১
পাখিটি বেশ বর্ণিল। যদিও বিরল তবু এই উত্তর জনপদে একদিন ক্যামেরাবন্দি হন তিনি। আকারে ভাত শালিকের মতো দেখতে কিন্তু ময়ূরের পেখম মেলানা লেজের মতো তাঁর মাথার উপর রঙিন ঝুঁটি। হাঁটতে চলতে বা উড়তে উড়তে তার ঝুটিও ময়ূরী নাচে নেচে উঠে — কখনো সামনে কখনো পেছনে। দারুণ দেখতে। তিনি হুদহুদ। এ তল্লাটে হুদহুদের অন্নপ্রশানে ‘মোহনচূড়া’ রাখেন সাহিত্যিক বলাইচাঁদ। মোহনচূড়া মোহনচূড়া ডাকাডাকিতে একটা বঙ্গীয় বাহারি ভাব আছ।
কয়েকদিন আগেই হুদহুদকে চিনিছে বারো শতকের পারশিয়ান কবি ফরিদ উদ্দিন আত্তারের The Conference of the Birds কাব্যে। চমৎকার একটি কাব্য। হুদহুদ এখানে পথ প্রদর্শক। মেটাফর। মানুষের সাথে প্রকৃতির নানাভেদগ্রস্থতার বিরুদ্ধে লড়ে লড়ে অভেদের সন্ধান করার নানা কর্মতৎপরতা।
Dear hoopoe,welcome.! You will be our guide;
It was on you King Solomon relied
To carry secret messages between
His court and distant Sheba’s lovely queen
He knew your language and you know his hearts —
নিজেকে নিজের মতো করে নিজের ভেতর পাবার পথ প্রদর্শক এই হুদহুদ বা হুপি বা মোহনচূড়া। নানা নাম রূপের আড়ালে অনামের ও অরূপের ভেতর দাঁড়িয়ে নিজেই নিজে দেখছে আমিই সেই। চমৎকার এক জার্নির নাম The Conference of the Birds।
২
করোনা প্রকোপে এদিকটা আজকাল বাইরের কেউ আসে না। পাকা সড়কের ডান পাশের বেলে মাটির পথ গিয়ে ঠেকেছে নওকুচি গ্রামের ভেতর। বনবিভাগের সারি সারি সাজানো লাগানো গাছ আকাশ ছুঁয়েছে। এখানেই পঞ্চবটি। অন্যপাশে কোচ বসতি। কত ঘর আর? আশি পঁচাশি ঘর হবে হয়তোবা। উদোম গাঁয়ে রবীন্দ্র কোচ মন্দিরের পাশের জমিন নিড়িয়ে দিচ্ছিল কাছে যেতেই উঠে দাঁড়ালেন। গলায় তুলসীমালা। জিজ্ঞেস করতেই বললেন এটি খাং খাংয়ি মন্দির আর রাস্তার পাশের টি সোনারয় ও রূপারয় মন্দির। ছোট ঘরের মত চৌচালা টিনের ঘর — কোচ জনগোষ্ঠীর আরাধনার চাতাল।
এই মন্দিরের প্রসারিত তল্লাটে পাঁচ পাঁচটি বট — কোনটি প্রবীণ কোনটি সতেজ যুবক ছড়াচ্ছে ডালপাল। শক্ত চোয়াল আর পেশীবহুল হাতের মতো প্রসারিত ডাল একদিকে নীলাকাশে মেলে দিয়েছে অন্যদিকে মাটির গভীরে জড়িয়েছে একের শিকড়ের সাথে অন্যের শিকড় — পরস্পরে দূরত্ব রয়ে গেলেও গভীরে গভীর সম্পর্ক।
এই যে বন — বনবীথি দেখছেন এর সব কিছু বনবিভাগের প্রযত্নে বেড়ে ওঠা বন। মাটি — পাহাড় — পাহাড়ের ঢাল-বৃক্ষ — পশুপাখিদের সাথে যে পারস্পরিক সম্পর্কায়নের গণিত ও অনন্য নির্ভরতা সেটি বিবেচনা করেননি বনবিভাগ — করেছে শুধু অর্থ উৎপাদনের উপায়ের হিসাব জারি রাখার ভোগ-ভোগী বাইনারি সম্পর্ক। দ্রুত আয়ের ফন্দি। গত পঞ্চাশ বছরে অপরিকল্পিত বনায়ন শুধু নয়, বন ও মানুষের সাথে যে সম্পর্ক-সূত্র সেটি পুঁজির প্রভাব বলয়ের কারণে পাহাড়েও দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে সমান হারে। কোন বনই আমার স্বেদেশি নয় — সকল বন বিদেশি গাছেদের উপনিবেশ।
