কত ধানে কত চাল! প্রতি পক্ষের বোলারদের ত্রাস এবং ২২ গজের ব্যাট হাতে বোলারদের শাসকের নাম ক্রিস গেইল। অভিষেকেই গেইল বুঝিয়ে দিলেন, ভবিষ্যত কী তার। না, ব্যাট হাতে ওয়ানডেতে যাচ্ছেতাই শুরু করেছিলেন। প্রথম ফিফটি পেতে ৯ ম্যাচ খেলতে হয়েছিল। এর মধ্যে ৬ বার এক অংকের ঘরে থাকতেই আউট হয়েছিলেন। টেস্টেও প্রথম ফিফটি পেলেন ৬ ইনিংস পর। প্রথম সফরেই দলের সিনিয়রদের সাথে বাজে ব্যবহার করলেন। রীতিমতো বেয়াদবি করে আলোচনায় তখন গেইল।
তাকে হয়তো বাদই দিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষ বোলারদের সাথে এমনভাবে পেটানো শুরু করলেন, তাকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবাও কঠিন হয়ে গেল। অভিষেক মাত্র ১৯ বছর বয়সে — জামাইকার পক্ষ হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ঘটান। তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষ হয়ে যুবদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলেন। এগার মাস পর একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেন। এর ছয় মাস পর টেস্ট ম্যাচ খেলেন।
ক্রিস গেইল সাধারণত ইনিংসের গোড়াপত্তন করেন এবং বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হিসেবে ইতোমধ্যেই নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। জুলাই, ২০১১ সালে গেইল (১৭৫) এবং ড্যারেন গঙ্গা (৮৯) কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব, বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৪ রানের জুটি করে নতুন রেকর্ড গড়েন। টেস্ট ক্রিকেটেও কম কি?
চারজন ক্রিকেটারের একজন হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে দুইবার ত্রি-শতক হাঁকিয়েছেন গেইল। তন্মধ্যে ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩১৭ ও ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৩৩ করেন। ২০১২ সালে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্টের প্রথম বলেই ছক্কা মেরেছিলেন তিনি। ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩য় টেস্ট ম্যাচে ক্রিস গেইল টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৫ম দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন। তিনি মাত্র ৭০ বলে সেঞ্চুরিতে পৌঁছেন। কিন্তু ১০২ রান করে আউট হন। এ ইনিংসে বেশ কিছু ছক্কা মারেন। তার মধ্যে একটি লিলি-মার্শ স্ট্যান্ডের ছাদে চলে যায়। ধারাভাষ্যকার ও সাবেক উইকেট-রক্ষক অস্ট্রেলিয়ার ইয়ান হিলি মন্তব্য করেছিলেন যে, প্রায় ১৪০ মিটার দূরে বল চলে গিয়েছিল।
১৬ নভেম্বর, ২০১০ সালে ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান, ব্রায়ান লারা এবং বীরেন্দ্র শেওয়াগের পর ৪র্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি দু’টি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান। ‘ইউনিভার্স বস’ ১ হাজার ছক্কায় বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন ক্রিস গেইল এইবারের আইপিএলে টি-২০টির ‘ইউনিভার্স বস’ ক্রিস গেইলকে প্রথম ৭ ম্যাচ বসিয়ে রেখেছিল কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব। পরে একাদশে ঠাঁই পেয়েই নিজের জাত চিনিয়ে দিলেন। প্রতি ম্যাচেই তার পিটুনিতে বিধ্বস্ত হচ্ছে প্রতিপক্ষের বোলাররা। এবারের আইপিএল খেলার আগে গেইলের ব্যাট থেকে এসেছিল ৯৩টি ছক্কা।
ধারণা করা হচ্ছিল, পরবর্তী ২ মাচেই মাইলফলক স্পর্শ করে ফেলবেন তিনি। কিন্তু ভক্তদের আর বেশি অপেক্ষায় রাখলেন না গেইল। ২৯ অক্টোবর ৮ ছক্কা হাঁকিয়ে ফ্রাঞ্চাইজি টি-২০ ফরম্যাটে ১০০১ বার বল উড়িয়ে সীমানা পার করার অনন্য কীর্তি গড়লেন। গেইলের ১ হাজার ছক্কার আশেপাশে আর কেউ নেই । টি ২০ সেরা ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত বিশ্বের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ২২টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন এ তারকা ব্যাটসম্যান। বিশ্বমানে গেইল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গেইল দেশের হয়ে ১০৩টি টেস্ট, ৩০১টি ওয়ানডে আর ৫৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ৪২টি সেঞ্চুরির সাহায্যে ১৯ হাজার ৩২১ রান সংগ্রহ করেছেন।