ইয়াসমিনা রেজা ফরাসি নাট্যকার, অভিনেত্রী, ঔপন্যাসিক ও চিত্রনাট্যকার। তাঁর বিখ্যাত নাটক “লা দিয়েউ দু কার্নেজে”র ইংরেজি অনুবাদ গড অফ কার্নেজের বাংলা অনুবাদ করেছেন জাহিন জামাল।
প্রত্যয় অবশ্যই না। আমি মজা করছিলাম।
আনিকা আপনার ছেলেও সেক্ষেত্রে গুপ্তচর। যেভাবে আপনি বললেন তাতে তাই মনে হচ্ছে।
প্রত্যয় কী, কী বলছেন কি আপনি? আমাদের ছেলে গুপ্তচর?
আনিকা সে তো রামিনকে আইডেন্টিফাই করেনি।
প্রত্যয় কারণ আমরা তা চাইনি।
মৃন্ময়ী প্রত্যয়, এগুলো আলোচনার কোনো বিষয়ই না।
আনিকা তাতে হয়েছেটা কি? আপনারা চান বা না চান, ও তো আপনাদের নামটা বলেছিল, তাই না?
ফারহান আনিকা।
আনিকা কি হয়েছে কি? (প্রত্যয়কে) আপনার ধারণা আমার ছেলে গুপ্তচর?
প্রত্যয় আমার কোনো ধারণা নেই।
আনিকা আচ্ছা, কোনো ধারণা যদি নাই থাকে তাহলে কোনো কিছু বলা থেকেও বিরত থাকুন। আর ঠেস দিয়ে কথা বলাটা তো অবশ্যই।
মৃন্ময়ী একটু শান্ত হই আমরা, আনিকা। আমি আর প্রত্যয়, আমরা দু’জন মিলে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত এবং পরিশীলিত হবার চেষ্টা করছি…
আনিকা ঠিক ততোটা না যতোটা আপনি ভাবছেন…
মৃন্ময়ী তাই নাকি? কি বোঝাতে চাইছেন আপনি?
আনিকা উপরে উপরে পরিশীলিতের একটা ভাব…
ফারহান আমাকে বের হতেই হবে, কুটকুট।
আনিকা ঠিক আছে যাও। একটা কাপুরুষ কোথাকার।
ফারহান ঠিক এই মুহূর্তে আমি আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্লায়েন্টকে ফেলে এখানে দায়িত্বশীল অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছি…সুতরাং আমাকে তুমি…
মৃন্ময়ী আর আমার ছেলে দুটি দাঁত হারিয়েছে…সামনের পাটির দুটো দাঁত…
ফারহান হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমার ধারণা আমরা জানি সেটা।
মৃন্ময়ী আর এ দুটো দাঁতের একটা চিরতরে হারিয়েছে…চিরতরে।
ফারহান নতুন দাঁত পাবে ও…আমরা লাগিয়ে দেবো। ভালো দাঁত। এমন না যে ও কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলেছে!
