পাঠক্রম থেকে তুলে নেয়া হলো অরুন্ধতী রায়ের বই

অরুন্ধতী রায় মাঝে মাঝেই খবরে পরিণত হন। তাঁর বিরুদ্ধে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সরকারি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এবারও একই ঘরানার ঘটনা ঘটেছে। নতুন খবর হলো : বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম থেকে তুলে নেয়া হয়েছে অরুন্ধতীর বই Walking with the Comrades। এ ঘটনা ঘটেছে ভারতের তামিল নাড়ুর মননমানিয়াম সুন্দরনর ইউনিভার্সিটিতে। তিরুনেলভেলির এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ২০১৭ সাল থেকে পাঠ্য ছিল বইটি। স্নাতকোত্তর পর্বের তৃতীয় সিমেস্টারে কমনওয়েলথ রাইটিং কোর্সে পড়ানো হত Walking with the Comrades। এ বইয়ের বিষয় ভারতে মাওবাদীদের আন্দোলন ও সশস্ত্র সংগ্রাম। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অরুন্ধতী বইটি লিখেছেন।

 

বইটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। তাদের দাবি, বইটিতে অরুন্ধতী রায় ‘‘জাতীয়তাবাদবিরোধী মাওবাদী’’দের উন্মুক্ত হত্যাকাণ্ড ও দাঙ্গাকে সমর্থন জানিয়েছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পাঠক্রম থেকে বইটি সরিয়ে নেয়ার জন্য তাগিদ দেন। দক্ষিণ তামিল নাড়ুর অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সম্পাদক জানান, ‘‘এটি অত্যন্ত অনুতাপের ব্যাপার যে, বিগত তিনটি বছর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাওবাদী ও নকশালী ধারণার প্রসার ঘটানো হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শিক্ষকরাও জাতীয়তাবাদবিরোধী বিষয় পড়িয়েছেন। শিক্ষার্থীরা মানসিক অনুতাপে ভুগেছে যে, এই বই দেশের বিরুদ্ধে ঘৃণা তৈরি করতে উৎসাহিত করেছে।’’ সংগঠনটির তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে হুমকিও দেয়া হয়। বই সরিয়ে না দিলে তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। তারা এই বলে সতর্ক করে দিয়েছে যে, পাঠক্রম থেকে বই তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে দেরি হলে তারা বিষয়টিকে ইউনিয়ন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে আনবে।

অরুন্ধতীর মতে, এই সময়ের সরকার সাহিত্যের প্রতি খুবই সংকীর্ণ, অপ্রশস্ত ও অনিরাপদ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে থেকে পাঠ্য হলেও সপ্তাহখানেক আগে তাঁরা জেনেছেন যে, অরুন্ধতী বইটিতে মাওবাদীদের মহিমান্বিত করেছেন। তাই তাঁরা কমিটি গঠন করে, কমিটির প্রস্তাব অনুসরণে বইটি পাঠক্রম থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, ‘‘আমরা সমস্যা দূর করতে চেয়েছি। অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিলেবাস প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আমরা অনেক ফোন পেয়েছি, এমনকি অভিযোগ পেয়েছি সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছ থেকে।’’ অরুন্ধতীর লেখার বদলে পাঠ্য করা হয়েছে বিখ্যাত ভারতীয় ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার, লেখক ও প্রকৃতিবিদ মাধভিয়া কৃষ্ণানের My Native Land : Essays on Nature

 

মাওবাদীরা সামগ্রিক বিষয়টিকে দেখেছেন ভিন্নমত দমনের প্রয়াস হিসেবে। ভারতে গত কয়েক বছর ধরেই পাঠ্যসূচির ওপর মতাদর্শিক বল প্রয়োগ নীতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। আন্না ইউনিভার্সিটির পাঠক্রম থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে তামিল নীতিশাস্ত্রীয় গ্রন্থ তিরুকুরাল। এর পরিবর্তে পাঠ্য করা হয়েছে শ্রীমদ্ভগবত গীতা। অথচ চিন্তা ও স্বভাবে দিক থেকে তিরুকুরালের বিষয়বস্তু ধর্মনিরপেক্ষ। ২০১১ সালে একই ছাত্রসংগঠনের চাপে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল এ.কে. রামানুজনের রামায়ণ বিষয়ক বই। তাই এমন প্রশ্নও উত্থাপিত হচ্ছে, ‘‘রাজনীতি যদি শিল্পকলা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও কারিকুলাম বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যায় তাহলে বহুস্বরিক সমাজের জন্য ভয়ংকর বিপদ বয়ে আনবে।’’ মাওবাদী নেতা ভেঙ্কটেশন বলেছেন যে, কারিকুলাম কী হবে তা নির্ধারণ করতে পারে কেবল সিলেবাস কমিটি, স্ট্যান্ডিং কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট।

এ ব্যাপারে চমৎকার জবাব দিয়েছেন অরুন্ধতী রায়। তিনি বলেন, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের হুমকি ও চাপে পাঠ্যসূচি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় Walking With the Comrades প্রত্যাহার করে নেয়ার সংবাদ শুনে আমি মন খারাপের বদলে খুশি হয়েছি। কারণ তিনি জানতেন না যে, বইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য ছিল। তিনি আনন্দিত এই ভেবে যে, গত কয়েক বছর বইটি পড়ানো হয়েছে। বইটি সিলেবাস থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তিনি বিন্দুমাত্র বিস্মিত বা আহত নন। তিনি বলেন, ‘‘সিলেবাসে বই স্থান পাওয়া বা না-পাওয়া নিয়ে লড়াই করা আমার দায়িত্ব নয়। এটা অন্যদের কাজ, তারা করবেন অথবা করবেন না।’’ তবে তিনি বর্তমান শাসনপর্বের সমালোচনাও করেছেন তিনি। অরুন্ধতীর মতে, এই সময়ের সরকার সাহিত্যের প্রতি খুবই সংকীর্ণ, অপ্রশস্ত ও অনিরাপদ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেছে।

 

তথ্যসূত্র : দ্যা হিন্দুহিন্দুস্তান টাইমস

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here