ্রেশ হওয়া চাই। নাহ্, কেন অবাক হবো! হ্যাঁ, হ্যাঁ আমরা স্বীকার করছি। অবাক হওয়া খুব সাধারণ একটা ব্যাপার…
আনিকা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লেগেই থাকে এই ফোনটার সাথে, সকাল থেকে রাত। জীবনটা আমার তেজপাতা বানিয়ে ফেলেছে এই যন্ত্রটা!
ফারহান উহ…এক সেকেন্ড…(ফোনের স্পিকার হাত দিয়ে আটকিয়ে) আনিকা, খুব ইম্পর্টেন্ট একটা কলে আছি আমি…
আনিকা হ্যাঁ, সবসময় তো ইম্পর্টেন্ট কলেই থাকো। বাইরের সবকিছুই তো তোমার কাছে খুব ইম্পর্টেন্ট…
ফারহান (আবার ফোনে) ঠিক আছে, তাই করো…হ্যাঁ…হ্যাঁ…প্রসিডিউর ফলো করার কোনো দরকার নেই। একটু মাথা খাটিয়ে। হ্যাঁ…হ্যাঁ, মাথা খাটিয়ে…বুদ্ধি করে দুই সপ্তাহ আগে করবে…ঐ অ্যানুয়েল মিটিং-ফিটিং আর কি কি সব আছে তার আগে…
আনিকা রাস্তায় হোক কিংবা ডিনার টেবিল…কোনো কিছুতেই তার কিচ্ছু যায় আসে না…দাঁড়িয়ে শুরু করে দেয়…
ফারহান … পেপার ভর্তি উদ্ধৃতি! হ্যাঁ এটা হতে পারে…আমাকে কৌট করে দাও…
আনিকা আমি আর নিতে পারছি না। আই অ্যাম স্যারি…আবার বমি হবে আমার…
প্রত্যয় ডিশপ্যানটা কই? কোথায় সে মালটা?
মৃন্ময়ী আামি কি জানি!?
ফারহান …বললাম তো, তুমি শুধু আমাকে কৌট করবে যে, “শেয়ারের মূল্য মেনিপুলেট করার জন্য এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না…”
মৃন্ময়ী এই তো এখানে…নিন এটা নিন…
প্রত্যয় দার্জি।
মৃন্ময়ী সবকিছু রেডি আছে। এবার আমরা একদম প্রিপেয়ার্ড।
ফারহান …“শেয়ারের দাম এবং আমার ক্লায়েন্টকে ছোট করার জন্য এটা করা হয়েছে”, ফারহান ফেরদৌস, প্রধান আইনি উপদেষ্টা, এক্সিমকো-ফার্মা কোম্পানি এটা নিশ্চিত করেছেন।…হ্যাঁ, এপি, রয়টার্স, জেনারেল প্রেস, মেডিক্যাল প্রেস আর যা যা আছে সবখানে…(বলে সে ফোন রাখে)
মৃন্ময়ী উনি আবার বমি করছেন।
ফারহান হয়েছেটা কি তোমার, হ্যাঁ?
আনিকা তোমার এই জানতে চাওয়ায় সত্যিই আমি কৃতার্থ হলাম!
ফারহান আমার খুব খারাপ লাগছে!
আনিকা আমি সত্যিই খুব দুঃখিত। আমি হয়তো তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম।
ফারহান আহ, আনিকা, প্লিজ! এমন কোরো না। উনারা এমন করছেন বলে তোমাকেও শুরু করতে হবে। তাদের বিয়েটা মিসম্যাচ হয়েছে বলে তোমার নিজেরটাকেও তাদের সাথে তুলনা করতে হবে!