৩
এই উত্তর পদে যখন একে একে ছেয়ে যাচ্ছিল একাশিয়া মেনজিয়াম প্রজাতির গাছের প্রজনন ও বংশ বিস্তার বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন আর এনজিও মিছিল মিটিং সেমিনারে ভয়েস রেইজ করলেও কর্পোরেটদের তাপে চাপে ভাপে নিস্পেষিত হয়ে গেছে প্রতিবাদী স্বর ও সুর। ক্ষতি হয়ে গেছে সমগ্র বাস্তুসংস্থানে। মানি নি Land Ethics সপ্রাণ ভূমির কথা ভাবিনি ‘‘The land ethics simply enlarge the boundaries of the community to include soils,water,plants and animal or collectively; the land… in short a land ethic changes the role of Homo sapiens from conqueror of the land community to plain member and citizen of it. It implies respect for his fellow members,and also respect for the community as such.” (Aldo Leopold)
টাকার ভেতর টাকা পয়দা করার সময়ই এখন। কে আর ভাবে বৃক্ষের কথা অথবা পাখির আবাস কেন জরুরি। মানুষের সপ্রাণতা সমগ্র প্রাণ ও প্রকৃতির সাথে গাঁটছড়া বাঁধা। জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি সহ আরো অন্যান্য কারণে পাখির আবাস সংকুচিত হয়ে পড়ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিশ্বায়নও ঘটে গেছে ইতোমধ্য। নির্গত কালো কার্বন নিঃসরণের শিকার হতে যাচ্ছে আমাদের মতো ছোট উন্নয়নশীল দেশ। বিপন্ন প্রাণ ও প্রকৃতি।
পশুপাখি খাদ্যের চাতাল দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।ঘাষের প্রান্তর কিংবা উন্মুক্ত জলাশয়ে আটকে গেছে প্রোমোটারদের চোখ। শপিং মল হাইরাজিং কর্পোরেট পাড়া ছাড়া উন্নয়ন যেন আর সম্ভব নয়। আব্দুর কাদির “বনকে বনের কাছ ফিরিয়ে দিতে হবে” — বুড়ি মাঠের উচু টঙঘরে বসতে বসতে বললেন। মাঠের ওপাশে শ্যামাকালী মন্দির শ্মশান — শ্যামা পূজায় এক সময় এখানে মেলা বসত। গ্রামীণ মেলা। শুষ্ক মৌসুমে খেলা — খেলা মানে ফুটবল লেখা। ক্রিকেট এখনও এই প্রান্তিকের খেলা হয়ে ওঠেনি — সার্পোটার বা ফ্যান পর্যন্তই। এই মাঠের পাশে টঙঘরে বৃষ্টির দাপটে দৌড়ে এসে উঠেছি আমরা।
বন আর বনজীবী পারস্পরিক যে বন্ধন সে বন্ধন ধ্বংসের না, বরং উৎপাদনমূলক বন্ধন। সে জানে বন উজাড় হলে তাঁর জীবন জীবিকা বিপন্ন। শহীদুজ্জামন যুক্ত করলেন, “নির্দিষ্ট সময়ান্তে সে গাছের মরা ডাল কেটে ফেলে বনের যেমন পরিসর করেন তেমনি গাছের পরিচর্যা করেন।” বৃষ্টির ঝটকায় টঙঘরেও ভিজে যাচ্ছি আমরা। পাহাড়ি বৃষ্টিতে আলাদা মাদকতা আছে। বৃষ্টির ভেতর শনশন শব্দ — একটানা শনশন শব্দ।
