একটা শুনশান রাত পথে, মাথায়
শুনশান রাত
লেপ্টে আছে পথের ভেতর
লেপ্টে আছে এ মাথায়
পথটা দেখা যাচ্ছে সামনে
কোনো শব্দ নেই
গাছগুলো দেখা যাচ্ছে
নির্মোহ নির্বাক
বাতাস বইছে
তবু চরাচরে কোনো শব্দ নেই
উপরের আকাশটা
পরিপূর্ণ পাখা মেলে আছে
পাখা ভাঙছে না
পথিকশূন্য এ রাতে
কোনো কুকুরও আজ পাহারায় নেই পথে
অভিমানে চলে গেছে এ শহর ছেড়ে
শুয়ে থাকা পথপার্শ্বে
উঁচু উঁচু দালান দাঁড়ানো
সেখানে মৃত আলোর নিরাপত্তা
রাতটা ক্রমশ ঢুকে যাচ্ছে
পথের পেটের মধ্যে
পথটা মহাকালে ঘুমিয়ে
মাথাটা ঐ পথ
শুনশান রাত নিয়ে শুয়ে!
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
আমরা, মা–মেয়ে!
আমাদের আলাদা জীবন
একই শহরের আঙিনায়
মাঝে মাঝে আমরাও এক
একই ঘরে রোদ খেলে যায়
তখন আমরা ভাসি স্নেহে
ভেসে যায় সুরের সড়ক
আনন্দ এমনই গাছের
ফুলের গন্ধে টের পাই
তারপর দিন যত বাড়ে
গাঢ় হয় যত আলাপন
আচানক খসে পড়ে বোটা
গাছ থেকে ফলের পতন
এমন পতনে বার বার
ভেঙে যায় আয়নার মুখ
আমরা আলাদা হই ফের
এমন এ যুগের অসুখ
তোমার ক্ষতের পরে দেখো
বার বার ঢেলে দিই স্নেহ
একদিন ঘুমে আছরায়
অচেনা ছায়ার মত কেহ
এ ছায়া তোমার নয় জানি
তবু তার হাতছানি বড়
তোমাকে ডুবিয়ে নেয় ফের
ভাসার যতটা আগ্রহ
সব কিছু ধুয়ে মুছে যায়
এত কথা এত সুর গান
তুমি কী পাও না তার টের
আমাদের প্রেমে লাগে টান
কেন তুমি অপারের হয়ে
বার বার ফিরে আলো জ্বালো
কেনইবা বার বার সেই
অন্ধছায়ায় মুখ তোলো
তখন তো চিনি না তোমায়
যে আমার স্নেহে তোলে সুর
কেন আলো বৃথা করে দিয়ে
আঁধারের কাছে চলে যাও
তার চেয়ে প্রাণ নিয়ে এসো
আনন্দ নিয়ে ফিরে যাও
আমার দরজা থাক খোলা
চিরকাল খেলে যাক স্নেহ
মাঝখানে কেন আনো কাঁটা
নিজেকে বিঁধিয়ে কর লাল
তুমি কী বোঝো না তার মাগো
আমার দু’চোখ ডুবে যায়!
২২ সেপ্টেম্বর ২০২০
ডাকছি তোমায় বৃষ্টিদিন
সারা দিন জুড়ে কী হাঁসফাঁস
আয় রে বৃষ্টি শ্রাবণ মাস
ঝরে পর দেখি মেঘের দল
আয় রে পতন আয় রে জল
ভেজা ঘাসমাটি চুপসে গাছ
ভেজা মাঠে ভিজে দাঁড়িয়ে কাক
দূর থেকে পাখি পালক তার
ভেজা ডানা ডালে বসেই থাক
আয় রে পতন আয় রে জল
এই আষাঢ়ের আয় রে ঢল
ভেজা ছাতা ফেলে ভিজছে গা
ভেজা কান্নারা তফাত্ যা
ভিজে যাক ছাদ ছাদের টব
খট্খটে টবে জমুক জল
আয় রে বৃষ্টি আয় বাদল
আয় রে আষাঢ় আয় রে ঢল
ভেজা গাছ তার ভেজা ভেজা ফুল
ভিজে যাক চুল ভিজে যাক ভুল
চিবুক গড়িয়ে ঝরুক জল
আয় রে আষাঢ় আয় বাদল
ভিজে যাক সুখে ঘাটের নাও
ছিঁড়ে যাক দড়ি ভাটিতে যাও
নদীতে নামবে নব জোয়ার
মাছের মায়ের ঢেউ সাঁতার
পারের ওপারে দাঁড়ানো জন
ভেজা জলে তার নিমন্ত্রণ
ঝাঁপ দেবে জলে অপেক্ষায়
আয় রে আষাঢ় আয় মেঘায়
ভিজে যাক জলে জানলা-কাঁচ
ভিজুক চশমা চোখের লাজ
সারা দিন জুড়ে বদ্ধ শ্বাস
আয় রে শান্তি আয় রে আশ
আকাশে আজকে কী উদ্বেগ
আয় রে তীব্র আয় রে মেঘ
ধুকছে মানুষ কুকুর শব
ধুকছে তাপের জনের পদ
ডাকছি তোমায় বৃষ্টিদিন
আয় রে পতন আয় রঙিন!