আনিকা আমরা সমস্যাটার মূল বিষয় বারবার হারিয়ে ফেলছি।
মৃন্ময়ী কীসের মূল বিষয়?!? কোনো মূল বিষয় নেই। একটা ১১ বছরের বাচ্চা আরেকটা বাচ্চাকে মেরেছে। লাঠি দিয়ে মেরেছে।
ফারহান না, না, আপনি বলেছেন ও অস্ত্রসজ্জিত ছিল।
প্রত্যয় কিন্তু এ শব্দটা আমরা উইথড্র করেছি।
ফারহান আপনারা এটা উইথড্র করেছেন কারণ আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম।
প্রত্যয় আর কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই এটা আমরা উইথড্র করেছিলাম।
ফারহান শব্দটি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে ভুল এবং অসঙ্গতিকে দূরে রাখার জন্য, আমি তো বলবো কৈশোর জীবনকে বাতিল করার জন্য।
মৃন্ময়ী আমার মনে হয় না এভাবে কথা বলাটা আমি আর মেনে নিতে পারছি।
ফারহান আপনি এবং আমি…আমরা দু’জনে শুরু থেকেই চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছি না। এটা একটা সমস্যা।
মৃন্ময়ী আপনারা যেটাকে ভুল বলছেন সেটা একটা আক্রমণ আর এতে যদি আমি ক্ষুব্ধ না হই তাহলে কীসে ক্ষুব্ধ হবো আমাকে বলবেন কি? ‘অস্ত্রসজ্জিত’ শব্দটা অসঙ্গত আর তাই সেটা আমরা পরিবর্তন করেছি। তারপরও শব্দটার সঠিক অর্থে যদি আপনারা লেগেই থাকেন তাহলে জেনে রাখুন এর ব্যবহার শুধু ভুল নয় এর থেকেও অনেক বড় কিছু।
আনিকা রামিনকে অপমান করা হয়েছে আর সে শুধু একটু রিয়্যাক্ট করেছে। আমাকে যদি আক্রমণ করা হয় তাহলে তো আমি অবশ্যই প্রতিরোধ করবো, বিশেষত যদি আমি একা হই আর আমাকে ঘিরে থাকে একটা গ্যাং।
প্রত্যয় বমি দেখি আপনার থামেইনি এখনো সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন!
আনিকা এটা যে কতোটা ভয়ংকর নোংরা একটা কথা সে সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা আছে?
প্রত্যয় আমরা যা বলছি সব ঠিক বলছি। আমরা চারজনই। আমি নিশ্চিত। তাহলে কেন এই ছোটখাট বাজে বিষয় নিয়ে, এই অনর্থক খেপানোর মতো আচরণ করছি আমরা?
মৃন্ময়ী ওহ প্রত্যয়, যথেষ্ট হয়েছে। বারবার তোমার এই দুই নৌকায় পা দেয়া বন্ধ করো। আমরা সবাই যদি উপরে উপরে এতো ভালোই সাজি তাহলে আর এসব আলোচনার দরকার কি?
প্রত্যয় না, না, মৃন্ময়ী, তুমি যে পিচ্ছিল ঢালু রাস্তাটার কথা বলেছিলে আমি সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ছি না।
ফারহান কীসের ঢালু রাস্তা?
প্রত্যয় অসভ্য দুটোর জন্য এই বালের ঝামেলায় পড়ে আমরা এখন যা করছি, এর কথা বলছি। নাও হলো তো! মুখ ফসকে বেরিয়েই গেলো আমার!
ফারহান আমি জানি না দার্জিলিং-ও কি এমনটাই ভাবে?
প্রত্যয় মৃন্ময়ী!
ফারহান স্যরি।
মৃন্ময়ী তাহলে তোমার কথা মতো শৌনক-ও একটা অসভ্য, তাই না? এটাই বাকি ছিল!
ফারহান আমাকে সত্যিই বেরোতে হবে।
আনিকা আমাকেও।
মৃন্ময়ী যান না। প্লিজ। যান…আমার আর কিছু বলার নেই। (টেলিফোন বেজে ওঠে)
প্রত্যয় হ্যালো? হ্যাঁ, মা…না, না, না, বাসায় কিছু বন্ধু এসেছে। ওদের সাথেই আছি আমরা। না, না, বলো তুমি…আচ্ছা, ডাক্তার যা বলে তাই করো, সমস্যা কি! কি? এন্ট্রিল নিতে বলেছে? এন্ট্রিল? দাঁড়াও, একটু দাঁড়াও মা, আমি আসছি…না, না, রেখো না…আসছি আমি…(ফারহানকে) এন্ট্রিল আপনার কোম্পানির না? আমার মা খাচ্ছে এটা!