দাঁতে দাঁতে বিস্কুট কুটকুট করতে করতে কথা ও গান আর বৃষ্টির শনশনে ভেজা শরীরে ঘুম জড়িয়ে আসছে। বর্তমান বন ও বনায়নের যে ধারণা সেখানে বনজীবী গৌণ। মুনাফাভোগী শেয়ারিং এখানে প্রধান এজেণ্ডা। বনের বাইরে বহিরাগতদের সাথে বনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক বিদ্যমান। একজন ব্যবসায়ী যেমন অন্য কোন প্রকল্পে টাকা বিনিয়োগ করে অধিকতর টাকা বানাবার জন্য বিনিয়োগ করে — এখানে তেমন বনের জরায়ু ব্যবহার করে বন-ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য বনকে ব্যবহার করে যথেচ্ছেভাবে। বন পাহাড় পাখিদের সাথে এদের সম্পর্ক নেই; আছে টাকার সাথে। বহিরাগত উডলট হিসেবেই দেখে। বন বনজীবী বনের বাস্তুসংস্থান টাকা পয়দা করার মেশিন হবার কারণে দেশের বন “ন্যাচারেল ক্যাপিটাল” হয়ে ওঠেনি।
“এই যে দেখুন” আব্দুর কাদির উদাহরণ দিয়ে বললেন, “স্থানে স্থানে দেখবেন মিটিমিটি করে আগুন জ্বলছে শুকনো পাতা পুড়ে যাচ্ছে। গোল মতো জায়গা পুড়ে ছাই হয়ে আছে। এতে করে বড় গাছের পাশে ছোট্ট বেড়ে ওঠা গাছটিও পুড়ছে; পোড়ে ঝোপঝাড় কেচো, কেন্নো, সরীসৃপ ও মাটির গুনাগুণ।”
বন তো আর বাড়ির নিকানো উঠান নয়। উঠান আর বনের চাতালের ব্যাকরণ আলাদা আলাদা। যদিও বন বিভাগ স্বীকার করে না। বনকর্মকর্তা থিয়োরি মুখস্ত করেই বন বিভাগ থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন। তিনি বইপড়া থেকে জানেন, এভাবে বন আগুন দিতে নেই — বনের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়। বনকর্মকর্তা আটদশটা চাকরির মতোই মনে করেন, এটি একটি চাকরি। বনের রক্ষক যে প্রাণের রক্ষক সে তা ভুলে যায়। তিনি তখন বসের যাবতীয় দূষণ অপয়া পর্যটকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজের কর্তব্য সম্পন্ন করেন। তাই বলে পর্যটকদের দোষ নেই এমন নয়। চিপস চানাচুর মিনারেল ওয়াটারের বোতলসহ নানা প্লাস্টিক বনের ভেতর ফেলে আসছে কখনো জেনে কখনো না জেনে।
“বনকে বনের কাছে ফিরিয়ে দিন — বন আর পাখি মিলেই বন তার নিজস্বতা ফিরিয়ে আনবে।” সুজয় মালকার বললেন, “পাখিই বীজ বহন করে আনে। হরিয়াল, ফুলঝুরি, কালা ঘাড় রাজন, বেনে বউ পাখি বটফল খেয়ে যে বিষ্ঠা ত্যাগ করে তাতেই বিস্তার ঘটে বট পাকুড় অশত্থ। লাগাতে হয় না। পাখির পরিপাকতন্ত্র বড় ল্যাবরেটরি।”
বনের সাথে যাদের প্রাকৃতিক সম্পর্ক আছে তাদের প্রযত্নেই বন তার সৌষ্ঠব ফিরে পাবার সম্ভবনা। “কোন নদী ভাঙন দূরবাসীকে বনের ভেতর না আনা।” আব্দুর কাদির বললেন, “এই সেটেলাররা নয় — তাদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করা হোক, কেননা তারা বনের ব্যাকরণ জানে না। ঠিক তেমনি এই যে বহিরাগত বৃক্ষ এনে আমরা বনের ভেতর যে অপসংস্কৃতি এনেছি, তাতে করে পুরো বনের ইকোসিস্টেম ধ্বংস করে দিয়েছি; আমরা এখন শুধু তার পরিণাম ভোগ করব সকলে।”
৪
