ডিকলোনাইজিং দ্যা মাইন্ড ।। কিস্তি : ৭

আফ্রিকান থিয়েটারের ভাষা

 

এটুকু শেষ হলে ওয়াংগেচি বলে, ‘‘আহ, আমার সবচেয়ে পছন্দের ছিল মোয়ামবোকো।’’ আর কিগুন্দা উত্তর দেয়, ‘‘ওহ, সেসব দিনে আমরা হাটু থেকে আমাদের পায়জামার ডান ও বাম দিক ছিড়ে ফেলতাম। সেগুলোই ছিল আমাদের বেলবটম যা দিয়ে আমরা মোয়ামবোকো নাচতাম”। এখন গিটার ও অ্যাকর্ডিয়ন বাদকরা বাজানো শুরু করে। মোয়ামবোকো নৃত্যশিল্পীরা প্রবেশ করে। কিগুন্দা ও ওয়াংগেচি মোয়ামবোকো নাচে নেতৃত্ব দেয়। তেজের সাথে গিটার, ঘণ্টা ও অ্যাকর্ডিয়ন বাজানো হয় আর এর সাথে নৃত্যশিল্পীরা যোগ করে আরেক অলংকার।

মোয়ামবোকো নাচ একেবারেই কঠিন নয়,
মাত্র দুই পা ফেলা ও ঘুরে যাওয়া।
আমি তোমাকে এত সুন্দরভাবে ঘোরাবো যে,
তোমার মা যখন মাঠে থাকে,
আর তোমার বাবা ব্যস্ত ভাল্লুক ভক্ষণে,
তখন তুমি বলে দিবে তোমার বাবা কোথায় তার থলে লুকিয়ে রেখেছে।
তুমি আমার খেয়াল রাখো
আমি রাখবো তোমার
হাসতে হাসতে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
লিমুরু আমার বাড়িঘর
এখানে আমি এমনিই এসেছি
ওয়াংগেচি, আমার তরুণী নারী
তুমি যেমন তেমনই হও
তোমার এখনকার ভঙ্গিতে
প্রয়োজন নেই কোন বাড়তি অলঙ্কারের।
তুমি আমার খেয়াল রাখো
আমি রাখবো তোমার
হাসতে হাসতে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
এটি তোমার নিজের এলাকা
পাকা কলার জন্যে বিখ্যাত
তুমি না কাঁদা পর্যন্ত আমি গেয়ে যাবো
অথবা কাঁদতে না পেরে
তুমি জেগে উঠবে এত বেশি অনুভূতিতে যে
নিজের জীবনটাই নিয়ে নিবে।
তুমি আমার খেয়াল রাখো
আমি রাখবো তোমার
হাসতে হাসতে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
আমি তোমার জন্যে মদ তৈরি করেছিলাম
আর এখন তুমি আমারই বিরুদ্ধে গিয়েছো!
অসহায় মানুষ প্রায়ই তার হিতকারীর বিরুদ্ধে চলে যায়
আমাদের গাথোনির সন্তান
অনাকাঙ্ক্ষিত কিন্তু সুপ্রসন্ন ভাগ্য তার, পেয়েছিল মাঠে ওয়াচুকে
আর তাই খেয়ে নিয়েছিল।
তুমি আমার খেয়াল রাখো
আমি রাখবো তোমার
হাসতে হাসতে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
তুমি কি বেশি পান করে ফেলেছো
নাকি তুমি মদ্যপ
আমি কিছুই বলবো না,
ওহ ওয়াংগেচি, আমার ছোট্ট ফল,
যতদিন না সাত বছর শেষ হয়…

মানুষের কণ্ঠ এবং গিটার, অ্যাকর্ডিয়ন ও অন্যান্য যন্ত্রের আওয়াজ হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। নৃত্যশিল্পীরা মঞ্চ থেকে চলে যায়। নাচের মুদ্রায় থাকা অবস্থাতেই কিগুন্দা ও ওয়াংগেচি স্থির হয়ে থাকে। কিগুন্দা এমনভাবে মাথা নাড়াতে থাকে যেন সে এখনো অতীত স্মৃতির ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে তারা আলাদা হয়!