মৃন্ময়ী আমাদের বিয়ে মিসম্যাচ হয়েছে! এটা…এটা বলার অধিকার আপনাকে কে দিলো, বলুন কে দিলো? হু গেইভ ইউ পার্মিশন? (ফারহানের ফোন আবার ভাইব্রেট করে)
ফারহান হ্যাঁ, হ্যাঁ, সৌমিক এইমাত্র খসড়াটা আমাকে পড়ে শোনালো। তোমাকে এখনি পাঠানো হচ্ছে ওটা। হ্যাঁ, ম্যানিপুলেশন, শেয়ার প্রাইস ম্যানিপুলেশন…কিছুক্ষণের মধ্যেই পাবে তুমি। (ফোন রাখে সে)…আমি তো এটা বলিনি, উনাকে জিজ্ঞেস করুন, উনিই এটা বলেছেন।
মৃন্ময়ী প্রত্যয়।
ফারহান স্যরি, প্রত্যয়।
মৃন্ময়ী আমি আমাদের সম্পর্ক নিয়ে যেকোনো ধরনের জাজমেন্টাল কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম তোমাকে।
ফারহান সেক্ষেত্রে তো আমি বলবো আমার সন্তান সম্পর্কেও কোনো জাজমেন্টাল কথা আপনি বলতে পারেন
না।
মৃন্ময়ী এর সাথে আপনার সন্তানের কোনো সম্পর্কই নেই। আর আপনার ছেলে তো আমাদের ছেলেকে মেরেছে।
ফারহান ছেলেমানুষ ওরা। আর এ বয়সের বাচ্চারা এমন এক-আধটু করেই থাকে। এটাই নিয়ম।
মৃন্ময়ী না, না, বিষয়টা মোটেও এমন না।
ফারহান অবশ্যই বিষয়টা এমনই। এ ধরনের বিষয় বুঝতে হলে আপনাকে এগুলোর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। আর ভুলে যাবেন না মাইট ইজ রাইট।
মৃন্ময়ী আপনি যা বলছেন এগুলো সব প্রিহিস্টোরিক যুগের কথা। আমাদের সভ্য সমাজে এসব চলে না।
ফারহান সভ্য সমাজ? তাও আবার আমাদের মতো সভ্য! একটু বুঝিয়ে বলবেন কী?
মৃন্ময়ী আপনি খুব বিরক্ত করছেন আমাকে। আর এই আলোচনাও খুব বিরক্তিকর।
ফারহান দেখুন মৃন্ময়ী, আমি মৃত্যুদেবে বিশ্বাস করি। ক্লান্তিহীনভাবে সময়ের শুরু থেকে সে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আপনার আফ্রিকা নিয়ে বেশ আগ্রহ আছে, তাই না? (আনিকার দিকে তাকিয়ে, সে বমি করার চেষ্টা করছিল) খুব বেশি খারাপ লাগছে?
আনিকা আমাকে নিয়ে তোমার চিন্তিত না হলেও চলবে।
ফারহান কিন্তু আমি চিন্তিত।
আনিকা ঠিক আছে সবকিছু।
ফারহান অ্যাজ এ ম্যাটার অব ফ্যাক্ট, আমি কঙ্গো থেকে মাত্র ক’দিন আগেই ফিরলাম। আর সেখানে কী দেখলাম জানেন? ছোট ছোট বাচ্চাদের সেখানে মানুষ মারা শেখানো হচ্ছে। মাত্র ৮-১০ বছর বয়স ওদের। আর কৈশোর বয়সটা পেরোতে না পেরোতেই হয়তো ওরা একেকজন একশো’র উপর মানুষ মেরে ফেলবে। চাপাতি, কালাশ অথবা থাম্প গান দিয়ে। এ অবস্থায় এখন আপনি আমাকে বলুন, আমার ছেলে যদি পার্কে একটা লাঠি দিয়ে তার খেলার সাথীকে আঘাত করে আর এতে যদি সেই ছেলেটির একটা বা দুটো…ধরুন দুটো দাঁত ভেঙেই যায় তাহলে এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হবার কিছু আছে আমার? যেমন আপনি মনে করছেন যেন ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটে গেছে।
মৃন্ময়ী ভুল বলছেন আপনি।
আনিকা (ভেঙিয়ে) থাম্প গান…
ফারহান হ্যাঁ, গ্রেনেড লঞ্চারকে ওরা থাম্প গানই বলে। (আনিকা বেসিনে থুতু ফেলে)
প্রত্যয় আপনি ঠিক আছেন তো?
