শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক — বায়োগ্রাফিক্যাল ফিকশন বা আত্মজৈবনিক কথাসাহিত্য — যখন ফুটিল কমল। লেখার পরিণতি কী দাঁড়াবে লেখক নিজেই তা ভালো বলতে পারবেন। জাহিদুর রহিম চমৎকার গদ্যে উপহার দিয়েছেন জীবন ও দর্শনের মৌলিক প্রশ্ন ও উত্তর।
তিন
চোখে যে গড়াবে জল, সে-রকম সাহসিক নই, সেই চোখ যা এখন বিস্তীর্ণ আকাশ খুঁজে দেখে: নক্ষত্রেরা আছে কি না মৃতপ্রায় দিকের সন্ধানে; আরেকটু হেঁটে গেলে ভোর হবে, প্রথম প্রত্যূষা; জনৈক মৃতের ছবি দেয়ালে আয়নায় রাখা হবে। মধ্য রাত পার হলে দুইটি বছর, মানে কাল দুই দিকে চ’লে যাচ্ছে, যাচ্ছে আমাদের প্রেম যেন; পিঁপড়ের মতন পায়ে দুঃখ বাসা বাঁধছে হৃদয়ে।
হেঁটে যাচ্ছি অন্ধকার, অন্ধকার পথের দু’পাশে যে সব শ্মশান আছে শুভ্রতায় ভুলে যাচ্ছি তা-ও; এখন বিকেল, আর সামান্য প্রভেদ মেনে নিলে অন্ধকার মাঝামাঝি দীর্ঘশ্বাসটুকু যা গিয়েছে তার থেকে রাত্রিটিকে খুলে নিয়ে এসে দেখেছি যে, এই মাত্র কব্জির নিকটে রক্ত নাচে; অবশেষে এইটুকু বিশ্বাস জমাই ইহকালে; সে-সময় জানো তুমি, যদি না অসত্য ব’লে থাকো।
ভূমেন্দ্র গুহ
পৃথিবীতে সব মানুষই নির্বান্ধব, মানুষের কোন বন্ধু হয় না। শিবরাম লিখেছিলেন, ‘মানুষের বন্ধু হয় ছোটবেলায়। বড় বেলায় হয় এনিমি অথবা নন এনিমি থাকে। এই নন এনিমি গুলোকে মানুষ বন্ধু বলে ভুল করে।’ স্কুলে যাদের সাথে পাশাপাশি বসতাম, যাদের সাথে অনেক সময় কেটেছে জীবনের, তারা কি আমার বন্ধু ছিল? এখন বড় বেলায় তাদের সাথে অনেকদিন পরে রাস্তায় হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে প্রথম ধাক্কায় মনে হয় – ‘এর চেয়ে আপন আর কেউ বুঝি নেই আমার।’ কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তাঁদের বক্তব্যের বিষয়হীনতা আর নতমুখী চাহুনি আমাকে অবাক করে, যেমন করতো এদের শৈশবের অকালপক্ব আচরণ।
আড্ডা আমার ভালোই লাগতো বরাবর, কিন্তু এসব ছেলেরা আড্ডা বুঝতো না। বেশিরভাগের কাছে ক্লাসের বাইরে বই পড়া ছিল আঁতলামি। যাদের ভুবন জুড়ে ছিল বয়ঃসন্ধিকালীন নারী মোহ, যারা হুমায়ুন আজাদের মতো দর্প আর গর্বের সাথে ‘দৃষ্টি সীমায় আসা কোন মেয়েকেই এরা ছাড়ত না।’ এদের চিন্তার গণ্ডি ছিল ক্ষুদ্র, এদের আলাপ ছিল অশ্লীল এবং রসিকতা স্থূল। হিন্দি সিনেমা, ভিডিও গেমস, ব্যান্ডের গান আর রেস্লিং-ক্রিকেটের বাইরে যে বড় একটা জীবন আছে — এদের বেশিরভাগই হয়ত এখনো বোঝে না।
আমার আকাডেমিক শিক্ষকদের কাছে খুব কমই শিখেছি জীবনে, হয়ত শিক্ষার চেয়ে স্নেহ পেয়েছি বেশি। পাঠ্য বইয়ের বাইরে জগতে জানা আর দেখার যে সীমাহীন জগত, সেই জগতের রাস্তা আমাদের কোন শিক্ষকের হয়ত জানা ছিল না। ক্লাসমেটদের অনেকে এমন ভাব করতো যে, প্রত্যেকে জীবনের সব কিছু বুঝে ফেলেছে। শৈশবের যে স্বর্গীয় প্রভা-আভা থাকে, এদের জীবনে তাও ছিল না, এঁদের শৈশব ফুরিয়ে গিয়েছিল দ্রুত। এরা ক্লাস রুমে বসে থাকতো নির্লজ্জ মেধাহীন চোখে, যেভাবে কুমিরের বাচ্চা শীতের দিনে রোদ লাগায় শরীরে।
