চর অঞ্চল : জলে ভাসা জীবন

বরের কাজের সুবাদে মাঝে মাঝে আমিও তার সফরসঙ্গী হই। কোন আনন্দভ্রমণের জন্য নয়, নতুন নতুন  অভিজ্ঞতা যেন নিজের ঝুলিতে ভরতে পারি — এ জন্য। এবারো তার সাথে গেলাম চর চন্দনি আর চর বিহারিতে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় অবস্থিত চর দুটি।

আকাশ-নদীজল

এই চরগুলোর জীবনযাপন না দেখলে, এই মানুষগুলোর সাথে কথা না বললে বুঝতে পারবেন না কতটা সংগ্রামী জীবন তাদের। বর্ষীয়ানদের সাথে কথা বলে জানলাম ওনাদের মধ্যে কেউ কেউ ১০/১২ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। নতুন জায়গায় বার বার শুরু করতে হয়েছে তাদের জীবনযুদ্ধ একদম শুরু থেকে।

ভাঙতে ভাঙতে গড়া

এই বছর বন্যায় তাদের আগের বাড়িঘরগুলো ভেঙে যাওয়ায় আরেকটা চরে তারা বাড়ি করেছে। বাচ্চাদের পড়াশোনা বন্ধ। স্কুলে যেতে পারছে না। কারণ স্কুলে যাওয়ার উপায় নেই, চারদিকে থইথই পানি। পানি নেমে গেলেও নৌকা ছাড়া স্কুলে যাওয়ার আর কোন উপায় নেই। তবুও বাচ্চাগুলো পড়াশোনা করার জন্য উদগ্রীব।

স্বপ্ন? — অপেক্ষমাণ।

তাদের সাথে কথা বললাম। তাদের আগ্রহ দেখে অবাক হয়ে যেতে হয়েছে। এত কিছুর পরেও তাদের চোখে সামনে এগিয়ে চলার স্বপ্ন। ঘরে ঘরে সোলার সিস্টেমে বৈদ্যূতিক আলো, পাখার ব্যবস্থা করেছে। প্রতিটি বাড়িই যেন একেকটা খামার। গরু, বাছুর, ছাগল, হাঁস, মুরগি পালন হচ্ছে।

কী ঘর বানাইমু আমি শূন্যের মাঝার…

এত প্রতিকূলতা, এত অভাব তবুও তাদের মুখে অনাবিল অকৃত্রিম হাসি। অতিথি এসেছে বলে তাদের আপ্যায়নের সে কি আন্তরিক প্রচেষ্টা! যা আপনি শহুরে সাজানো ড্রয়িং রুমে পাবেন না। তাদের আর্থিক অসুবিধা বিবেচনা করে আমরাও আন্তরিকতার সাথে তাদের আতিথেয়তা এড়িয়ে গেলাম।

সারি সারি মুখ

সব শেষে একজন বললেন, অন্তত তাদের টিউবওয়েলের পানি যেন খাই। এই লোভ আর সংবরন করলাম না। মানুষগুলোর জীবন-যাপন দেখলে আপনি অবশ্যই  নিজের অবস্থান বিবেচনা করে বলবেন, “আলহামদুলিল্লাহ”।

জল-থইথই জীবন

আমরা কত তাড়াতাড়ি মুষড়ে পড়ি কোনো বিপদে পড়লে। আর এরা শূন্য থেকে শুরু করার জন্য সদাপ্রস্তুত।  সরকারি-বেসরকারি অনুদান হয়তো তাদের কিছুটা সুবিধা দেয়, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। জীবন তো তাদের সেই অনিশচয়তার গোলকধাঁধায় চক্কর খেতেই থাকে।

জলে ভাসা জীবন

1 COMMENT

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here