যখন ফুটিল কমল ।। কিস্তি : ৪

পল ক্লী

বায়োগ্রাফিক্যাল ফিকশন বা আত্মজৈবনিক কথাসাহিত্য — যখন ফুটিল কমল। লেখার পরিণতি কী দাঁড়াবে লেখক নিজেই তা ভালো বলতে পারবেন। জাহিদুর রহিম চমৎকার গদ্যে উপহার দিয়েছেন জীবন ও দর্শনের মৌলিক প্রশ্ন ও উত্তর।

 

আবার উড়ছি আমি, জল ছেড়ে, জলাভূমি ছেড়ে

এ-ডানা মোমের কল্প, এই হ্রদ প্রতিফলনের,

এই গাছ শুভবুদ্ধিজাত, এই দেহ দূর আকাশের

( উৎপল কুমার বসু)

 

একদিন এমন গ্রীষ্মের সন্ধ্যায়  মনে পড়বে ব্যাকুল সিক্ত এক বর্ষার কথা। ঝির ঝিরে বাতাস, ঠান্ডা হাওয়ায় চমকিত চারপাশ, জানালা খুলে দিলে কপালের দু পাশ হিম হয়ে যায়, গাছগুলো জুবু থুবু। কিছুক্ষণ হল ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে। আমাদের এই পুরাতন দুতলা বাড়িটি যেন রূপকথা। বাইরে থেকে দেখলে ভিজে যাওয়া বাড়ির দুটি ঘরে মোমবাতির সামান্য আলো। এক বিশাল জাম রঙের টেবিল। সেটার উপরে রাখার রুপোর পান বাটা আর পাশে কিছু বই। সমস্ত পৃথিবী ছড়িয়ে আছে এক নৈঃশব্দ্যময় আলস্যে। অবসরের গানের মতো এই বোবা আলস্য আমার মধ্যে তৈরি করছে এক গোপন চাওয়া। আমার বুকে যা জমে আছে বুদবুদ হয়ে সেসবের শান্ত নিঃশ্বাস অনুভব করছি ধীরে।

 

এক স্বকীয় আধ্যাত্মিক স্বর যা আমার পূর্বপুরুষ থেকে রক্তে বাহিত, আমি যার উত্তরাধিকার। সেই ঐতিহ্য আমাকে বলছে, ”যদি তুমি আসলেই কিছু পেতে চাও—চেষ্টা করো, মহাবিশ্বের সবকিছু সারাক্ষণ তোমার পক্ষে গোপনে তৎপর হয়।”

 

কিন্তু কী আমি চাই সে কি আমি জানি নিশ্চিত?  মানুষ কি জানে তারা কেন এসেছে পৃথিবীতে? তাঁদের মাঝে ঘুমন্ত সে আলাদিনের চেরাগে কোন শক্তিমান দৈত্য নিশিদিন ঘুমায়?  জানে  কী তার অন্তরের ডাক । মানুষ প্রায়ই আমাকে বলেন, “জীবনে আমার কী করা উচিত আমি জানি না।”

 

সবাই না হলেও কেউ কেউ জীবনযাপনের এক পর্যায়ে বুঝতে পারেন তিনি তার কাঙ্ক্ষিত জীবন যাপন করছেন না। সমস্যা তখন আরও গুরুতর আরেক সমস্যায় পতিত হয়। এটা মেনে নেয়া আরও কষ্টকর যখন আপনি জেনে যাবেন কী করতে আপনার ভালো লাগে বা দুনিয়ায় আপনি আসলে কোন কাজের জন্য ফিট, কিন্তু করতে পারছন না। কারণ যে মুহূর্তে আপনি বুঝলেন আপনার কী করা উচিত, তখন থেকে আপনার উচিত হবে, হয় অনেক কিছু ছেড়ে দেওয়া, নয়তো এটা বুঝে নিয়ে জীবন যাপন করা যে, বেঁচে থাকার অলৌকিক ব্যাপার আপনার জীবনে পুরোদমে জমা করছেন না বা সম্ভব নয়।

 

আলকেমিস্ট শেখায় সান্তিয়াগোকে যে, “হৃদয় জানে সব। কারণ ওটা এসেছে বিশ্ব-আত্মা থেকে, এবং একদিন ওটা ফিরে যাবে বিশ্ব-আত্মার কাছে।’’

 

