একশো বছর আগের রেসিপি : ‘‘ইলিস মাছ পোড়া’’

ইলিশ-পোড়া-1

বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায় একশো বছর আগে লিখেছিলেন রান্নাবিষয়ক বই পাক-প্রণালী; সম্ভবত এটিই বাংলা ভাষায় রচিত সব চেয়ে দীর্ঘ রন্ধনপ্রণালি বিষয়ক বই। দেশি-বিদেশি নানা ধরনের রান্নার রেসিপি এ বইয়ে পাওয়া যায়। পাওয়া যায় একালে বিলুপ্ত সব রেসিপির বিবরণ। বাংলা অঞ্চলের খাদ্য-ইতিহাসের ক্ষেত্রে বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে বই থেকে একটি রেসিপি।

 

ইলিস মাছ পোড়া বেশ সুখাদ্য এবং মুখ-রোচক। ইচ্ছা করিলে সকলেই উহা প্রস্তুত করিয়া রসনার তৃপ্তি সাধন করিতে পারেন। যে নিয়মে ইলিস মাছ পোড়া প্রস্তুত করিতে হয় তাহা পাঠ কর।

 

একটী পেটো অর্থাৎ বড় রকম ইলিস মাছ লইয়া তাহার আঁইস ফেলিয়া দেও। পরে তাহার লেজা ও মুড়া কাটিয়া পৃথক করিয়া রাখ। এখন মৎস্যের পেটের মধ্যস্থ আঁত প্রভৃতি ফেলিয়া দেও। এই সময় অধিক জলে মাছটী বেশ করিয়া ধুইয়া লও। ধৌত হইলে মাছের উপরিভাগে লম্বাভাবে মধ্যে মধ্যে অল্প অল্প করিয়া চিরিয়া দেও।

 

এদিকে হরিদ্রা বাটা, ধনে বাটা, আদা বাটা, লংকাবাটা, লবণ, কাসুন্দি এবং সরিসা (খাঁটি) তৈল এক সঙ্গে চটকাইয়া তাহার কতক মৎস্যের পেটের ভিতর ‍পুর দেও এবং কতক তাহার উপরিভাগে লেপিয়া মাখাইয়া দেও। এখন কচি কলাপাতার তিন চারিটী স্তবকে উহা জড়াইয়া বাঁধ। পাতায় জড়িত মৎস্য আগুণের উপর রাখিয়া বেগুণ পোড়ার ন্যায় নীচে ও উপরে আগুণ দিয়া পোড়াইয়া লও। আমরা পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি কাষ্ঠাদির অগ্নি অপেক্ষা ঘুঁটের আগুণে অতি উত্তম পুড়িয়া থাকে। আগুণের জালে না পোড়াইয়া অঙ্গারে দগ্ধ করা ভাল।

 

আগুণে উপরিভাগের দুই একটী পাতা পুড়িয়া গেলে তখন তাহা তুলিয়া লও। এবং আস্তে আস্তে অবশিষ্ট পাতা খুলিয়া তন্মধ্যস্থ মৎস্য বাহির কর। এখন এই পোড়া ইলিস মাছ একবার আহার করিয়া দেখ, পুনর্ব্বার তোমার মুখে কেমন লাগে?

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here