ফারহান হাজার হাজার মানুষ খায়!।
প্রত্যয় তুমি এখনি ওটা নেয়া বন্ধ করো মা। বুঝতে পারছো কি বলছি আমি? মা, মা, বলছি এখনি, এখনি বন্ধ করো…না, তর্ক করো না…যা বলছি তাই করো…হ্যাঁ ড. মাহমুদকে আমার কথা বলো, বলো যে আমি এন্ট্রিল নিতে নিষেধ করেছি…হ্যাঁ, কি? অন্ধকারের মধ্যে জ¦লবে কেন? কী অদ্ভুত কথা! …যাই হোক, এটা নিয়ে পরে কথা বলবো…লাভ ইউ মা…হ্যাঁ পরে ফোন করছি তোমাকে…(ফোন রাখে সে)…কি অদ্ভুত কথা! অন্ধকারের মধ্যে জ¦লে এমন একটা ক্রাচ সে কিনেছে যাতে কোনো ট্রাক তাকে রাতে মেরে না দিয়ে যায়…ভাবতে পারো…মানে বিষয়টা এমন যেন এই বয়সের একজন মহিলা ঢাকা-চিটাগাং হাইওয়ে দিয়ে মাঝ রাতে প্রায়ই হাঁটাহাঁটি করে…কোনো মানে হয় এসবের!…আর ব্লাড প্রেশারের জন্য তাকে দিয়েছে এন্ট্রিল! কিয়েক্টাঅবস্থা!
ফারহান এন্ট্রিল নেয়ার পরও সে যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে তাকে তো আমি স্বাক্ষী হিসেবে ডাকতেই পারবো। আচ্ছা আসার সময় আমার সাথে একটা স্কার্ফ ছিল না? এই তো এখানে।
প্রত্যয় দুঃখিত আমি বলতে পারছি না যে, ইউ আর ওয়েলকাম! আপনার এই অদ্ভুত দূরাশার কথা বলছি। আমার মায়ের যদি মিনিমাম কোনো সিম্পটোমও দেখা দেয় তাহলে আমি কঠিন অ্যাকশন নেবো।
আনিক আজ তাহলে চলি, মি. অ্যান্ড মিসেস প্রত্যয়।
মৃন্ময়ী মৃন্ময়ী! ভালো ব্যবহারের আজকাল কোনো দামই নেই। আর ভদ্রতা মানে হলো সময় নষ্ট করা। এটা মানুষকে শুধু দূর্বল আর ছোট করে…আর কিছু না…
ফারহান চলো আনিকা। একদিনে অনেক ধর্মপ্রচার আর উপদেশ পাওয়া হয়েছে। আজকের জন্য যথেষ্ট।
প্রত্যয় যান, যান না…কিন্তু যাবার আগে একটা কথা শুনে যান…আপনাদের সাথে পরিচিত হয়ে বুঝতে পারলাম, কি নাম ছোঁকড়াটার…হ্যাঁ রামিন, ওর সাথে ওখানটায় যা হয়েছিল তা আসলে শুধরাবার ছিল না…
আনিকা আর যখন পোষা খরগোশকে হত্যা করলেন আপনি তখন…
প্রত্যয় হত্যা?
আনিকা হ্যাঁ, হত্যা নয়তো কি?
প্রত্যয় আমি হত্যা করেছি খরগোশটাকে?
আনিকা হ্যাঁ, আপনি করেছেন। আর আমাদের মনে অপরাধবোধ জাগানোর জন্য যা যা করা দরকার তার সবই করেছেন আপনারা। কিন্তু আপনার মহানুভবতা আপনার ঐ জানালা দিয়ে তখনি বের হয়ে গেছে যখন আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, আপনি হত্যাকারীই হবেন।
প্রত্যয় আমি অবশ্যই ঐ পোষা খরগোশটাকে হত্যা করিনি!