কিন্তু হায় আমরা কী আমাদের হৃদয়কে বুঝতে পারি, শুনতে পারি তার কথা! যেখানে বেশিরভাগ মানুষ বুঝতে পারে না হৃদয়ের কথা, সেখানে স্বপ্নবান মানুষকেও তার স্বপ্নের পথে চলার আগে দিতে হয় পরীক্ষা। “স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগে, পথটিতে চলতে চলতে যা কিছু শেখা হয়েছে, ওসবের পরীক্ষা নেন বিশ্ব-আত্মা। এটা করা হয় না স্বপ্নটি মন্দ বলে, করা হয় যাতে আমরা স্বপ্ন ভালো করে বুঝে নিতে পারি, যাতে শেখাটা পাক্কা হয়ে ওঠে যখন আমরা বাস্তবায়নের দিকে যাই।ওটা এমন একটা পর্যায় যেখানে গিয়ে বেশিরভাগ মানুষ পিছিয়ে পড়ে, থেমে যায়—স্বপ্ন পূরণের আশা ত্যাগ করে।

হৃদয়ের এসব কথা বা স্বপ্নের এসব শুরু হয় কীভাবে। যেমন আমি লিখি। লিখতে আমার ভালো লাগে বলেই নিশ্চয় লিখি। কারণ এই লেখালেখি করে এই সমাজ আমাকে টাকা দিবে না, যেই টাকাকে সমাজ সাফল্যের মূল চাবি মনে করে। তাহলে কী করে সেটা হয়, কেমন করে তা আমার মাঝে আসে?

 

“একজন দোয়েল কবে গান গাইতে শুরু করেছিল? একজন উদবেড়াল কবে সাঁতার কাটতে শুরু করল? একজন মৌমাছি কবে কেমন করে চাক বাঁধতে শিখল?এসব প্রশ্নের উত্তর কি তারা দিতে পারবে? মনে পড়ে চেতনা জাগার পর থেকেই নিসর্গ আমাকে দারুণ মুগ্ধ করত। নির্সগের সৌন্দর্য আমি অনুভব করতে পারতাম, মন কেমন করত, মন আঁকুবাঁকু করত। সেই পলায়মান সৌন্দর্যকে আমি মন দিয়ে ধরে রাখতে চাইতাম। অপরিচিত অর্ধপরিচিত যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মুখ ও আকৃতি আমি বিস্ময়ের সঙ্গে নিরীক্ষণ করতাম। তাদের ঐ বাইরের খোলস, নড়াচড়ার ভঙ্গি দেখে দেখে ক্রমশ আভাস পেতাম তাদের জীবনের, রহস্যের। ক্রমশ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জন্ম, মৃত্যু, সময়, মহাকাশ নিয়ে নানা দার্শনিক চিন্তা মাথায় ঢুকল। এই সময় আমার মনে হত, আমি হয়ত চিত্রকর এবং ভাবুক। একসময় আর পাঁচটা ছেলের মতো লিবিডো আমার মধ্যে প্রবল হয়ে উঠল। হতে পারে, তারই তাড়নায় আমার কবিতায় মনোনিবেশ। [ অক্ষয় মালবেরি / মনীন্দ্র গুপ্ত]

 

মনীন্দ্র গুপ্ত এখানে কবিতা লেখার কথা বললেও শিল্প এবং মানুষের মনের ভাষা প্রকাশের সব মাধ্যমে মোটামুটি একইভাবে আসে। মানুষ আলোড়িত হয় বাইরের ঘটনা দ্বারা কিন্তু তাঁর বোধ জন্মায় নিজের ভেতর থেকেই। ঠিক যেমন, ‘দুঃখ বাইরে থেকে আসে, আর মন খারাপটা নিজের মধ্যে জন্মায়’ (বুদ্ধদেব বসু)

 

কিন্তু ভাঙনের এই কালে কেবল শব্দ দিয়ে সমস্ত বিষয়ের মোকাবেলা সম্ভব নয়। জাঁক দেরিদার মতে ‘সমস্ত প্রশ্নই কিন্তু প্রশ্ন নয়। একটি প্রশ্নকে প্রশ্ন হয়ে উঠতে হয়।’ মানুষ আসলে লড়াই করে নৈঃশব্দ্যের সাথে, যেই নৈঃশব্দ্যের আঁখরে ঘুমিয়ে থাকে তার অস্তিত্বের সব গোপন সূত্র। অর্থাৎ কথাটি তাঁর আপনার সাথেই।

 