২৭ জুলাই ২০২০ রাজশাহী
ভয়নাম
আমাকে পাহারা দিয়ে তুলে নিয়ে যাবে ভয়
ভয়ের পোশাক দেখি ধবধবে সাদা
আমাকে রক্ষা না করে
পিটিয়ে মারলো যে পোশাক
সে পোশাকও ভয়ের
ধর্ষণের পর আমার ছবি তুলেছে যে পুরুষ
তাকে আড়াল করেছিলো যে তক্ষকেরা
সেও ঐ ভয়েরই দোসর
আমার পথ আগলে দাঁড়ালো যে মোটরবাইক
তার স্পর্ধার নিচে নাচে ঐ ভয়ের রাক্ষস
আমার জিহ্বা আর কলমটা কাটা পড়বে
একই ভয়ের ইশারায়
ভয়ের সকল পোশাক আজ রাষ্ট্রীয়,
হত্যার মতো শীতল আর থমথমে,
ভয়গুলির অপর নাম এই রাষ্ট্র!
১৪ অক্টোবর ২০২০
রাতের সংরাগ
আসন্ন এ শীতে ঠান্ডা রাত্রির
আকাশ মেতেছিলো আলেয়া যাত্রীর
বাতাসে সংরাগে ভরেছে ভোর ছুঁয়ে
আযান-ধ্বনি পথে ফেরায় সম্বিত
তুমি কী জেনেছিলে!
কথার প্রাণে কত-কথারা ধেয়ে যায়
অন্তহীন ছাদে তারারা ঝলকায়
আকাশে স্থির তবু একটি শুকতারা
নিভলো অবশেষে ভোরের ভরসায়
তুমি কী দেখেছিলে!
রাত্রি কুন্তলে ডাকিনী গান গায়
সে গানে ভৈরব সুরের আশনাই
এ রাত মিহি কণা এ রাত ঠান্ডার
রাত্রি রৌরবে ডাকিনী হেঁটে যায়
তুমি কী দেখেছিলে!
সময় মহাকালে থেমেছে পুরাণের
থেমেছে পিপাসায় ঘোড়ার খুরভার
ডাকিনী আজলায় জল কী তুলে দেবে
উচ্চৈঃশ্রবাদের শুকনা কণ্ঠায়!
এ কোন রাত্রির আবহে মহাকাল
যুদ্ধ সংকেতে শিঙ্গা ফুকরায়
এসেছে বহ্লক ওপারে পুষ্পক
কবজকুণ্ডলে জিগীষা মতলব
যুদ্ধ অফুরান মরণ মর্দান
বিলাপে ভারী বুকে বিরোধী ময়দান
ধূর্ত হোক তবু মানুষই মানবিক
ডাকিনী কোন্ পথে হাঁটবে হাঁটা যায়!
তুমি কী বুঝেছিলে!
এমনই সময়ের ক্লান্ত ক্লিশে দিন
রাত্রি অনিমেষ মুহূর্তে মিলায়
কথার ককপিটে অঘোরী সওয়ার্
ঠান্ডা কাশি কার আগুনে পুড়ে যায়
তুমি কী পেলে টের!
এ শিখা লেলিহান এ শিখা ধাবমান
কে ঢালে জল তাতে ভষ্মে আগুয়ান
কাহার পদছাপে স্তব্ধ দশদিক
ডাকিনী চুল খুলে আকাশে উড্ডীন
আকাশ শুষে নেবে সকল সংকট!
কথার কিংশুকে হারানো উৎকট
সীসার তোলপাড়ে নীলচে পান্না
রক্তস্রাবে ভোর আলোর আয়না!
তুমি তো বোঝো নাই ঠান্ডা রাত শেষে,
রক্তজবা কার যোনীতে-জঙ্ঘায়!
৭ নভেম্বর ২০২০ রাজশাহী