কিগুন্দা:

ওহ, সেই সাতটা বছরও শেষ হতে পারে নি
যখন আমরা শুরু করেছিলাম
নতুন কণ্ঠে নতুন গান,
গান ও কণ্ঠ দাবি করেছিল
আমাদের মাতৃভূমি কেনিয়ার মুক্তি।

এসময় মুক্তির গান গাইতে গাইতে একটি মিছিল মঞ্চে প্রবেশ করে।

মুক্তি
মুক্তি
আমাদের মাতৃভূমি কেনিয়ার জন্যে মুক্তি
সীমাহীন আনন্দের এ ভূমি
সবুজ মাঠ আর বনে ভরা এ ভূমি
আফ্রিকান মানুষেরই এক দেশ এই কেনিয়া।
আমরা জেলে যেতে দ্বিধা করি না
আমরা নির্বাসনে যেতে দ্বিধা করি না
আমরা কখনোই থামবো না
আমাদের ভূমির দাবি ও আলোড়ন থেকে
আফ্রিকান মানুষের দেশ কেনিয়ার জন্যে…

গায়করা মঞ্চ ত্যাগ করলে ওয়াংগেচি আবার অতীত স্মৃতি মনে করতে থাকে।

ওয়াংগেচি:
আমি সবসময়ই স্মরণ করেছি
ওলোনগুরুয়েনির নারীদের,
যাদেরকে তাদের নাকুরুর ভূমি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল
আর পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল কালো পাথুরে ভূমি ইয়াত্তায়।
তারা লিমুরুর পাশ দিয়েই গিয়েছিল
কতগুলো লরির পেছনে কাঁটাতার ঘেরা খাঁচায় বন্দি।
কিন্তু এখনো তারা গান গায়
সে গানের শব্দ অন্যের হৃদয়ে বর্শার মতো আঘাত হানে।
গানগুলো সত্যিই ছিল দুঃখের,
তবে সেই নারীরা ছিল একেবারেই নির্ভয়
কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল আর তারা ছিল নিশ্চিত যে
একদিন এই ভূমি আমাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবেই।

গান গাইতে গাইতে নারী গায়িকাদের একটি দল মঞ্চে প্রবেশ করে।

সত্যতার সাথে প্রার্থনা করো
তার কাছে মিনতি করো সত্যের সাথে
তিনি হলেন আমাদের ভেতরে থাকা একই এনগাই ।
একজন নারী মারা গেল
নির্যাতনের পর
কারণ সে তার নীতিবর্জনে রাজি হয় নি।
সত্যতার সাথে প্রার্থনা করো
তার কাছে মিনতি করো সত্যের সাথে
তিনি হলেন আমাদের ভেতরে থাকা একই এনগাই।
আমি সেখানে পেয়েছিলাম মহান ভালোবাসা
নারী ও শিশুদের ভেতর
একটি শিম পড়েছিল মাটিতে
আর তা তাদের ভেতর ভাগ করে দেয়া হয়েছিল।
সত্যতার সাথে প্রার্থনা করো
তার কাছে মিনতি করো সত্যের সাথে
তিনি হলেন আমাদের ভেতরে থাকা একই এনগাই।
গায়করা মঞ্চ ত্যাগ করে।

 

কিগুন্দা:

এটা ছিল সেই সময়
যখন কেনিয়া জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
আমাদের দেশপ্রেমিকরা,
লিমুরু ও সারা দেশের
নারী ও পুরুষেরা,
হয়েছিল গ্রেপ্তার!
জরুরি আইন ছিল খুবই দমনমূলক।
আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
আমাদের জেল হয়েছিল,
আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বন্দি শিবিরে,
মারের চোটে আমাদের কেউ কেউ পঙ্গু হয়েছিল।
বাকিদের করা হয়েছিল খোজা।
বোতল দিয়ে আমাদের নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল।
আমাদের চোখের সামনেই আমাদের স্ত্রী-কন্যাদের ধর্ষণ করা হয়েছিল!
[এসব দুর্বিষহ স্মৃতি মনে করে কিগুন্দা কিছুক্ষণের জনে স্তব্ধ হয়ে যায়]
কিন্তু কিমাথি ও মাথেঙ্গের নেতৃত্বে
মাও মাওয়ের মাধ্যমে,
আর জনতার সংগঠিত ঐক্যের মাধ্যমে
আমরা হারিয়েছিলাম সাদাদের
আর এসেছিল স্বাধীনতা…
আমাদের পতাকাকে আমরা তুলে ধরেছিলাম উঁচুতে।