আনিকা এরচেয়েও বাজে কাজটা করেছেন আপনি। আপনি ওটাকে বাইরে ভয়ঙ্কর প্রতিকূল এক অবস্থার মধ্যে ফেলে এসেছেন, ভয়ে-আতঙ্কে কাঁপছিল প্রাণীটা। বেচারা খরগোশটাকে নিশ্চয়ই কোনো ককুর বা বেড়াল খেয়ে ফেলেছে।
মৃন্ময়ী ঠিক বলেছেন। একদম ঠিক বলেছেন উনি।
প্রত্যয় ঠিক বলছেন মানে? কি বলছো তুমি এসব?
মৃন্ময়ী বলছি এটা সত্য। কি চাও তুমি? যে আমি বলি না এটা মিথ্যা! হাহ্! বেচারা প্রাণীটার না জানি কি হয়েছে!
প্রত্যয় আমি তো ভেবেছি প্রাণীটাকে আমি মুক্তি দিয়েছি। আর এতে তো ওর খুশি হবার কথা। ভাবলাম মুক্তির আনন্দে ব্যাটা নিশ্চয়ই ড্রেনের গাটারে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
মৃন্ময়ী কিন্তু এমনটা ঘটেনি।
আনিকা আর আপনি ওকে ফেলে এসেছেন।
প্রত্যয় আমি এসব ধরতে পারি না। বিশ^াস করো মৃন্মো তুমি তো জানো। আমার গা ঘিনঘিন করে এসব প্রাণী ধরতে।
মৃন্ময়ী হ্যাঁ ওর এক ধরনের ফোবিয়া আছে। তীক্ষè দাঁতযুক্ত এসব প্রাণী ধরার ব্যাপারে।
প্রত্যয় হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। ভয় পাই আমি এসব তীক্ষè দাঁতযুক্ত প্রাণী হাত দিয়ে ধরতে। সাপকেও ভয় পাই আমি। সব প্রাণী যেগুলো ওই মাটির কাছাকাছি থাকে। সহ্যই করতে পারি না। এখন হয়েছে? শেষ তো, নাকি?
ফারহান (মৃন্ময়ীকে) আর আপনি? আপনি কেন বাইরে গিয়ে দেখেননি প্রাণীটার কি হলো?
মৃন্ময়ী কারণ আমি জানতামই না কি হয়েছে। প্রত্যয় আমাকে বা বাচ্চাদের কাউকে কিছু বলেনি। বলেনি যে, খরগোশটা পালিয়ে গেছে। সকালের আগ পর্যন্ত কিছুই জানায়নি ও। জানার সাথে সাথে আমি বাইরে গিয়ে চারপাশে খুঁজে এসেছি, এমনকি বেইজমেন্টে গিয়েও খুঁজে এসেছি আমি। আর কি করতে বলেন আমাকে!
প্রত্যয় মৃন্ময়ী, আমি মানতেই পারছি না যে, এই একটা খরগোশ-নাটক নিয়ে আমাকে আজ কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। আর এটা একান্তই আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। অন্যদের এতে নাক গলানোর কিছুই নেই। বিশেষত এরকম একটা পরিস্থিতিতে। আমাকে হত্যাকারী বলা হচ্ছে, আমাকে! তাও আবার আমার নিজের বাসায়!
মৃন্ময়ী তোমার নিজের বাসার প্রসঙ্গ এখানে আবার কোত্থেকে এলো!
প্রত্যয় কারণ এটা আমার নিজের বাসা তাই। এই যে…এই যে দরজা এটা আমার দরজা, আমি খুলে দিয়েছি এটা…আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করেছি…আমি…আমি করেছি…কাদের জন্য করেছি…এই যে এদের জন্য…উনাদের তো আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত!
ফারহান আমার খুব মজা লাগছে। মজা লাগছে যেভাবে নিজের প্রশংসা নিজেই আপনি করছেন সেটা দেখে! ভালো চালিয়ে যান।
আনিকা আপনার কি একটুও অপরাধবোধ হচ্ছে না?
