পুরনো দিনের শীত

ছবি : হরেন দাস

রাজনারায়ণ বসু উনিশ শতকের প্রতিভাবনদের একজন। বক্তৃতায় তিনি ছিলেন তীক্ষ্ন, ক্ষুরধার, রসিক। তাঁর সেকাল আর একাল বইয়ে উনিশ শতকের সমাজ ও সংস্কৃতির চমৎকার রসালো বিরবণ পাওয়া যায়। জলবায়ু ও প্রকৃতির পরিবর্তন নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ পাওয়া যাবে এই টুকরো লেখায়। অংশটি গৃহীত হয়েছে সেকাল আর একাল বই থেকে।

 

এ কালের লোকের বলবীর্য্য ক্ষয়ের ও অল্পায়ুর প্রথম কারণ, দেশের নৈসর্গির প্রকৃতির পরিবর্ত্তন বলিতে হইবে। এইরূপ পরিবর্ত্তনের এক প্রধান প্রমাণ এই যে, পূর্ব্বে শীতকালে যেরূপ শীত হইত, এক্ষণে সেরূপ হয় না। পূর্ব্বে সামান্য গৃহস্থকেও শীতকালের অধিকাংশ দিন আহারের পর গরম জলে আঁচাইতে হইত। কিন্তু এক্ষণে কেত সেরূপ করে না। ষাইট সোত্তর বৎসর বয়ঃক্রমের নবদ্বীপবাসী ব্যক্তিরা বলিতেন যে, তাঁহারা বাল্যকালে ঘরের চালের উপর খড়ি গুঁড়ার ন্যায় এক পদার্থ পড়িতে দেখিতেন, তাহাকে তাঁহারা পালা বলিতেন। সেই পদার্থকে ইংরাজীতে Frost বলে, তাহা অত্যন্ত শীতের চিহ্ন। পূর্ব্বে লোকে কলিকাতা হইতে ত্রিবেণী, শান্তিপুর প্রভৃতি গ্রামে জল বায়ু পরিবর্ত্তন জন্য যাইত কিন্তু এক্ষণে ঐ সকল স্থান মেলেরিয়া অর্থাৎ দূষিত বাষ্প নিবন্ধন অস্বাস্থ্যকর হইয়া উঠিয়াছে। উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে প্রয়াগ, কানপুর প্রভৃতি স্থান পূর্ব্বে যেরূপ স্বাস্থ্যকর ছিল এক্ষণে সেরূপ দৃষ্ট হয় না। এই সকল স্থানে পূর্ব্বে শীতকালে যেরূপ মীথ হইত এক্ষণে সেরূপ হয় না। নানা কারণে বোধ হইতেছে যে ভারতবর্ষে একটি মহা নৈসর্গিক পরিবর্ত্তন চলিতেছে। এরূপ পরিবর্ত্তন লোকের শারীরিক বল বীয্যের প্রতি স্বীয় প্রভাব প্রদর্শন করিবে ইহার আশ্চর্য্য কি?

 

* লেখার শিরোনাম সহজিয়ার দেয়া।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here