নাম তার উড়িষ্যা; ২০১১ সাল থেকে ওড়িশা। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা একই সঙ্গে উচ্চারিত হতো। পরবর্তী ইতিহাসে প্রবাহিত হয়েছে ভিন্ন ধারায়। ওড়িশার বর্তমান অবস্থান ভারতের স্বতন্ত্র রাজ্য হিসেবে। ধর্ম ও পুরাণ বিষয়ক সংস্কৃতি ও শিল্পকলার পীঠস্থান স্বরূপ ওড়িশার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। বিশ্ববিখ্যাত পুরির জগন্নাথ মন্দির, তাঁতশিল্প, পটচিত্র, হস্তশিল্প। ওড়িশার পটচিত্র ধারণ করে আছে রামায়ণ, মহাভারত, রাধা-কৃষ্ণ ও জগন্নাথ দেবের গল্প। বাংলা অঞ্চলের মতো ওড়িশাতেও ঘটা করে পালিত হয় দুর্গাপূজা। তবে ওড়িশার খ্যাতি গড়ে উঠেছে মূলত জগন্নাথ মন্দিরকে ঘিরেই।
জগন্নাথ
পটচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন জগন্নাথ। জগন্নাথ হলো জগতের নাথ, জগতের প্রতিপালক। বৃক্ষদেবতা হিসেবে জগন্নাথের পরিচিতি। ধারণা করা হয়, অদিবাসী শবররা গহিন অরণ্যে নীলমাধব নামে তাঁর পূজা করত। তাঁকে আাঁকা হয় মূলত কালো রঙের পটভূমিতে। তাঁর সঙ্গে থাকেন বলভদ্র ও সুভদ্রা। এক্ষেত্রে রঙ প্রস্তুত করার হয় কয়লা, চালের গুঁড়া ও তেঁতুল বীজের গুঁড়া দিয়ে।
দুর্গা-লক্ষ্মী-সরস্বতী-গণেশ
জগন্নাথের পাশাপাশি পটচিত্রে ঠাঁই পেয়েছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও গণেশ। ওড়িশায় পালিত হয় কালীপূজা, লক্ষ্মীপূজা। এই প্রভাবটি পড়েছে বাংলা অঞ্চলের মাধ্যমে। পুরি, কটক ও বালাসুরে দুর্গা ও কালীর প্রতিমা তৈরি করা হয়। একই সঙ্গে তাঁরা আছেন কাপড়ের পটে।
রাধা-কৃষ্ণ
রাধা ও কৃষ্ণকথার শেষ নেই ভারতবর্ষে। ওড়িশার ঐতিহ্যেও স্থান পেয়েছে কৃষ্ণকথা। এখানে আমরা পাচ্ছি, বংশীধারী কৃষ্ণ, গোপিনী আবৃত কৃষ্ণ, কালীয়দমনরত কৃষ্ণ। আর আছে রাধাকৃষ্ণের বিখ্যাত মিলনমূর্তি।
রামায়ণ ও মহাভারতের গল্প
রামায়ণ ও মহাভারতের গল্প নিয়ে ওড়িশায় তৈরি হয়েছে নানা রকম পটচিত্র। রাম-লক্ষ্মণ-সীতা পেরিয়ে যাচ্ছেন গঙ্গা, রামচন্দ্রের পায়ের স্পর্শ পেয়ে পাথর-রূপ থেকে মুক্তি পেয়েছে অহল্যা, মহাভারতের যুদ্ধ দেখতে হনুমানকে আহ্বান জানাচ্ছেন ভীম, নাচছেন শিব — রামায়ণ ও মহাভারতের প্রসঙ্গগুলো উঠে এসেছে পটচিত্রে।
ওড়িশার এসব পটচিত্র ও লৌকিক শিল্পকলা ভারতীয় উপমহাদেশের পুরাণনির্ভর শিল্পকলার অন্তঃসম্পর্ককে বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলার পটচিত্রের রূপ, রেখা, রঙ ও অবয়বের সঙ্গে সাদৃশ্যও দৃষ্টিগোচর হয়।