মিঠুন কোচ আমাদের টিমে সাথে ঘুরছে। এই বনেই তাঁর বেড়ে ওঠা। তিনি কাদিরের কথায় সায় দিয়ে বললেন, “এখানেই একদিন কত পাখি ছিল। ছিল খরগোশ বানর হরিণ শুকর শেয়াল বনমোরগ। এখন নেই। কাউকে খোঁজে পাবেন না।” মিঠুন গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। জেলা সদরে বাচ্চাদের আর্ট শিখায়। এখন যেভাবে বনের বেড়ে ওঠা এখানে বনমোরগ বিস্তার সম্ভব নয়। তাঁর দরকার ঝোপঝাড়। কাঁটা বেতের বন। আড়া বাঁশের অন্ধকার ঝোঁপ। এখন পুরো বন উদোম।ন্যাংটা। আর বহিরাগত মানুষের চাপে তাপে ভাপে খরগোশ উধাও। বানর উধাও। শেয়াল উধাও। এরা আড়ালের পরিসর চায়। লুকোচুরি পরিসর চায়। ধিঙ্গি একাশিয়া কোন ঝোপ তৈরি করে না। সে শুধু জিরো ফিগারের মতো বেড়ে উঠতে জানে।
বনের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে আব্দুর কাদির বলছিলেন বনে পর্যটকের চাপ কমিয়ে আনা যায় সহজেই। পর্যটক প্রকৃতির টানে একটু অবসরের জন্য এখানে আসবেই। ক্যাবল ট্যানালে সরকার করে দিক। তাতে করে পশুপাখির বিস্তার ঘটবে তেমন সরকার পাবে রাজস্ব ঠিক থাকবে বনের পরিবেশ।
দেশি গাছ তো আমাদের কম নয়। গজরি শাল বহেরা, হরিতকি, আমলকি, নিম কাঁঠাল, বনবড়ই, চাপালিশ ডেওয়া, জামরুল, বেত, গাব — কত না সারি সারি নাম। এতে করে এদিকে যেমন দেশীয় গাছের বিস্তার ঘটানো যায় তেমনই বন ও বনজীবী এবং বনাশ্রিত পশুপাখি ফিরে পাবে তাদের নিজস্ব নিরাপদ ঠিকানা। অথচ দেখুন এই বন এখন গন্ধহীন রূপহীন বয়স্কা কোন এক নারী। এই ঝিনাইগাতির উত্তরে পাহাড়ে এতো এতো গাছ। অথচ কোন পশু নেই। মানুষ ছাড়া সমাজের মতো। পাখি কম। ফুল নেই। মৌমাছি নেই। সামাজিক পতঙ্গ মৌমাছি ফুলের পরাগায়ণ ঘটিয়ে বনজ ফলজ ফলদ ও কৃষিজ ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। আমরা মৌমাছির জন্যেও কোন পরিসর এই উত্তর জনপদের পাহাড়গুলোতে রাখিনি। কাজেই এই অঞ্চলের আদি পেশাজীবী মৌয়াল আর নেই। যে তুলা রাশির জাতক পূর্ণিমা অমাবস্যা রাতে ঘুরে ঘুরে মৌচাক সংগ্রহ করত তাদের পেশা পাল্টে গেছে। পাহাড়ের ঢালু জমিনে উৎপাদিত মরিচ আদা হলুদের আর উৎপাদন নেই। উৎপাদক নেই। মরিয়মনগর থেকে ঢাকা সকলেই এখন আমরা ভোক্তা — প্যাকেটজাত গুঁড়ামশলার গ্রাহক : রাঁধুনি পাটায় মশলা পিষার চেয়ে প্যাকেটেই আস্থা গৃহিণীর প্রথম পছন্দ।
পাহাড়ি পথে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাঁটছিলাম আমি আর অপূর্ব। অন্যান্যরা স্নাত হয়েও ক্যামেরায় চোখ রেখে খুঁজছে পাখি। শূন্য চাতালে দুই ডানা মেলে ঘুরে ঘুরে আঁকছে বৃত্ত কিংবা বৃত্তের চাপ। ক্যামেরা তাক করে আছে কাকভেজা অপূর্ব নন্দী। “সাংগঠনিকতা যেকোন কাজকে ত্বরান্বিত করে” অপূর্ব ভট্টার্চায বলছে, কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, ইতিবাচক কাজে শেরপুরে তৎপরতা খুব সামান্য।” নেটিজেন হবার কারণে সাংগঠনিক চর্চাও শূন্যের কোঠায়। প্রান্তিকে পরিবেশ সচেতনামূলক সংগঠন করে তুলতে না পারলে সমূহ বিপদ। ছড়া কেটে তিনি মজা করে শেরপুরের সাংগঠনিকতা নিয়ে বলছে, “যা ছাগল, পাতা খা/ পাতা খেয়ে বাড়ি যা।” গোছের কার্যক্রম। কোন ধারাবাহিকতা থাকে না। জমাট বাঁধবার আগেই ভেঙে যায়। অপূর্ব টিআইবিয়ের মতো একটি শক্ত সাংগঠনিকতার ভেতর দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কাজেই ওর অভিজ্ঞতা আমি খুবই ইতিবাচকভাবে দেখি। অপূর্ব আমুদে ছেলে। টঙঘরে গানে গানে মাতিয়ে রেখেছিল আমাদের যাত্রা বিরতি। বাইরে পাহাড়ি বৃষ্টির ছন্দ আর অপূর্বের গানের খোলা গলা মিলেমিশে একাকার। সুরের ঝংকারে আমার বেসুরা সুর কানে ঢুকতে না ঢুকতে দুই ঠোঁটে আঙুল। চুপ। চুপ। বরং অপূর্ব গলাকণ্ঠ ছাড়ুক জোরে।