কথাটি নিজের সাথেই — বেলা হয়ে গেলে না দেখা ভুবন আঁখি মেলে। ক্লান্ত অবসর তুমি বোঝো-না-বোঝো পিছু ফিরে চাও । এগিয়ে আসবে দিন, তোমার ঐশ্বর্য হারাবার কাল, ব্যাথা অফুরান কালচোরা স্রোত। ভাঙা পাঁচিলে উঁকি দেওয়া অবাক কিনারে শূন্যতার তির্যক চুম্বন। বিষাদের এলোমেলো ঘর ভরে থাকে পাড় ছোঁয়া শব্দের সৌকর্যে, অমরত্বের বিভ্রম পিপাসায় । শব্দের ঝাপটায় চেয়ে দেখি অবয়ব — কথাটি আপনার সাথেই ।

 

কিন্তু কথাটি কী? ভাষা কী? ভাষা কী আসে দেহ থেকে? ভাষার দেহতত্ত্ব প্রসঙ্গে লালন ফকিরের কথা চলে আসে। তার অনেক গান থেকে একাধিক ইঙ্গিত জড়ো করে বলা যাবে যে, দেহ হচ্ছে ভাষার আবাসভূমি বা ভাষার চাষবাসের ক্ষেত্র। এক অর্থে ‘যেখানে দেহ নেই, সেখানে ভাষাও নেই’। ভাষা হতে পারে একটি জনপদের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার সমষ্টিগত স্মৃতির সঞ্চয়ক্ষেত্র।

 

বস্তু বা বস্তু জগতের ভারে ভারাক্রান্ত থাকে ভাষা। এই ধারণাটি এসেছে মার্কস ও এঙ্গেলস এর দ্য জার্মান আইডিওলজি থেকে। ভাষার আছে ব্যবহারিক মূল্য ও বিনিময় মূল্য। ভাষা যে কেনাবেচা করা যায় এটাও তো আধুনিকতা থেকে আমরা জানলাম। আমরা সাধারণভাবে যখন মায়ের সাথে বা বন্ধুর সাথে কথা বলি, তখন ভাষার থাকে ব্যবহারিক মূল্য ও সত্তাগত বিনিময় মূল্য। আর একজন আইনজীবী বা চিকিৎসক যখন ফিসের বিনিময়ে আমার সঙ্গে কথা বলে, তখন ওই আইনজীবীর ভাষা পুঁজিবাদী রাজনৈতিক অর্থনীতির নিরিখে একই সঙ্গে ব্যবহারিক মূল্য ও বিনিময় মূল্য অর্জন করে।

 

সামাজিক শূন্যতায় ভাষা উৎপাদিত হয় এবং ভাষার মধ্যে রয়েছে মতাদর্শিকতা। মতাদর্শিক সূত্র ধরে আসে মতাদর্শিক আধিপত্য। বদ্ধ সমাজ আর মুক্ত সমাজে ভাষার প্রকাশ আর ব্যবহার আলাদা রকম। মতাদর্শিক আধিপত্য সম্পর্কে আন্তোনিও গ্রামসি যে তত্ত্ব হাজির করেন সেটারই নাম ‘হেজিমনি’। কিন্তু হেজিমনি যাকে বলা হচ্ছে, তা আসলে সম্মতি আদায়ের মাধ্যমে জারি রাখা মতাদর্শিক আধিপত্য যা সর্বসাধারণের সম্মতিক্রমেই প্রতিষ্ঠিত ও বিস্তৃত হয়। হেজিমনি মাথায় বন্দুকের নল ঠেকিয়ে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে না, বরঞ্চ মাথায় হাত বুলিয়ে মাথার ভেতরেই ঢুকিয়ে দেয় এমন সব ধ্যান ধারণা, যাদেরকে সত্য, স্বাভাবিক, সুন্দর, সভ্য বলে মনে হয়। স্বেচ্ছায় আমরা ওইসব ধারণাকে গ্রহণ করে বসে থাকি, যেমন ফর্সা হওয়া মানেই সুন্দর হওয়া। হেজিমনি ছাড়া পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদ, পুরুষতন্ত্রসহ সমস্ত আধিপত্যবাদী উৎপাদন-সম্পর্ক ও ক্ষমতা-সম্পর্ক টিকে থাকত না, বা হেজিমনি ছাড়া তারা বিস্তৃত ও পুনরুৎপাদিত হতে পারে না।

 