মুক্তির গান গাইতে গাইতে ও নাচতে নাচতে বিজয়োল্লাসরত নারী, পুরুষ ও শিশুদের একটি মিছিল মঞ্চে প্রবেশ করে।

এটি তিন রঙা পতাকা
একে উঁচুতে তুলে ধরো
সবুজ আমাদের পৃথিবীর জন্যে
একে উঁচুতে তুলে ধরো
লাল আমাদের রক্তের জন্যে
একে উঁচুতে তুলে ধরো
কালো আফ্রিকার জন্যে
একে উঁচুতে তুলে ধরো
[তারা একটি নতুন গান শুরু করে ও নাচতে থাকে তার সাথে]
একক সঙ্গীত পরিবেশনকারী:
আমাদের দেশপ্রেমিকরা আমার কাছে মহান…
কোথা থেকে এসেছিল ঐ সাদারা?

দলীয়:
কোথা থেকে এসেছিল ঐ সাদারা?
কোথা থেকে এসেছিল ঐ সাদারা?
তারা এসেছিল মুরাঙ্গা হয়ে,
আর তারা এক রাত কাটিয়েছিল ওয়াইইয়াকির ঘরে,
যদি তুমি জানতে চাও এই বিদেশিরা ভালো কিছু নয়,
নিজেকে জিজ্ঞেস করো:
ওয়াইইয়াকির কবর আজ কোথায়?
আমাদের দেশপ্রেমিকদের রক্ষা করতেই হবে
যেন তাদের ভাগ্য ওয়াইইয়াকির মতো না হয়।
একক সঙ্গীত পরিবেশনকারী:
কিমাথির দেশপ্রেমিকরা সাহসী
কোথা থেকে এসেছিল ঐ সাদারা?
[গান গাইতে গাইতে তারা মঞ্চ থেকে নেমে যায়]

কিগুন্দা:
সময় কিভাবে ছুটে চলে!
কতগুলো বছর গিয়েছে কেটে
আমরা স্বাধীনতা পাওয়ার পর?
দশ এবং আরও বেশি,
অনেকগুলো বছর!
আর এখন আমার দিকে তাকিয়ে দেখো!
[কিগুন্দা নিজের দিকে দেখে, তার সম্পদের নামফলকের দিকে নির্দেশ করে তার কাছে যায়]
শুকনো সমতলে দেড় একর জমি।
আমাদের পারিবারিক জমি দিয়ে দেয়া হয়েছে হোমগার্ডদের।
আজ আমি আহাম কিওই ওয়া কানোরুর মাঠে
এক সাধারণ কামলা।
আমার ট্রাউজার এখন ন্যাকড়া।
তোমার দিকে দেখো।
দেখো মুক্তির বছরগুলোর দারিদ্রতা
তোমার সাথে কী করেছে!
দারিদ্রতা তোমার আগের উজ্জ্বলতা টেনে নামিয়েছে।
দারিদ্রতা তোমার চেহারায় গর্ত তৈরি করেছে,
তোমার পায়ের পাতায় এখন অগণিত ফাটল,
তোমার স্তন ঝুলে পড়েছে,
তাদের ধরে রাখার কিছু নেই।
এখন তুমি একটি পুরনো ঝুড়ির ন্যায়
যার কোন আকার নেই।

ওয়াংগেচি:
তুমি বললেই হলো না,
তুমি কি সেই প্রবাদ শোন নি যে
ফল ধারণের সাথে সাথে ফুলের রঙে পরিবর্তন আসে!
[কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে]
অতীত নিয়ে এত ভাবার অভ্যাসটা থামাও
ভুলে যাওয়াই ভালো এমন বিষয়ে তুমি নিজের ঘুম হারাম করো।
আজ আর আগামী নিয়ে ভাবো।
তোমার বাড়ি নিয়ে ভাবো।
দারিদ্রতা স্থায়ী নয়!
দারিদ্রতা হলো জীবনকে ক্ষুরধার বানানোর তলোয়ারস্বরূপ…
[বিরতি, যেন মাথা কোন নতুন চিন্তা এসেছে]
আমাকে বলো:
কিওই ও তার পরিবার
আজ আমাদের কাছে কী চায়?১০

