নাওমি শিহাব নাঈয়ের কবিতা

নাওমি শিহাব নাঈ — বাবা ফিলিস্তিনি,  মা আমেরিকান — জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫২ সনের ১২ মার্চ মিজৌরির সেইন্ট লুইসে। তিনি দেশের ভিতর, ও দেশের বাইরে প্রায়শই ঘুরে বেড়ান। ফলে তাঁর কবিতায় থাকে স্যান আন্টোনিও শহরের রাস্তায় ম্যাক্সিকান কিশোরী মেয়েটির পায়ের আওয়াজ, একই সঙ্গে ইজরাইল-ফিলিস্তিন সীমান্তে গুলির ধাতব ধ্বনি; আবার কখনো বায়জিদ বোস্তামির মাজারে ববকাট মাথার আকারে পানির উপর ভেসে থাকে মাজেজা কাছিম।  নাওমি শিহাব নাঈয়ের কাজের পরিধি ছড়ানো ছিটানো : লেখালেখির প্রায় সব মাধ্যমেই তাঁর ফসল আছে — যেমন আছে জনপ্রিয় শিশুতোষ বই, আছে নাটক, উপন্যাসও বাদ পড়ে নি, আর কবিতা তো রইলোই। সম্পাদনার কাজও করেছেন- তাঁর সম্পাদিত সীমানাডিঙানো কবিতা সংকলনের নাম দিস সেইম স্কাই — যেখানে ৬৮ দেশের কবিতা এক মলাটের ভিতর জায়গা করে নিয়েছে।

 

বাতেনী

ধরো যে তুমি একটি কচি চারার কিশলয়

একটা পাথরের নিচে রেখে এসেছো,

পরদিন তাকে খুঁজেই পাবে না;

মনে হতে পারে —

পাথর বুঝি এ-কে গিলে খেয়েছে!

 

ধরো যে তোমার প্রাণের ধন —

তার নাম জিভের নিচে রেখে দিয়েছো

আর নামটি বলো নি- নামটি জপো নি;

আরো দিন যেতে যেতে এ-নাম

অগোচরে রক্তের সঙ্গে মিশে যাবে।

 

আমাদের দীর্ঘশ্বাসও এমনই একটা ব্যাপার :

নিজের মধ্যে শুষে নেওয়া বাতাসের কণা

তোমার কথাদের নিচে

আপনমনে দীর্ঘশ্বাসে দানা বাঁধে।

 

কেউই তার ধাত্রীমাকে দেখে না-

যে তাকে দুধে বোধে তুষ্ট করে রাখে।

 

 

চট্টগ্রামের কাছিম মাজার

একচ্ছত্র ময়লা পানির উপরিভাগ বরাবর

নিরেট পিঠের ছাঁচ ভেসে ওঠে —

আর মনফকিরা মনগুলো তাঁর দিকে ছুঁড়ে দেয়

বনরুটির টুকরা।

বক্ষ দুরুদুরু — যদি কচ্ছপ বাবার নেকনজরে পড়ে

তার ছুঁড়ে দেয়া খাবার টুকরো তবেই সারা,

দিলের মকসুদ পূর্ণ হবে শতভাগ!

 

এই ক্লেদ ময়লার তীব্র ভ্যাপসা গন্ধে হাঁসফাঁস

করে উঠি; আমি বরং খাড়া বেয়ে উপরে উঠে যাই —

যেখানে বাঞ্ছাশিকারীরা লাল-নীল সুতার রৌশনে

গাছের ডাল ভরিয়ে তোলে।

 

কোন সুদূরের বাসনা আমারও অন্তঃপুর বুঝি

ঝিলিকে ছুঁয়ে যায়।

 

অদূরে রিকশার ভিড়, আরো ভিড় টুংটাং ঘন্টাধ্বনি।

 

আমার পাশের বন্ধুটি কেমন মনমরা হয়ে থাকে,

আশা বুঝি পূর্ণ হলো না — আমার মনের বাসনা —

ছুঁড়ে দেয়া রুটি তার অনির্দিষ্ট,  ভাসতে থাকে কাদাজল

পানির ওপর: রুটি তো ছুঁলো না দয়াল কাছিম।

 

আমি বলি, তারা খেয়েথুয়ে পেট পুরে আছে।

 

বন্ধুটি বলে, তা-ও ইনারা সবসময় আমারটা খায়!

 

আমি সহযাত্রীকে বলি, আমার রোমাঞ্চ লাগে —

তারা যে দোজখ থেকে আসে!

 

ওইদিন তার জন্মদিন ছিল।

আমরা সফেদ টেবিলের উপর গলদা চিংড়ির

নৈশভোজে মাতি।

 

এ-এমন এক ভূখণ্ড যেখানে প্রতিবছর গ্রামের পর গ্রাম

বানের তোড়ে ভাসে; তাতে কার কি-ই-বা আসে যায়,

অন্য দুনিয়ায় কারো টিকিটাও নড়ে না।

 

এতোক্ষণে শিথিল ওয়েটার কাঁচা পয়সার গরমে

কিছুটা বুঝি নড়ে-চড়ে ওঠে।

 

সে রাতে আমার মশারিতে দেখি একখানা ছিদ্র!

আর যায় কোথা, আমি সারারাত বেইজবলের পিচ করি।

তবুও দীর্ঘ রজনী তলিয়ে যাচ্ছিলাম স্বপ্নে — গলে যাচ্ছিলাম,

যদি ধরতে পারি কিছু দৃশ্যমান খাবার,

কিছু  সত্যিকার আহার!

 

আমি একটি যোগসূত্রে আকুল হাতড়াতে থাকি —

বলার জন্য কাতরাতে থাকি;

এখানে জল, জল, ওদিকে কোথায় স্থলভাগ, শুকনো মাটি!

আগের লেখাহুমায়ূন আহমেদ : যখন তিনি কবি
পরের লেখাশিস
বদরুজ্জামান আলমগীর
কবি, নাট্যকার, অনুবাদক। জন্মেছিলেন ভাটি অঞ্চল কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে। পড়াশোনা বাজিতপুরে, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বহুদিন দেশের বাইরে- যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় থাকেন। বাঙলাদেশে নাটকের দল- গল্প থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য; নাট্যপত্রের সম্পাদক। নানা পর্যায়ে আরও সম্পাদনা করেছেন- সমাজ ও রাজনীতি, দ্বিতীয়বার, সাংস্কৃতিক আন্দোলন, পূর্ণপথিক, মর্মের বাণী শুনি, অখণ্ডিত। প্যানসিলভেনিয়ায় কবিতার প্রতিষ্ঠান- সংবেদের বাগান-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রকাশিত বই : আখ্যান নাট্য: নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী ও একটি বাঘ আসে। কবিতা: পিছুটানে টলটলায়মান হাওয়াগুলির ভিতর। আখ্যান নাট্য: আবের পাঙখা লৈয়া। প্যারাবল: হৃদপেয়ারার সুবাস। কবিতা: নদীও পাশ ফেরে যদিবা হংসী বলো, দূরত্বের সুফিয়ানা। ভাষান্তরিত কবিতা: ঢেউগুলো যমজ বোন। ছিন্নগদ্য : সঙ্গে প্রাণের খেলা।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here