এসব মানুষ কী করে আমার বন্ধু হবে, যাদের চোখে আগুন নেই, মুখে বুদ্ধিদীপ্ত উৎসরণ নেই! অথচ এরা ছিল সেয়ানা যারা দুনিয়ার অনেক কিছু শর্ট কাট পথ চিনতো।
এখনও এদের দিকে তাকালে দেখি একটা নির্বোধ চাহুনি, উৎসাহহীন চোখ, আর সারাক্ষণ টাকা কামানোর নোংরা ধান্দা। অনেক সময় এদের দেখে রাগে ফেটে পড়েছি নিজের ভিতর, কিন্তু শান্ত থেকেছি। স্কুল-কলেজ থেকে পাস করার পরে দুই একজন নতুন করে ঘনিষ্ঠ হবার ভাণ করেছে, হয়ত কোন স্বার্থেই, আমি পাত্তা দেইনি, ভেতর থেকে কোন আগ্রহ পাইনি আসলে। তারা আমাকে নাক উঁচু, অহংকারী আরও অনেক কিছু বলে বলে তাঁদের সন্ধ্যার সময় কাটাতো।
স্কুলে পড়া সেই বালক বা লোকগুলোর সাথে আমার মেলামেশা একদিন একদম বন্ধ হয়ে গেলো। এখন বুঝি আমি তাদের আসলে তীব্র অপছন্দই করেছি। তাঁদের মিথ্যে মানুষ মনে হতো। আর সবচেয়ে দুঃখজনক আর মর্মান্তিক — ‘হয়ত আমার প্রাণের কোন বন্ধু ছিল না’ এবং হয়তো তারাও একইভাবে আমাকে অপছন্দ করেছে।
এর কারণ একটাই হতে পারে আমার শৈশব আমাকে ছেড়ে যায়নি, যখন আমার বন্ধুরা যৌবনে ঢুকেছেন (আর এখনো গেছে কিনা এও নিশ্চিত নই)। শিক্ষাজীবনের প্রতি পর্যায় পার হয়ে আমি পায়ের ধুলোর মতো ঝেড়ে ফেলেছি আমার ‘একাডেমিক অতীত’। সেই অতীতে আমার সকল ক্লাস মেটও ঝরে পড়েছে, মনে রেখে দিয়েছি তাঁদের যাঁদের কাছে অন্তত একটা সহৃদয় আচরণ, একটা মমতা মাখা কথা অন্তত শুনেছি।
ছেলেবেলার খেলাধুলার দিনগুলোতে আমি ছিলাম সবচেয়ে সুখী আর সুস্থ। এখনও খেলাধুলা আমি ভালোবাসি, অন্তত ক্রিকেট। যখন বড় হচ্ছিলাম, আমি আমার ভেতরের আমির সাথে কোন কিছুই মিলাতে পারতাম না। কোন ন্যায় না, কোন আদর্শ না, বইয়ের শব্দ আর অক্ষরগুলো মিথ্যা কঙ্কালের মত আমার চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকত। আমি ভাবতাম এই অসুস্থতা আমার কৈশোরের দোষ, আরও বড় হলে আমি হয়ত সবার মতো সুস্থ হয়ে যাবো,কিন্তু হইনি। বরং আমি এই অসুস্থতার সাথে মানিয়ে নেয়া শিখলাম।
আমি শিখলাম কি করে নিজেকে সহ্য করে নিয়ে চলতে হয়। আরও শিখলাম কি করে এই বীভৎস, মিথ্যা আর নিষ্ঠুর পৃথিবীতে না মরেও পালিয়ে থাকা যায়। পালানোর দরকারে আমি স্বপ্ন দেখা শিখলাম, আমার কল্পনাকে আমি সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে শিখলাম। আসলে আমি আমার শৈশবেই আটকে রইলাম। আমি কল্যাণ আর সুন্দরের স্বপ্নে ডুবে থাকতাম। এসব তুচ্ছাতিতুচ্ছ সুখ-স্বপ্ন যে কী মধুর, কী শোভাময় আর কী আনন্দদায়ক ছিল, সেটা প্রতিটি স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবার পরে কান্না আর অনুশোচনার মাধ্যমে বুঝতাম। ফিরে আসতো নিজের প্রতি অভিশাপ আর এক নিঃসঙ্গতা বোধ।