গ্রামসির মতে পৃথিবীর এমন কোনো নিরঙ্কুশ মতাদর্শিক আধিপত্য নেই, যা সকলকেই একই সঙ্গে একইভাবে বশ মানাতে পারে। হেজিমনিও ধ্রুব ও সম্পূর্ণ নয়, হেজিমনি নিজেই তার প্রতিপক্ষকে তৈরি করে এবং উসকে দেয়। গ্রামসি ‘পাল্টা হেজিমনি’র কথাও বলেছেন। গ্রামসির মতে, শাসক শ্রেণির লিখিত ইতিহাসের নৈঃশব্দ্যগুলো পাঠ করার ভেতর দিয়েই ওই নৈঃশব্দ্যকে ভাষায় রূপান্তরিত করার কাজটা শ্রমিক শ্রেণির পাল্টা হেজিমনি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

.

ফরাসি কবি স্তেফান মালার্মে সম্পর্কে জানতে পারি, যিনি কবিতার ভাষাকে সঙ্গীতের ভাষায় উন্নীত করতে চেয়ে নানা রকম অস্বস্তিতে ভুগে ভুগে বিশুদ্ধ ভাষার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। যদিও অনেকে বলেন বিশুদ্ধ ভাষা বলে কিছু নাই। মানুষ নিজেই ভাষা তৈরি করে, ভাষা বদলায়, ভাষাকে ধ্বংস করে। আমরা যেমন ভাষাকে ব্যবহার করি, ভাষাও তেমনি আমাদের ব্যবহার করে। মানুষ ও ভাষা কোনোটাই চূড়ান্ত দৃষ্টান্তে সার্বভৌম নয়।

 

আজ যাকে আমরা ‘ডায়ালেকটিক’ বলি, তার শুরু প্লেটো দিয়ে নয় বা গ্রিসে নয়, মিশরে। যা কিছু নতুন তা গ্রিকরাই আবিষ্কার করেছে বা সবকিছুর শুরু হয়েছে ওই গ্রিসেই, এ ধরনের ধারণা বিভিন্নভাবে এখনো সারা দুনিয়ায় জারি রয়েছে বা প্রচার করা হচ্ছে। পুরাণতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ মার্টিন বার্নাল ধরিয়ে দেন যে, সবকিছুর শুরু গ্রিস নয় বা জ্ঞানের একচেটিয়া আধিপত্যের দাবিদার কেবল ইউরোপই নয়।

 

হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াডঅডেসি’র বহু শতাব্দী আগেই মেসোপটেমিয়ায় গিলগামেশ নামের এক মহাকাব্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এমনকি এও দেখানো সম্ভব, গ্রিস এক সময় পূর্বের অংশ হিসাবেই বিবেচিত হতো এবং পরে গ্রিসকে রীতিমতো ছিনতাই করে ইউরোপের বা পশ্চিমের অংশ করা হয়েছে। আর এই ছিনতাইয়ের ইতিহাস পশ্চিমা উপনিবেশবাদের মানচিত্র তৈরি করার ইতিহাসের সঙ্গেই সম্পর্কিত।

কিন্তু ইতিহাসে বেঁচে থাকে কী? ভাষা, সাহিত্য, মিথ, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক। স্মৃতিকথা, প্রবন্ধ, তত্ত্ব, ডায়েরি, গান, সিনেমা, জীবনী ইত্যাদি কি বেঁচে থাকে? স্বয়ং ইতিহাস বাঁচে কি? আমরা দেখতে পাই সব ছাপিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আইডিওলজির প্রশ্ন। কারণ ওই যে জাঁক দেরিদার ‘আইডিওলজিক্যাল আন্ডারপিনিংস’। আইডিয়াজ বা আইডিওলজিই বেচে থাকে, বাকি সব মরে যায়, ধবংস হয়, বিলীন হয়। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের দ্য ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী‘ এর কথা ‘a man can be destroyed but can’t be defeated’। মানুষটাকে হত্যা করে শেষ করে দেয়া যায়, কিন্তু তার চেতনা, আদর্শ বেঁচে থাকে।

 

collective memory ও collective consciousness হয়ে, ইতিহাসে, সাহিত্যে, ডিসকোর্সে। আইডিয়া এবং আইডিওলজি কখনো মরে না, সাময়িক পিছনে সরে যায়, কিন্তু আবার ফিরে ফিরে আসে। নতুন ব্যাখ্যা, নতুন আবেদন, নতুন স্পিরিট নিয়ে। তাই আইডিওলজি নিয়ে দুনিয়ায় এতো কথা এতো দ্বন্দ্ব।

 

