ঋতুভেদে পথ্য

ছবি : হরেন দাস

১৮৯৪ সালে আচার প্রবন্ধ বইয়ে ছয়ঋতু ও খাবারের সম্পর্ক উপস্থাপন করেছেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন উনিশ শতকের গুরুত্বপূর্ণ সমাজবিশ্লেষক। ঔপনিবেশিক শাসনের সমালোচনায় তিনি এক মাইল ফলক। ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ব্রিটিশ সংস্কৃতির তুলনামূলক আলোচনা প্রায়শই হাজির থাকত তাঁর লেখায়।

 

ঋতুভেদে পথ্যাপথ্যের নির্দ্দেশ আরও বিস্তৃত করা হইয়াছে। বস্তুতঃ আয়ুর্ব্বেদীয় বা চিকিৎসাশাস্ত্রকেই মুখ্য অবলম্বন করিয়া পথ্যাপথ্য বিধিগুলির সৃষ্টি।

 

১/২ : হেমন্তে এবং শিশিরে বায়ু কুপিত হয়। (তাহার প্রশমানার্থ) মিষ্ট, অম্ল এবং লবণ-রস ব্যবহার্য্য। ময়দা, মাংস, ইক্ষুরসের এবং ক্ষীরের বিকৃতি এবং নবান্নও উপকারী। রৌদ্রসন্তাপ এবং অগ্নিসন্তাপ লাগাইবে, শৌচকালে উষ্ণজল ব্যবহার করিবে, পাদত্রাণ দ্বারা পাদদ্বয় আবৃত রাখিবে, এবং উষ্ণ ও কোমলস্পর্শ শয্যায় শয়ন করিবে।

 

৩ : বসন্তে শ্লেষ্মা কুপিত, অগ্নিমান্দ্য হয়। এই ঋতুতে অগ্ন্যুদ্দীপক ক্রিয়া করিবে, ব্যায়াম চর্চ্চা করিবে, বিশেষ করিয়া গাত্র পরিস্কার রাখিবে, নস্য গ্রহণ করিবে; পুরাতন যব, গোধূম, মধু এবং জাঙ্গল মাংস সুপথ্য। নিবানিদ্রা পরিহার করিবে।

 

৪ : গ্রীষ্মকালে পিত্ত কুপিত হয়। এ সময়ে স্বাদু, শীতল, দ্রব, স্নিগ্ধ, শর্করা সংযুক্ত পানীয় এবং দুগ্ধের সহিত যুক্ত শাল্যন্ন ভোজন করিলে গ্রীষ্মদোষ লাঘব হয়। মধ্যাহ্নকালে বায়ুসঞ্চার স্থলে নিদ্রা যাইবে। লবণ, অম্ল, কটু এবং উষ্ণ দ্রব্য ভক্ষণ এবং ব্যায়াম ন্যূন করিবে।

 

৫ : বর্ষাকালে ভূবাষ্পোদ্গম এবং মেঘনিস্যন্দ উভয় কারণ উপস্থিত হইয়া জলের দোষ জন্মে এবং জঠরাগ্নির তেজ মন্দীভূত হয়। তাহাতে বায়ু, পিত্ত, কফ, দোষত্রয়েরই প্রকোপ জন্মে। এই সময়ে অগ্নিসম্বর্দ্ধক লঘুপাক দ্রব্য, যথা পুরাতন চাউল, জাঙ্গল মাংসের ক্বাথ, মুগের দাইল, এবং পরিষ্কার কূপোদক ব্যবহার করিবে, অধিক পরিশ্রম, দিবানিদ্রা এবং রৌদ্রসেবা ত্যাগ করিবে।

 

৬ : শরৎকালে পিত্ত কুপিত হয়। এ সময়ে মিষ্ট, তিক্ত, কষায় রস উপকারী। ইক্ষু শাল্যন্ন, মুদ্গ এবং সরোবর জল পথ্য। তুষার, ক্ষার, অতিতৃপ্তি, দধি, তৈল, বসা, আতপ, তীক্ষ্ণাম্ল, দিবানিদ্রা এবং পশ্চিমাবায়ু বর্জ্জনীয়।

 

* শিরোনাম সহজিয়ার দেয়া।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here