তবু আমি বাঁচতে চাইতাম, আবার স্বপ্ন গড়ে তুলতাম। একটু আশা আর অনেক ভালোবাসা নিয়ে শুরু হতো স্বপ্নের চলন। মনে হত অকারণেই, সব খারাপ সব জঘন্যতা শেষ হবে একদিন। জীবনের প্রতি অকারণেই একটা মোহ তৈরি করে দিত এসব স্বপ্ন, দুকূলব্যাপী ছড়ানো এই কল্পনার জগতের কিছুই হয়তো বাস্তবে ছিল না, কিন্তু এই সব স্বপ্ন দেখার মুহূর্তে আমার হৃদয়ে যে দুর্লভ অপার্থিব প্রেমের উদয় হয়েছে, বাস্তব জীবনেও এমন হয়েছে কিনা নিশ্চিত নই। বিশ্বাস করুন এই বাস্তবতা বিবর্জিত স্বপ্ন দেখাই আমার প্রথম প্রেম এবং হয়তো শেষ প্রেমও। এই প্রেম আজ অবধি আমায় বাঁচিয়ে রাখল। কেবল স্বপ্নই বন্ধু হয়ে রইল আজীবন।
কারো বন্ধুত্বের ডাকে কি আমি আজ সারা দিতে পারি আমার শৈশবের মতো? যখন দেখি চারপাশের মধ্যে শোরগোল, আমি শুনি লোকে বলছে , ‘এই তো হচ্ছে সাফল্য, শেষ পর্যন্ত এই হচ্ছে সত্যিকার জীবনের সাথে সাক্ষাৎ।’ সত্যিকার জীবনের মুখ আমি খুঁজতে যেয়ে শিউরে উঠি। এই কী জীবন, সত্যিকার জীবন! কাদের দেখি এই জীবনের আয়নায়! কীভাবে দেখি?
দেখি জৈবিক তাড়নাক্রান্ত বিকারগ্রস্থ অবসন্ন কিছু লোক টাকার কণ্ঠলগ্ন হয়ে দিনরাত টাকার মুখে চুমু খাচ্ছে। রোগের জীবাণুর মতো এদের শরীরের ভেতর হতে আসছে রুগ্ন একঘেয়ে অশ্লীল গান। সেই গানে একটিই কথা, ‘আমি টাকাকে চাই, দয়া করে জিজ্ঞেস করোনা কেউ কেন চাই, বলনা কত চাই।’
কী তীব্র বিষাক্ত তৃষ্ণার মতো এই সুর। ভরে যাওয়া ডাস্টবিনের মতো এদের মন এলোমেলো, ভাঙা মদের বোতলের মতো কামনার কাচ এদের মন জুড়ে। দূর থেকে নির্নিমেষ চোখে এদের দিকে তাকালে দেখি যেন নিভে যাওয়া একটা সিগারেট টুকরো, যাকে পায়ে পিষে ফেলা হয়েছে, দেখি যন্ত্রণা আক্রান্ত চিন্তার বাষ্প ঠাণ্ডা মদের মতো নেশায় অবশ করছে এদের চাহুনি। এদের ঝিম ঝিম দম বন্ধ করা কষ্টের কথা ভাবলে আমার নিজেরই দম বন্ধ হয়ে যায়।
এরা কী পেয়েছে সত্যিকার জীবন? এই জীবন তাঁরা চেয়েছিল? বাসনার দৃষ্টি দিয়ে মোড়ানো অভিজ্ঞতার এই সব মানুষগুলো, যাঁদের নিজের কোন বোধ নেই, এরা কখনই আমার বন্ধু ছিল না, হবেও না। বন্ধুতো তারাই, ‘প্রয়োজনে যাঁদের সাড়া পাওয়া যায়’।
কিন্তু আমার চারপাশে হেঁটে বেড়ানো এই সব মানুষের মতো প্রাণীগুলো, এরা আদতে পশুর চেয়ে খারাপ, কেন সেটার উত্তর একটু পরে দিব, সবুর করুন। এদের গায়ে স্বার্থের কেমন টক টক বদ গন্ধ, এদের দৃষ্টি চিন্তাহীন আর এদের শরীরের ঘাম শরীরের উত্তাপে শুকিয়ে যায় ফের। এই হলো এদের জীবন, এখনকার বেশিরভাগের জীবন।
এই জীবনের দিকে তাকালে একদিকে আমি লজ্জায় ম্রিয়মাণ হয়ে যাই, অপরদিকে আমার ভেতরে এক দুর্বোধ্য রাগ ভীষণ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। মনে হয় সারাদিন মদ খাই আর গান গাই। যখন মদ ফুরিয়ে যাবে, তখন সেই শুন্য বোতল চারপাশের বোধহীন অর্থ পূজারিদের মাথায় সেটা ভাঙবো। তখন নিশ্চয় আপনারা আমাকে সভ্যতা, মানবিকতা ও আইনের কথা বলবেন। কারা আপনারা? এই সত্যিকারের জীবন দেখা লোকজন? কোন আইনের কথা বলেন আপনারা?