ভেজা বেলে মাটি পথে হাঁটবার মজাটা একটু ভিন্ন। পায়ের চাপে একটু দেবে গেলেও পা কর্দমাক্ত হয় না। পায়ের চাপে পানি একটু শুষে গিয়ে ভেজাবালু জেগে ওঠে। বৃষ্টির দাপটে ভিজে গেছি আমরা। বাঁকাপথে হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি একবারে নওকুচি গ্রামের শেষ প্রান্ত শুধু নয় — বাংলাদেশের শেষ সীমানা। আমার উত্তরের সীমানা পিলার। ত্রিভুজের মতো পিলার উর্ধ্বে কোণটা আকাশের দিকে মুখটা রেখে শেষ প্রান্তের ভুমিতে বসে আছে সীমানা প্রাচীর। একপাশে BD অন্যপাশে IND।
আব্দুর কাদিরের পাশেই ছিলাম। ”একটু পরেই একটা ছড়ার মতো ছোট্ট নদী আছে।” কাদির শেষ আগেই বললাম, কী নদী? বুকে ঝুলিয়ে রাখা ক্যামেরা ঠিক করে বললেন, “পথের পাশে নাম গন্ধহীন ফোটা ফুলের মতো নামহীন একটি নদী।” সীমানাচিহ্নিত পুরাতন বট গাছ ডানে রেখে উঁকি দিলেই সরু দড়ির মতো আঁকাবাঁকা পাহাড়ি ছড়া নো মেন্স ল্যাণ্ডের বুক চিরে এগিয়ে গেছে ঘোলা জল নিয়ে। এটিই আব্দুর কাদিরের নামগোত্রহীন অনামী নদী।
ভোর থেকেই ঘুরছি ভবঘুরেদের সাথে। মাঝে মঝে বিড়ি খায়। মাঝে জিড়িয়ে নেন। পাহাড়ি অখণ্ড নীরবতার ভেতর এসবিএস টিম — কথা কম, ক্লিক বেশি। তাই বিড়ি খায় আর জিড়িয়ে নিয়ে এতো শব্দ খরচা করার কী দরকার — কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে বলেন “বিড়িয়ে নেই।’’ বিড়ি আর জিড়িয়ে নিয়ে জড়িয়ে দিয়েছেন “বিড়িয়ে নেই”; বললেন সুজয় মালাকার। সুজয়ের সাথে যখন আমার আলাপ হলো, কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন “আমি মানুষ খুঁজি না — পাখি খুঁজি; পাখি সঙ্গ ভালো লাগে।”
লেখক জ্যোতি পোদ্দারের পাখি সঙ্গ লেখাটি পড়লাম। পড়তে পড়তে একটা কথা মনের মধ্যে উঁকি দিল- আজকাল সত্যিই গাছের পাখির দিকে তাকিয়ে পাখি সঙ্গ উপভোগ করা হয় না।
আমার স্পষ্ট মনে আছে ছোটবেলায় এই হুদহুদ পাখি দেখে অবাক হতাম, আমরা নাম দিয়েছিলাম ঘাড়-ফুলাইন্না শালিক।
লেখককে ধন্যবাদ। তিনি পাখির বর্ণনার সাথে প্রকৃতি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের আলোকপাত করেছেন।
আশাকরি পরবর্তীতেও এরকম সুন্দর ব্যতিক্রমী লেখার দ্বারা তিনি আমাদের কাটখোট্টা সময়টাকে বর্ণিল করে তুলবেন।
অসাধারণ একটি লেখা।খুব ভালো লাগলো।পড়তে পড়তে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাচ্ছিলাম।একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলাম।লেখক বন্ধুকে অনেক ধন্যবাদ।
তপ্ত দাবদাহে বৃষ্টির মতো…