ডিকলোনাইজিং দ্যা মাইন্ড ।। কিস্তি : ৫

সূত্র : কেনিয়ান আর্ট রিভিউ
নগুগি ওয়া থিওঙ্গো সাহিত্য ও রাজনীতির দুনিয়ায় চেনা একটি নাম। তাঁর বিখ্যাত বই Decolonising the Mind: The Politics of Language in African Literature (1986)। ঔপনিবেশিক রাজনীতি, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি বোঝার দারুণ প্রতিনিধি-পুস্তক এই বই। বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করবেন শিবলী নোমান

 

আফ্রিকান থিয়েটারের ভাষা

এক

১৯৭৬ সালের এক ভোরে, কামিরিথু গ্রাম থেকে এক নারী আমার কাছে এসেছিলেন আর সরাসরি তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন। ‘‘আমরা শুনেছি আপনি অনেক শিক্ষিত আর বই লিখেন। কেন আপনি ও আপনার মতো আরও যারা আছেন তারা তাদের শিক্ষার কিছু অংশ গ্রামে দান করেন না? আমরা এর পুরোটা চাই না; শুধুমাত্র এর সামান্য অংশ আর আপনার সময়ের খুব অল্প একটা ভাগ।” তিনি আরও বলেছিলেন গ্রামে একটি যুবকেন্দ্র ছিল যা আসলে ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। এর প্রাণবন্ততা ফিরিয়ে আনতে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন ছিল। তিনি জানতে চাইলেন আমি তাদের সাহায্য করতে চাই কিনা। আমি বলেছিলাম আমি এ বিষয়ে ভেবে জানাবো। সেই সময় আমি ইউনিভার্সিটি অব নাইরোবির সাহিত্য বিভাগের সভাপতি ছিলাম। তবে থাকতাম রাজধানী শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কামিরিথু লিমুরুতে। রবিবার ছাড়া প্রতিদিন আমি গাড়ি চালিয়ে নাইরোবিতে যেতাম আবার ফিরে আসতাম। তাই রবিবার ছিল আমাকে বাসায় পাওয়ার জন্যে সবচেয়ে ভালো দিন। সেই নারীটি এর পরের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ রবিবারেও আমার কাছে এসেছিলেন একই বক্তব্য ও একই অনুরোধ নিয়ে। এভাবেই আমি অন্যদের সাথে যুক্ত হয়েছিলাম সেখানে, যাকে পরে বলা হতো কামিরিথু কমিউনিটি এডুকেশন অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার

 

দুই

কেনিয়া ল্যান্ড অ্যান্ড ফ্রিডম আর্মি, যারা মাও মাও নামে পরিচিত ছিল, তাদের গেরিলা দলের সাথে সাধারণ মানুষের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে ১৯৫০ এর দশকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসন লিমুরুতে যেসব গ্রাম স্থাপন করেছিল, তাদেরই একটি ছিল কামিরিথু। ১৯৬৩ সালে স্বাধীনতা লাভের পরও এই গ্রামগুলো সস্তা শ্রমের যোগানদাতা হিসেবে থেকে গিয়েছিল। ১৯৭৫ সালে শুধুমাত্র কামিরিথু গ্রামের জনসংখ্যাই ছিল ১০ হাজার। ভাড়াটে বা মালিক যাই হোক-না-কেন কামিরিথুতে থাকা শ্রমিকদের মূলত তিনভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, যারা উদীয়মান শিল্পগুলোর প্রোলেতারিয়েত। যেমন বহুজাতিক জুতো নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বাটা, নাইল ইনভেস্টমেন্ট প্লাস্টিক পাইপস অ্যান্ড গুডস ফ্যাক্টরি, ছোট ছোট লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্ট, কাঠ ও ভুট্টার মিল, মোটর ও বাইসাইকেল মেরামতের গ্যারেজসমূহ প্রভৃতি। দ্বিতীয়ত, বাণিজ্যিক ও গার্হস্থ্য শ্রমিক; যারা হোটেল, দোকান, পেট্রোল স্টেশন, বাস ও মাতাতু , গাধা দিয়া টানা যাত্রীবাহী গাড়ি এবং মনুষ্যচালিত পুশকার্ট চালানো প্রভৃতিতে কাজ করে। তৃতীয় শ্রেণিটি হলো কৃষিভিত্তিক প্রোলেতারিয়েতের অংশ। তারা মূলত কাজ করে বৃহৎ চা ও কফি বাগানগুলোতে যা আগে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সেটেলারদের মালিকানায় ছিল কিন্তু এখন লন্ড্রোর মতো কিছু ধনী কেনিয়ান ও বহুজাতিকের নিয়ন্ত্রণে আছে। এছাড়া সব ধরনের ফার্মে মৌসুমী শ্রমিক হিসেবে কর্মরতরাও এই শ্রেণির অংশ।