পৃথিবীতে চলে জংগুলে আইন, বন্য নিয়ম। আর মানুষ নিজেকে সান্ত্বনা দেয় সভ্যতা, প্রগতি, বিজ্ঞান এসব কতগুলো অর্থহীন কথা বলে। মানুষ ভাবে তারা অন্য পশুদের মতো না। তারা বনের বাইরে থাকে, জন্তুদের মতো ন্যাংটা হয়ে ঘোরে না। শরীর আবৃত করে দামি পোশাক দিয়ে। কিন্তু এই আপনারাই দেখুন আমেরিকা-ব্রিটেন মিলে যখন ইরাক আক্রমণ করলো, দুনিয়ার সবাই জানতেন এটা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, ‘তেল চুরির জন্য যুদ্ধ।’ কত মিছিল, কত প্রতিবাদ হলো। কিন্তু ফল হল কিছু? কারণ মার্কিনিদের গতরে শক্তি বেশি। তারা যেই দেশকে ইচ্ছে পাট খেতে বা মরুভূমিতে চিত করে পেরে ফেলবে। কেউ কিছুই করতে পারবে না।
সব দেশে, সব এলাকায়, সবখানে এই বনের আইন চলে। কতগুলি মূর্তি, ছবি আর কবিতা করে, শিল্প-শিল্প-খেলা করে কোন কোন দেশ আমাদের প্রগতি আর সভ্যতার বয়ান করে। হেহ হেহ হেহ। বা এই সেদিন আফগানের কুন্দুজে মাদ্রাসায় হাফেজ বাচ্চাদের সনদপ্রদান অনুষ্ঠানে যে শতাধিক হাফেজ বাচ্চা মারা গেলো বিনা কারণে। আর আপনারা দুনিয়ার মিডিয়া স্রেফ চেপে গেলেন। যেন এই খবর, আপনাদের মিডিয়ায় কোন পর্ণ নায়িকার ব্রেস্ট ক্যান্সার বা কলাগাছ ধর্ষণের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ।
এরপরে আপনার খুঁজবেন এদের মধ্যে তালেবান কারা? আচ্ছা কী তালেবান? কারা তারা? তাঁরা কোন দেশে বোমা মারতে গেছে, তাদের দেশে কারা আসলো, কারা বোমা ফেললো? যারা বোমা মারল তাদের দেশ কোথায়? এখানে সেই সব পশ্চিমা দেশগুলো কী করছে? — এই প্রশ্ন আপনারা কেউ তুললেন না। যেই পশ্চিমের লোকজন মানবতাকে ইরাক আর সিরিয়ার মরুভুমিতে উপর্যুপরি ধর্ষণ করেছে, বস্তুত গণধর্ষণ, তারা যদি বিবেক সেজে মানবতার দোহাই দিতে আসে, বিশ্বাস করুন তার মুখে পেশাব করে দিব, আমার এক বোতল মদ খাওয়া পেশাব।
তাকে দৌঁড়ে গিয়ে কলার ধরে চড় মারতে মারতে একটা ঘরে আটকাবো। তার গা থেকে দামি কোট প্যান্ট খুলে ফেলবো, কান ধরে টানতে থাকব জোরে, একটাই কান ধরবো যেন সারা ঘরে সেই অবস্থায় তাকে ঘুরানো যায়।
আমি জানি, সত্যিকার জীবন দেখা মানবতার মুখোশ আঁটা ভণ্ড লোকজন যারা অবিরাম ধর্ষণ করছে সব কিছু, সব জড় ও জীবকে, তারা আসবে আস্ত্র হাতে। তারা দলবদ্ধ হয়ে আমাকে মারবে। আমার হাত ভেঙে দিবে, মুখ থেতলে দিবে। আমাকে ছেচড়িয়ে রাস্তায় নিয়ে একজন জঙ্গি সন্ত্রাসী বলে পরিচয় করাবে। আমাকে ঘোড়ার চাবুক দিয়ে পিটিয়ে চামড়া ছিঁড়ে ফেলবে। একসময় অন্ধকার কবরের পাশে জ্বলতে থাকা মোমবাতির মতো আমার দৃষ্টি অস্পষ্ট হয়ে যাবে।