এই আইডিওলজিই নির্ধারণ করে কে? আইডিওলজি নির্ধারণ করে ‘ব্যালান্স অব পাওয়ার’। কারণ আইডিওলজি আর পাওয়ার একে অপরের আত্মা দেহ। কারণ, আমি আপনি, প্রত্যেকেই, কনশাসলি, বা সাবকিনশাসলি, এক্টিভলি বা প্যাসিভলি, কোন না কোন আইডিওলজি ধারণ করছি। পৃথিবীর যেখানেই যাই। তাই আপনাকে পরাজিত করতে হলে, ম্যানিপুলেট করতে হলে, ডমিনেট করতে হলে আপনার আইডিওলজি কে পরাজিত করতে হবে, দমন করতে হবে। ইট ইজ আইডিয়াজ দ্যাট রুল দ্য ওয়ার্ল্ড, নাথিং মোর!

 

মানুষের ইতিহাস কিংবা সভ্যতার ইতিহাস মূলত এই আইডিওলজির সংঘাতের ইতিহাস। এই আইডিওলজিকে এবং কালেক্টিভ মেমরি ও কালেক্টিভ কনশাসনেসকে ইহুদিরা ধারণ করছে শতাব্দীর পর শতাব্দী, কয়েক মিলেনিয়া।

 

কিন্তু এর বিপরীত কথাও আছে। যেমন হাইডেগার বলেছে্ন, ‘মেমোরি অব আদার্স’ তো দূরের কথা, ‘মেমোরি অব ইন্ডিভিজুয়াল’ — বলেই কিছু হয় না। মেমোরি নিজেই একটা স্ট্রাকচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ। আর হাইডেগারের মতে ল্যাঙ্গুয়েজ ভীষণ অ্যালোন, সে ফর্ম বা কনটেন্ট, কোথাও আসতে চায় না। ভাষা এতোটাই একা যে, সে কেবল নিজের সাথেই কথা বলে। নিভৃতলোকে। মেমরি বা কালেক্টিভ মেমরি ল্যাঙ্গুয়েজের ভীষণ লঘু একটা এক্সপ্রেসিভ রিয়ালিটি মাত্র। ফ্রয়েড বা গুস্তাভ ইয়ুংকে হাইডেগার ধর্তব্যের মধ্যে নেন না। এমনকি শোনা যায় ইয়ুং তাঁর মাতৃভাষা জর্মনেই হাইডেগারের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ বিরাজ ও সময় পড়তেও পারেননি বা পড়ে বোঝেন নি।

 

তাহলে দাঁড়াল কী? এই বৃষ্টি ভেজা সন্ধায় কথাটি আপনার সাথেই। সাড়া পৃথিবী যেন উবু হয়ে আমাকে কিছু গল্প বলতে চায়। বলতে চায় ‘একটা সুন্দর সাদা দ্বীপ আছে। তার গা’য় কালো কালো ছোপ। আমি তার ওপর ব’সে চারপাশের থৈ থৈ দেখি। একটা বৈঠা আছে ছোটো কদম কাঠের। বৈঠা বেয়ে একটু একটু এদিকে সেদিকে বেড়ানো যায়। চারপাশে ভেসে যায় কতো কতো দ্বীপ আরও। দ্বীপগুলি বাড়ি খায় না। আলগোছে একে অপরের পাশ কাটায়। ব’সে ব’সে চারপাশে দেখি আর বহুবিচিত্র শুনি…

 

হঠাৎ স্বপ্নটি ভাঙার পর দেখি তেপান্তরে লম্বা খাড়া সরু এক আঙুলের ডগায় ব’সে আছি একা পা ঝুলিয়ে আর দশপাশে অনর্গল খালি তর্জনী উড়ছে ঝোড়ো বাতাসে। ব’সে ব’সে তর্জনীয় ঝড় দেখি। দেখিতেছি। অনেক দূরে প্রায় দিগন্তে এক বিশাল ঢালাই লোহার কড়াই বসানো। তার মধ্যে চুয়ে এসে জমা হ’চ্ছে সমস্ত আকাশ থেকে অবিরল একধারা নীল। আকাশটাকে দেখাচ্ছে এক পশলা ফ্যাকাসে হাড়ের মতো এখন [দ্বীপ / শামীম কবীর ]

 

পড়ুন ।। কিস্তি : ৩ ।। ক্লিক করুন নিচের লিংকে

যখন ফুটিল কমল ।। কিস্তি : ৩

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here