এ থেকে দেখা যায় যে সিকোয়েন্সটি কিওই-এর সফরের কারণ খুঁজতে গিয়ে শুরু হয়, এর মাঝে পঞ্চাশের দশকের সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাস ও নিজেদের পতাকা লাভের ঘটনা ঘুরে এসে আবারও কিওই-এর সফরের কারণ অনুসন্ধানে এসে শেষ হয়। এভাবেই এনগাহিকা এনদিনিদা নাটকে নাচ, গান ও মূকাভিনয়ের মাধ্যমে অতীত ও ভবিষ্যতকে তৈরি করা হয়েছিল।

এক্ষেত্রে মূকাভিনয় হলো ধরনগুলোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর খুব ভালো একটি উদাহরণ হলো কিগুন্দার চার্চে বিয়ের অভিপ্রায়ের সিকোয়েন্স। সিকোয়েন্সটি শুরু হয় চার্চের মাধ্যমে কিগুন্দা ও ওয়াংগেচির বিয়ে পুনর্বহালের জন্যে ব্যাংকের কাছে তাদের জমি বন্ধক রেখে বিয়ের স্যুট ও গাউন কেনার টাকা পাওয়ার ঘটনার প্রশংসার মাধ্যমে। তারা চার্চের মাধ্যমে তাদের বিয়ে পুনর্বহাল করতে যায় কারণ কিওই এর কাছে আফ্রিকান রীতিতে হওয়া তাদের বিয়ে অবৈধ ও পাপ। কিগুন্দা ও ওয়াংগেচি তাদের নতুন বিয়ের সবগুলো প্রথা ও বিষয় মূকাভিনয়, গান ও নাচের মাধ্যমে অনুশীলন করে। আর এই অনুশীলন শেষ হয় একটি কাল্পনিক পাঁচতলাবিশিষ্ট কেক কাটার মধ্য দিয়ে।

মূকাভিনয়ের এই সিকোয়েন্সটি উদযাপনকে ফুটিয়ে তোলার একটি ভালো উপায় ছিল। তবে এই উদযাপনে কোন মহিমা বা সম্মান ছিল না। খ্রিস্টীয় উদপযাপন এই ভূমিতে বাইরে থেকে আরোপিত এবং এখানকার শেকড়ের সাথে এর উপযুক্ত কোন সংযোগ নেই। এটি পরিণত হয় উদযাপনের জাতীয় ঐতিহ্যগুলোর একটি কৌতুকে। একে তুলনা করা যায় এনগুরাইরো সিকোয়েন্সের সাথে যেখানে গিতিরো অপেরার মাধ্যমে জাতীয় অনুষ্ঠানকে পুনর্নির্মাণ করা হয়।

যখন গান, নাচ ও উদযাপনের বিষয়গুলো আসে তখন কৃষকরা এসবের যথার্থতার প্রশ্নে খুব সচেতন থাকতেন কারণ তারা সবাই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাদের অবস্থান ছিল খুবই গুরুগম্ভীর।
তারা ভাষার ব্যাপারেও সচেতন ছিলেন, যা থিয়েটারের ধরনের আরেকটি উপাদান ছিল। বয়স ও পেশার ভিত্তিতে বিভিন্ন চরিত্রকে সঠিক ভাষা প্রদান করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তারা সচেতন ছিলেন। তারা হয়তো বলতেন, ‘‘একজন বৃদ্ধ এভাবে কথা বলে না। যদি তাকে সম্মানিত দেখাতে হয় তাহলে তার এ ধরনের বা ঐ ধরনের প্রবাদ ব্যবহার করা উচিত।” ভাষা ও ভাষা ব্যবহার এবং শব্দ ও শব্দবন্ধের দ্যোতনার বিষয়গুলো নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হতো।