সর্বশক্তি দিয়ে আমি তখনো বলতে থাকবো, “এই রাক্ষস, আমার ভাঙা চোয়াল আর ছিঁড়ে যাওয়া এই কাপড়ের দিকে তাকা। আমার চোখের দিকে দেখ। তোদের চাকরি, আয় উন্নতি, সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, শিল্পকলা, বিজ্ঞান, মানবিকতা সব কিছু মিথ্যা, নকল, মুখোশ আঁটা। তোরা প্রতি মুহূর্তে মানবতাকে ধর্ষণ করিস। ”
রশির ফাঁস গলায় লাগিয়ে দুই দিক থেকে টানবে জানোয়াররা, সভ্য পশ্চিমের মানবতার মা-বাপরা। তীব্র ব্যথায় ভেঙে পড়বে আমার শরীর। আমার মুখের থুথু ফেনা হয়ে রক্তের সাথে গড়াতে থাকবে। লোকজন তখন অবাক হয়ে দেখবে আমার ঠোঁট এর কোণে হাসি। কারণ অনেক দিন পরে ঠিক তখন আমার বন্ধুকে দেখবো।
শৈশবের কুড়িয়ে পাওয়া সেই স্বপ্নকে দেখবো, রাশান এজেন্ট মারিয়া জাখারভার মতো দেখতে একটা মেয়ে। কী যে সাহসী, যেন জ্বলছে। পরনে যুদ্ধের পোশাক। হাসিহীন তার মুখে একটা মায়া লেগে আছে। ভালো করে লক্ষ্য করলাম, তার গম্ভীর মুখ। লম্বা ছিপছিপে শরীরে এমন এক দৃঢ়তা, তার সৌন্দর্যের মাঝেও কেমন এক নিষ্ঠুরতা, তবু সে আমার বন্ধু, আমার প্রথম প্রেম। আমি দেখলাম সে আমাকে এই উন্মত্ত দস্যুদের হাত হতে ছিনিয়ে নিয়ে এক শুভ্র বিছানায় শুইয়ে দিল।
ঘর ভরা সুগন্ধ, যেন হাজার বাগানের ফুল শত বছরের বসন্তের যৌবনকে ধরে রেখেছে এখানে। জানালার কাচে আমি আমার মুখটা দেখতে পাচ্ছি। চুল উসকো খুশকো, চেহারা বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত, রক্তাক্ত। খুব খারাপ দেখাচ্ছে আমাকে। কিন্তু তাতে আমার কোন যায় আসেনা। মেয়েটা আমার প্রেমে না পড়লেই আমি খুশি।
তখনো জ্ঞান আছে আমার, হেঁচকি ওঠার মতো করে শ্বাস বের হচ্ছে, আমি পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি, এই ভয়ংকর নিষ্ঠুর পৃথিবী হতে। গলায় ঘর ঘর করে আওয়াজ বের হচ্ছে, কণ্ঠনালী ছিঁড়ে রশি গলায় বসে যাচ্ছে, আমার চোখ কোটর থেকে ঠিকরে আসছে যেন, আমার মায়ের শাড়ির গন্ধ মনে পড়ছে কেবল, যেই গন্ধে আমি মাকে চিনতাম । রক্ত ভেজা লালা গড়াচ্ছে আমার, পড়ছে সত্যিকার জীবনের মুখে।
পড়ুন ।। কিস্তি : ২ ।। ক্লিক করুন নিচের লিংকে