প্রত্যয় আপনাদের প্রবেশ করতে দেয়ার জন্য?
আনিকা খরগোশটাকে হত্যা করার জন্য!
প্রত্যয় আমি ওকে হত্যা করিনি তাই অপরাধবোধ হবার কোরো প্রশ্নই আসে না…নট অ্যাট অল। এই প্রাণীটাকে সবসময়ই আমার বিভৎস লাগতো।
মৃন্ময়ী প্রত্যয়, কি বাজে বকছো এসব? বিশ্রী!
প্রত্যয় বিশ্রী? কি বিশ্রী এখানে? তোমার মাথাও কি গেছে, হ্যাঁ, আউট হয়ে? তাদের ছেলে আমাদের শৌনককে পিটিয়ে তক্তা বানিয়েছে আর আমাকে এখন কথা শুনতে হচ্ছে ঐ বিশ্রী প্রাণীটা নিয়ে!
মৃন্ময়ী খরগোশটার সাথে তুমি খুব বাজে আচরণ করেছো। এটা তুমি অস্বীকার করতে পারো না।
প্রত্যয় বালের ঐ খরগোশকে চুদি আমি!
মৃন্ময়ী আজকে সন্ধ্যায় এই কথাগুলো কি তুমি তোমার মেয়েকে বলতে পারবে?
প্রত্যয় ডাকো ওকে। ডাকো। একটা নয় বছরের বাচ্চার সামনে কীভাবে কথা বলতে হবে সেটা আমাকে কাউকে শিখিয়ে দিতে হবে না।
মৃন্ময়ী কী বিভৎস চেহারা তোমার!
প্রত্যয় খুব সাবধানে, আমি বলছি খুব সাবধানে মৃন্ময়ী। এখন পর্যন্ত খুব ভালোভাবে নিজেকে সংবরণ করে রেখেছি কিন্তু মনে রেখো সীমা অতিক্রম করা থেকে আমি মাত্র দু ইঞ্চি দূরে আছি!
আনিকা আর শৌনক। ও কী বলবে?
প্রত্যয় ও কী বলবে মানে?
আনিকা ও নিজেও কি আপসেট না?
প্রত্যয় আপনার অবগতির জন্য বলছি শৌনকের আরো সমস্যা আছে।
মৃন্ময়ী ইমতুর সাথেও ওর সম্পর্ক ভালো না।
প্রত্যয় ফালতু একটা নাম।
আনিকা আপনার নিজের যদি অপরাধবোধ না হয় তাহলে আমাদের সন্তানের কাছে আশা করছেন কী করে?
প্রত্যয় একটা কথা বলি শুনুন, এই ফালতু আলাপ শুরুই হলো যখন তখন বলতেই হবে। আমরা যথেষ্ট ভালো আচরণের চেষ্টা করেছি। এই যে দেখুন টিউলিপ এনেছি। আমার স্ত্রী অনেকক্ষণ ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে আমি খুব লিবারেল। কিন্তু এই বালের আলোচনা আমি আর নিতেই পারছি না। দেখুন, আমি কোনো সভ্য সমাজের প্রতিনিধি না। আমি এখন যা এবং সবসময়ই যা ছিলাম তা হলো আইস এজ শুরুর পূর্বের অসভ্য, বর্বর মানুষ। ইংরেজিতে যাকে বলে নিয়ানডার্থাল।
ফারহান আমরা সবাই কি তা না?
মৃন্ময়ী না, না, আই অ্যাম স্যরি…আমরা ঐ অসভ্য বর্বর নিয়ানডার্থাল নই।
ফারহান আচ্ছা, আপনি তাহলে অবশ্যই নন।
মৃন্ময়ী না, আমি তো অবশ্যই না। থ্যাংক্স গড।
প্রত্যয় না, না, দার্জি, তুমি তো অবশ্যই না। বিবর্তনের ফলে উদ্ভুত একজন পরিপূর্ণ নারী তুমি।
মৃন্ময়ী তুমি এভাবে আমাকে আক্রমণ করছো কেন?