আনিকা …একদম।
ফারহান কী হলো আবার?
আনিকা তেঁতো থুতু, আর কিছু না।
মৃন্ময়ী আফ্রিকা নিয়ে আমাকে লেকচার শোনাবেন না। ওখানে কি হচ্ছে সবই জানি আমি। এক মাসের বেশি ওখানটায় ছিলাম আমি।
ফারহান আমার কোনো সন্দেহ নেই। আইসিসি দারফুর ট্র্যাজেডি নিয়ে তদন্ত করছে ওখানটায়।
মৃন্ময়ী আপনার ধারণা আমি এটা জানি না।
প্রত্যয় ফর গড্স সেক। এটা নিয়ে ওকে রাগিয়ে দেবেন না। (ক্ষুব্ধ মৃন্ময়ী নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। প্রত্যয়ের দিকে তেড়ে যায়। তাকে ভয়ঙ্করভাবে মারতে থাকে। ফারহান এগিয়ে গিয়ে তাকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করে।)
ফারহান কী বলবো! আমার তো আপনাকে বেশ ভালো লাগছে।
মৃন্ময়ী কিন্তু আমার আপনাকে একদমই ভালো লাগছে না।
প্রত্যয় বুঝুন এবার! সে নাকি পৃথিবীতে শান্তি এবং সম্প্রীতির একজন সমর্থক!
মৃন্ময়ী চুপ! একদম চুপ! কোনো কথা বলবে না। এটা বাংলাদেশ, কঙ্গো না। আমাদের সোসাইটির মূলনীতিতে আমরা চলি। রমনা পার্কে যা হয়েছে সেটা কি এই সোসাইটির ভ্যালুকে নির্দেশ করে? বলুন করে? আর যদি মনে করেন যে হ্যাঁ এমনটাই চলে এখানে তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই।
প্রত্যয় নিজের স্বামীকে ধরে পেটানো-ও নিশ্চয়ই সেই মূল্যবোধেরই অংশ, নাকি?
মৃন্ময়ী প্রত্যয়, খুব খারাপ হবে কিন্তু বলে দিচ্ছি, খুব খারাপ কিছু!
ফারহান সে যেভাবে আপনার উপর গিয়ে পড়লো আমি হলে তো ফিদা হয়ে যেতাম।
মৃন্ময়ী আমি আবার এভাবেই গিয়ে পড়বো।
আনিকা উনি মজা করছেন, বুঝতে পারছেন না আপনি।
মৃন্ময়ী আই ডোন্ট গিভ এ শিট।
ফারহান আমি কিন্তু কোনো মজাটজা করছি না ভাই। নৈতিকতা বলে যে, আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত কিন্তু আমার মনে হয় কখনো কখনো আবেগকে নিয়ন্ত্রণ না করাটাই ভালো। স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের মুহূর্তে আপনি নিশ্চয়ই হামদ-নাত গাইতে চাইবেন না। উফ এই রাম! কোথায় পাওয়া যাবে এটা?
প্রত্যয় ওটা ভিনটেজ। আমার মনে হয় না কোথাও পাবেন।
আনিকা থাম্প গান। হাহাহাহাহা…
মৃন্ময়ী (একই সুরে) থাম্প গান…ঠিক বলেছেন!
ফারহান হ্যাঁ, থাম্প গানই বলে ওরা।
আনিকা গ্রেনেড লঞ্চার না বলে তুমি বারবার থাম্প গান বলছো কেন?
