অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের কবিতা

সদ্য প্রয়াত হয়েছেন পঞ্চাশের দশকের কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আর প্রবীণের প্রজ্ঞা — এই দুইয়ের বিমিশ্রণ তাঁর কবিতা। যৌবন-বাউল, ধুনুরি দিয়েছে টঙ্কার প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত কবিতা-সংকলন। কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন অজস্র গদ্য; অনুবাদ করেছেন। পদ্য ও গদ্যের স্বতন্ত্র ভঙ্গি নিয়ে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ছিলেন পঞ্চাশের উজ্জ্বলতম কবিদের একজন। সহজিয়ার পাঠকদের জন্য মুদ্রিত হলো তাঁর ৫টি কবিতা।

 

দ্ব্যার্থ-আলো

ঈশ্বরের অন্তর্বাস খুলে

তারা দেখবো তারা দেখবো আমি

মানবো না আর প্রথার সপ্তশতী

সুবচনীর ব্রত অনেক হলো

কোপার্নিকাস যা-ই বলুন না কেন

ঈশ্বরের অন্তর্বাস ছিঁড়ে

তিনশো রকম সূর্য দেখবো আমি

বলতে গিয়ে দেখি হঠাৎ তুমি

আমার নগ্ন, আমার পুণ্যলতা,

হেঁটে যাচ্ছো ভিড়ের মধ্য দিয়ে

নারীর হাতে এ কোন্ কমণ্ডলু

প্রশ্ন করে টালিগঞ্জের মানুষ

ঈশ্বরের ভীষণ-মুখোমুখি

দাঁড়িয়ে তোমার নীল আহুতি দেখি

বিল্বপাতায় সিঁদুর মাখামাখি

স্পর্ধিত পা ঘুণ-ধরা ঘট ভাঙে

কলকাতার ভিড়ের ভিতর থেকে

এখন শুধু তোমায় দেখব আমি।।

 

বৃক্ষ এক উপলক্ষ

গাছটার গায়ে একটি ডাল

হুবহু হাতল যেন —

এইবারে গাছটিকে তুলে ধরো কাচের গ্লাসের মতো

মেলে ধরো রুগ্ণ দেবতাদের উদ্দেশেে

এবং তাঁদের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেবার কল্পে

বৃক্ষের নির্যাস তুমি পান করো

 

চৌরঙ্গির ফুটপাতে

চৌরঙ্গির ফুটপাতে

আমার শতাব্দীর কামধেনু

ঢেলে দিচ্ছে কালো দুধ সীসা-রঙা

যে খাবে তার মৃত্যু হবে যে খাবে না তার

মূর্খতা ভালোবাসি না

 

পুনশ্চালিত

আগের বিজয়া দশমীতে কাকে-কাকে চিঠি লিখেছিলাম

তার সংক্ষিপ্ত তালিকা তছ্নছ করতে গিয়ে চোখে পড়ল

এক বন্ধুর নাম — যে আর নেই — তবু তাকে চিঠি লিখি,

এবার আমারই ঠিকানায়

 

যা সংসার সে-ই তো নির্বাণ

মৈত্রেয় বুদ্ধের দেশে

আজো বুঝি অসম্ভব নির্বাণ নির্বাণ

আমি কিন্তু নির্বাণ ভালোবাসি না

ভারতবর্ষের, আমি বিশেষত কলকাতার ভাটিয়ালি ছেলে

নির্বাণ ভালোবাসি না, আমি আজ

ভবানীপুরের পার্কে রক্তজবা দুই হাতে সংকলন করি!

 

এক-একজন তথাগত এক-একটি ফুলের গর্ভ থেকে

সহসা নির্গত হয়

রজস্বল রুপালির আভায় প্লাবিত অন্ধকারে

কলকাতার চোরাপথে — যা সংসার সে-ই তো নির্বাণ —

এই মনে করে আমি স্থির হতে থাকি

দু-দলের খেলা দেখি সব-কিছু বাসনা থামিয়ে।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here