কিন্তু যে কোন ধরনকেই আলাদা জোর, চরিত্র ও গঠন দেয় তার বিষয়। নাটকের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি সত্য। কবিতা বা কল্পকাহিনীর চেয়ে নাটক জীবনচর্চার কাছাকাছি বিষয়। জীবন হলো বিপরীত বিষয়াদির বিরোধ ও ঐক্য থেকে উদ্ভূত গতিশীলতা। পুরুষ ও নারী বিপরীত বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি নাচে অংশ নেয় ও ঐক্যবদ্ধভাবে আরেকটি মানুষের জন্ম দেয় যে কিনা তাদের উভয়ের থেকে আলাদা। কিন্তু ঐ নতুন মানুষের ভেতর এমন কিছু বৈশিষ্ট্যও থেকে যায় যা দেখা মাত্রই বলে দেয়া যায় অমুক হলো অমুক আর তমুকের সন্তান বা তাদের থেকে উৎপাদিত। ঐ নতুন জীবনের বেড়ে ওঠা নির্ভর করে কিছু কোষের জন্ম আর মৃত্যুর উপর। মানুষ আর প্রকৃতির ভেতরের বিরোধ থেকেই সামাজিক জীবনের উদ্ভব ঘটেছে। কিন্তু মানুষ নিজেও প্রকৃতির অংশ। কার্ল মার্ক্স বলেছেন, ‘‘প্রকৃতির নিজস্ব শক্তি হিসেবে সে নিজের বিরোধিতা করে। বাহু, পা, মাথা ও হাতের মতো তার শরীরের প্রাকৃতিক শক্তিগুলো ব্যবহার করে সে তার নিজের ইচ্ছানুযায়ী প্রকৃতির উৎপাদনকে কাজে লাগাতে চায়। এভাবে বহিঃস্থ প্রকৃতির সাথে এই ব্যবহার ও ঐ প্রকৃতির পরিবর্তনের মাধ্যমে ঐ একই সময়ে সে তার নিজের প্রকৃতিও পরিবর্তিত করে।”১১ গতিশীলতা তৈরির জন্যে বিপরীত শক্তিসমূহের ভেতর সংগ্রামের এই নীতি নাটকের ভেতরেও থাকে। নাটকে দ্বন্দ্বের মাধ্যমেই শান্ত ধরনের ছন্দবদ্ধতা থেকে হাস্যরসাত্মক বা বিয়োগান্তকতার দিকে ঐ দ্বন্দ্ব গতিশীল হয়। ছন্দগুলোর সমাপ্তি হয় বিভিন্ন স্তরে, অস্থায়ী বিশ্রামের ন্যায়, যা অবশ্যই আরেকটি গতিশীলতার শুরু হিসেবে কাজ করে। নাটক ও থিয়েটারের ধরন তৈরি করতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিটি বিপরীতমুখী চিন্তা ও সামাজিক শক্তির ভেতর ভারসাম্য আনয়ন জরুরি।