ফারহান কারণ এটা থাম্প গান তাই। যেমনটা আমরা কালাশনিকভকে বলি কালাশ।
আনিকা এই ‘আমরা’-টা আবার কে?
ফারহান যথেষ্ট হয়েছে আনিকা। দ্যাট্স ইনাফ।
আনিকা ফারহান, উনাদের নিজেদের ছোটখাট প্রব্লেমগুলো সল্ভ করার জন্য একটু স্পেস দিতে হবে। বুঝতে পারছো কি বলছি?
ফারহান হু।
মৃন্ময়ী কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কেন! সত্যিই আমি বুঝতে পারছি না। আমরা তো এই পৃথিবীরই মানুষ নাকি! আমি বুঝতে পারছি না আমাদের নিজেদের সমস্যা বলে আমরা কেন এটাকে সমাধান না করেই ছেড়ে দেবো।
প্রত্যয় আহ্ দার্জি! এসব ভাবা বন্ধ করবে তুমি?
মৃন্ময়ী আমি ওনাকে খুন করে ফেলবো। (অ্যালানের ফোন আবার ভাইব্রেট করে)
ফারহান হ্যাঁ…আচ্ছা ঠিক আছে, ঐ শব্দটা বাদ দাও…হ্যাঁ…হ্যাঁ বাদ দাও…তার বদলে লেখো…একটা স্থূল ষড়যন্ত্র হয়েছে…হ্যাঁ…তাই…
মৃন্ময়ী আপনি ঠিকই বলেছেন…এটা খুবই বেদনাদায়ক!
ফারহান …এগুলো ছাড়া বাকিগুলো সে অ্যাপ্রুভ করেছে? দ্যাট্স গুড, দ্যাট্স ভেরি গুড। (ফোন রাখে সে)…হ্যাঁ কি বলছিলাম আমরা? থাম্প গান নিয়ে কিছু?
মৃন্ময়ী আমি বলছিলাম যে, আমার স্বামী পছন্দ করুক বা না করুক, সতর্কতার খাতিরে রামিনকে যদি একটু চোখে চোখে রাখা যায়…মানে আমি বলতে চাইছি যদি এটা প্র্যাকটিস করতে পারেন…
ফারহান চোখে চোখে রাখা…আনিকা এটা একটু ভারি হয়ে যাচ্ছে না…বিশেষত তোমার এমন অবস্থায়!
আনিকা কোন অবস্থা? কীসের কথা বলছো?
ফারহান চোখে চোখে রাখা…আইডিয়াটা বেশ ইন্টারেস্টিং…(তার ফোন আবার ভাইব্রেট করে) …হ্যাঁ…না…না…না…প্রেস রিলিজ যাবার আগে কোনো ইন্টারভিউ-টিন্টারভিউ দেয়া যাবে না।
মৃন্ময়ী যথেষ্ট হয়েছে! আমি বলছি এই বিশ্রী আলোচনা আপনি বন্ধ করুন। এখনই বন্ধ করুন।
ফারহান …অবশ্যই না…দ্য শেয়ারহোল্ডার ঔন্ট গিভ এ ফাক…মনে রেখো তারা হচ্ছেন রাজা…কীসের রাজা…সম্রাট…সম্রাট উনারা! (আনিকা রুদ্রমূর্তিতে ফারহানের দিকে তেড়েফুঁরে এগিয়ে আসে, খপ করে তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কোথায় রাখবে ভেবে না পেয়ে টিউলিপের ফুলদানির ভেতর ফেলে দেয়)…আনিকা হোয়াট দ্য ফাক…
আনিকা ঠিক করেছি…একদম ঠিক হয়েছে…
মৃন্ময়ী হাহাহাহাহা…ওয়েল ডান!
প্রত্যয় ওহ মাই গড!