প্রত্যয় আমি তেমাকে আক্রমণ করছি না। বরং এর উল্টোটা।
মৃন্ময়ী না, তুমি আমাকে আক্রমণ করছো। তুমি জানো তুমি করছো।
প্রত্যয় তুমিই তো এই পার্টিটা আয়োজন করেছো, তাই না? আমি শুধু নিজ রূপে এতে আবির্ভূত হলাম।
মৃন্ময়ী তুমি নিজরূপে আবির্ভূত হলে?
প্রত্যয় হ্যাঁ।
মৃন্ময়ী ছি! ঘেন্নায় আমার গা রিরি করছে।
প্রত্যয় একদম না। তুমি সভ্যতার বিমূর্ত প্রতীক হয়ে ওখানটায় দাঁড়িয়ে আছ। এটা তোমার ক্রেডিট!
মৃন্ময়ী এক্সাক্টলি। আমি সভ্যতার প্রতীক হয়ে এখানটায় দাঁড়িয়ে আছি! আর ভাগ্য ভালো যে এখনো কিছু মানুষ তা করার জন্য প্রস্তুত থাকে। (সে প্রায় কেঁদে ফেলছে) তোমার ধারণা সভ্য না হয়ে ঐ নিয়ানডার্থালদের মতো বর্বর হওয়াটা ভালো বুদ্ধি?
ফারহান বাদ দিন তো এখন, বাদ দিন প্লিজ..
মৃন্ময়ী (প্রায় কাঁদতে কাঁদতে) কেউ একজন অসভ্য-বর্বর নিয়ানডার্থাল নয় আর সেজন্য তাকে সমালোচনা করা হচ্ছে, এটা কি স্বাভাবিক?
আনিকা কেউ এটা বলেনি…কেউ সমালোচনা করেনি আপনার।
মৃন্ময়ী অবশ্যই করেছে…(এবার সে প্রচণ্ড শব্দে কেঁদে ফেলে)
ফারহান না, কেউ করেনি। কেউ না।
মৃন্ময়ী আমাদের কী করা উচিত ছিল তাহল? কী? শুলে চড়াবো আপনাদের? কথা না বলে, আলোচনা না করে একজনের আরেকজনকে মেরে ফেলা উচিত ছিল? আর তারপর গিয়ে ইনস্যুরেন্স ক্লেইম করবো?
প্রত্যয় স্টপ ইট দার্জি, স্টপ ইট।
মৃন্ময়ী কি থামবো? কেন থামবো?
প্রত্যয় সবকিছু তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছো তুমি, সবকিছু।
মৃন্ময়ী আমি বাল দিয়েও পুছি না এসব! তুমি নিজের নিচু মানসিকতা দেখিয়েছ। আর শেষটায় হিউমিলিয়েট করেছ…তুমি নিজে দায়ি এর জন্য…নিজে…(ফারহানের ফোন ভাইব্রেট করে)
ফারহান হ্যাঁ, ওদের প্রমাণ করতে দাও! হ্যাঁ, হ্যাঁ প্রমাণ…আর আমাকে যদি জিজ্ঞেস করো তাহলে আমি বলবো কোনো উত্তর দিয়ো না।…
প্রত্যয় হ্যাঁ নিজের কাজের জন্য তো আমরা নিজেরাই দায়ী হবো। উই আর অলওয়েজ অন আওয়ার অউন। সবখানে। কেউ কি একটু রাম চেখে দেখতে চায়?
ফারহান …সৌমিক, আমি একটা মিটিংয়ে আছি। অফিস গিয়ে তোমাকে ফোন দেবো। (ফোন রাখে সে)
মৃন্ময়ী তাহলে বোঝো এবার! কীরকম নেগেটিভ একটা মানুষের সাথে আমার বাস!
ফারহান কে নেগেটিভ?