ইতিহাস তথা তাদের নিজেদের ইতিহাসের উপস্থাপনের বিষয়ে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় ছিল অংশগ্রহণকারীদের অবস্থান। এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের যে কোন ভুল অবস্থান বা উপস্থাপনগুলো তারা খুব দ্রুত ধরে ফেলতেন ও বিতর্ক করতেন। এক্ষেত্রে ঐ ভুল শত্রুপক্ষের অবস্থান ও উপস্থাপন নিয়ে হলেও। জঙ্গলে বসে বন্দুক তৈরি কিংবা ব্রিটিশ শত্রুদের থেকে অস্ত্র চুরি কিংবা শত্রু এলাকার ভেতর দিয়ে গুলি বহন করে নিয়ে যাওয়া কিংবা সংগ্রামের বিভিন কৌশল, যে কোন বিষয়কেই তারা তাদের নিজস্ব ও প্রকৃত অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করতেন। ভূমি ও মুক্তি, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছিল তাদের সংগ্রামের লক্ষ্য। আর তারা চাইতেন না এনগাহিক এনদিনদা সেই লক্ষ্যকে বিকৃত করুক। পঞ্চাশের দশকে যিনি মাও মাও গেরিলাদের জন্যে বন্দুক বানাতেন সেই একই ব্যক্তি কামিরিথুর নাটকের জন্যে নকল বন্দুক তৈরি করে দিয়েছিলেন। শ্রমিকরা বহুজাতিক কারখানাগুলোর নিপীড়ন ও জীবনের কঠিন বাস্তবতাগুলোকে একেবারে উন্মুক্ত করার জন্যে আগ্রহী ছিলেন। আমার মনে আছে কাছাকাছি থাকা বাটা জুতোর কারখানার একটি বিভাগের শ্রমিকরা নিজেরা বসে আলোচনা করেছিলেন কিভাবে তাদের সাথে হওয়া নিপীড়নের মাত্রা ও ধরনগুলো বুঝাবেন তাদের যারা কখনো কারখানায় কাজ করেন নি। তিন হাজার শ্রমিকের মাসিক বেতনের সমমূল্যের জুতো তাদের একদিনের ভেতর তৈরি করতে হতো। অর্থাৎ তারা তাদের জন্যে মাত্র একদিন কাজ করতেন। মাসের বাকি ২৯ দিন তারা কার জন্যে কাজ করতেন? তারা হিসাব করেছিলেন তারা যা উৎপাদন করেন তার কতটুকু অংশ যন্ত্রাদির মেরামত ও প্রারম্ভিক পুঁজি শোধ করতে খরচ হয়। আর যেহেতু কো¤পানিটি ১৯৩৮ সালে থেকে এখানে আছে, তাই তার প্রারম্ভিক বিনিয়োগ অনেক আগেই উঠে আসার কথা। তাহলে বাকি অংশ কোথায় যায়? যায় কানাডায় থাকা মালিকদের কাছে। সুদূর কানাডা বা নাইরোবির অফিসে বসে পুরো ব্যবস্থাকে পরিচালনা করা উদ্ভাবনী দক্ষতা, অর্থাৎ মস্তিষ্কের কাজের তাহলে কী হবে? তাদের ব্যাপারেই বা কী হবে যারা টাকা দিয়ে শেয়ার কিনে পুরো ব্যবস্থাটিকে চলমান রেখেছেন? ওহ, আচ্ছা! শ্রমিকরা কখনো ঐ মস্তিষ্কের শক্তি দেখেন নি বা দেখেন নি কখনো শেয়ারহোল্ডারদের হাতে জুতো তৈরির হাতুড়ি। যদি বিদেশিদের মস্তিষ্কের শক্তি ও শেয়ারহোল্ডারদের টাকা ছাড়াই তারা জঙ্গলের বন্ধুর বাস্তবতায় বন্দুক ও গুলির কারখানা তৈরি করতে পারেন, তারা কি পারেন না একটি জুতোর কারখানা তৈরি ও পরিচালনা করতে? এই আলোচনা চলতে থাকে। তাদের কাছে এটি ¯পষ্ট ছিল যে তাদের শ্রম থেকেই স¤পদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু সে শ্রম প্রতি পাক্ষিকে বা মাসে কী পায়? যেন এক মুঠো ভিক্ষা! আরও বড় বিষয় হলো ঐ কারখানাগুলোতে মানুষ মারাও যায়। ‘‘চলো গুনি…এত এবং এত…!” আমার মনে আছে সাক্ষ্য হিসেবে একজন তার শার্ট খুলে ফেলেছিলেন। তার সারা শরীর ছিল পোড়া। ‘‘গ্যাস”, সে বলেছিল। ‘‘আর এর বিনিময়ে আমি কী পাই? পদচ্যুতি। লে-অফ। একবারও দেখা হয় না চাকরিতে আমার বিশ্বস্ততাটুকু।”

 

সূত্র ও টীকা

৮. কিকুয়ু প্রবাদ, যার মূল অর্থ কিকুয়ু ঈশ্বর তার সনÍানদের খেয়াল রাখেন । এ বিষয়ে জানা যাবে এখানে, https://kidydidy.wordpress.com/2015/01/29/kikuyu-legend-the-legend-of-wacu/ — অনুবাদক

৯. আফ্রিকান বহুশ্বরবাদী ধর্মের প্রধান দেবতা — অনুবাদক

১০. নগুগি ও নগুগি, আই উইল ম্যারি হোয়েন আই ওয়ান্ট, নাইরোবি ও লন্ডন, ১৯৮২, পৃ. ২১-৯ — লেখক

১১. কার্ল মার্ক্স, ক্যাপিটাল, ভলিউম ১, অধ্যায় ৭, পৃ. ১৭৭ — লেখক

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here