ফারহান কী মাথাটা একেবারে গেছে তোমার, না কি, হ্যাঁ? ফাক্। (দৌড়ে ফুলদানির কাছে যায়। কিন্তু প্রত্যয় তার আগেই ওখানে পৌঁছে ফুলদানি থেকে ফোনটা বের করে)
প্রত্যয় হেয়ার ড্রায়ার? হেয়ার ড্রায়ারটা কই? (এখানে-ওখানে খুঁজে সে হেয়ার ড্রায়ারটা বের করে তা দিয়ে ফোনটা শুকাতে থাকে)
ফারহান তোমাকে আসলে ঘরে লক করে রাখা উচিত। একটা পাগলের সাথে বাস আমার। অসভ্য কোথাকার! মানে এটা কি ফাজলামি নাকি, হ্যাঁ! সবকিছুর একটা সীমা থাকা উচিত! আমার সবকিছু এর ভেতর, সবকিছু! ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিয়ে সব ঠিক করে এনেছিলাম…
প্রত্যয় (আনিকাকে, হেয়ার ড্রায়ারের উচ্চকিত শব্দকে ছাপিয়ে) বিশ্বাসই হচ্ছে না! এটা খুবই ইররেসপন্সসিবল অ্যাটিটুড!
ফারহান আমার সারা জীবনের সবকিছু ওর ভেতর…
আনিকা শুনলেন! তার সারা জীবন! তার সারা জীবন নাকি ওর ভেতর!
প্রত্যয় (এখনও বাতাস করেই যাচ্ছে) আরে থামুন তো আপনি। ঠিক হয়ে যাবে এটা…
ফারহান ছাড়ুন তো ওটা। ইট্স ফাক্ড!
প্রত্যয় এর সিম আর ব্যাটারিটা খুলতে হবে। পারবেন আপনি? (ফারহান কোনো পূর্ব ধারণা ছাড়াই এগুলো খোলার চেষ্ট করে)
ফারহান কীভাবে খোলে এটা! ধ্যাৎ! মাত্রই কিনেছি ফোনটা।
প্রত্যয় দেখি আমাকে দিন।
ফারহান ইট্স ফাক্ড, ম্যান, জাস্ট ফাক্ড! কি এখানে মজার কিছু হচ্ছে, হ্যাঁ, সার্কাস চলছে এখানটায়!
প্রত্যয় (খুব সহজেই খুলে ফেলে ফোনটা) এই তো খুলেছে। (সে সবগুলো পার্টস খুলে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকাতে থাকে) ছি মৃন্ময়ী, কি করছো তুমি এসব! তুমি কেন হাসছো এভাবে! ম্যানার সেন্স সব গুলিয়ে খেয়েছো নাকি?
মৃন্ময়ী (প্রাণখুলে হাসতে হাসতে) আমার হাজব্যান্ড পুরো সন্ধ্যাটা হেয়ার ড্রায়ার ব্লো করতে করতেই পার করলো!
আনিকা হাহাহাহাহাহাহ……! (আনিকা হাসতে হাসতে কোনো দ্বিধা ছাড়াই আরো রাম নেয়। ওদিকে প্রত্যয় ফোন শুকানোতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণের জন্য হেয়ার ড্রায়ারের একটানা শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। ফারহান হতাশ হয়ে ঠাস করে বসে পড়ে।)
ফারহান বাদ দিন তো! ছাড়ুন। কিছুই হবে না! (অবশেষে প্রত্যয় হেয়ার ড্রায়ার বন্ধ করে)
প্রত্যয় একটু সময় লাগবে। (থামে) আপনি চাইলে আমাদের ফোন ব্যবহার করতে পারেন। (ফারহান এমন ভাব করে যেন তার প্রয়োজন নেই আবার না করেও পারে না)…আমাকে বলতেই হবে যে…
আনিকা হ্যাঁ, কি বলতে হবে প্রত্যয়…?
(চলবে)
পড়ুন ।। কিস্তি : ৫