 

তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো কৃষকশ্রেণি। এতে রয়েছে ধনী কৃষক যারা পারিবারিক শ্রমের বাইরেও শ্রমিক নিযুক্ত করেন; মধ্য পর্যায়ের কৃষক যারা পারিবারিক শ্রমের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল; গরিব কৃষক যারা তাদের স্বল্প পরিমাণ জমিতে কাজের পাশাপাশি মজুরির বিনিময়ে শ্রম দেয়; আর আছে অসংখ্য ভূমিহীন কৃষক যারা জমি বর্গা নেয় কিংবা মজুরি শ্রমিক হিসেবে মাঠে কাজ করে। এর সাথে অবশ্যই সেখানে প্রচুর বেকার রয়েছে, সাথে আছে পূর্ণ ও খণ্ডকালীন পতিতা আর ছোট ছোট অপরাধী। কামিরিথুর আরেকটি বৈষিষ্ট্যপূর্ণ শ্রেণি হলো পেটি-বুর্জোয়ারা; এর ভেতর রয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মচারি, ছোট বার ও দোকানের মালিক, স্বনির্ভর কারিগর, কাঠমিস্ত্রী, সংগীতশিল্পী, শিল্প বণিক ও অনানুষ্ঠানিক ব্যবসায়ী। ধনী জমিদার, বণিক, বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এবং ভূমিমালিক কৃষকদের বড় অংশ গ্রামের বাইরে বাস করে।

 

আমি এসব আলাদা আলাদা শ্রেণিগুলোর উল্লেখ করলাম কারণ এদের প্রায় সব অংশেরই কামিরিথু কমিউনিটি এডুকেশন অ্যান্ড কালচারাল সেন্টারে অংশগ্রহণরূপে প্রতিনিধিত্ব ছিল। উদাহরণস্বরূপ, সেন্টারটির পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন কৃষক, শ্রমিক, একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং একজন ব্যবসায়ী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা কিমানি, গিকাও, কাবিরু কিনইয়ানজুই, নগুগি ওয়া মিরি প্রমুখ পরবর্তীতে আমাদের সকল কর্মকান্ডের সমন্বয়কারী পরিচালকে পরিণত হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৬ সালে কাজ শুরু করা এই সেন্টারের প্রকৃত মেরুদণ্ড ছিল বেকারসহ কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণি।

 

এই সেন্টারের উদ্ভব, লক্ষ্য এবং ক্রমোন্নয়ন স¤পর্কে আমি আমার বই ডিটেইনড: আ রাইটার’স প্রিজন ডায়েরি, ব্যারেল অব আ পেন: রেজিজট্যান্স টু রিপ্রেজেন্টেশন ইন নিও-কলোনিয়াল কেনিয়া এবং অন্যান্য প্রকাশনায় কথা বলেছি। সংবাদপত্র, জার্নাল ও গবেষণা প্রবন্ধসমূহতে এ বিষয়ে আরও অনেক লেখা হয়েছে। তবে আফ্রিকান থিয়েটারের ভাষা বিষয়ে আমাদের আলোচনার জন্যে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, সেন্টারের সকল কার্যক্রমই একে অপরের সাথে যুক্ত হলেও, একে অপরের থেকে এগুলোর উদ্ভব হলেও, প্রতিটি কার্যক্রমই ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। তথাপি আমাদের মূল পরিকল্পনার কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে থিয়েটারের মাধ্যমেই বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি থেকে বের হয়ে আসা নতুন শিক্ষিতদের জন্যে নতুন নতুন কার্যক্রম ও উপাদান সরবরাহ করা হতো। একই সময়ে বস্তুগত সংস্কৃতি কর্মসূচি অংশে বিভিন্ন কারিগরি কাজের ভিত্তি হিসেবেও থিয়েটারকে সামনে আনা হয়েছিল।

 

কিন্তু একটি গ্রামে থিয়েটারই কেন? আমরা কি একটি সম্প্রদায়কে এমন কিছুর সাথে পরিচিত করাচ্ছিলাম যা তাদের কাছে একদমই অপরিচিত? ঠিক যেমনটা পরে দাবি করেছিলেন প্রাদেশিক কমিশনার!

 

তিন

প্রকৃতি ও অন্যান্য বিষয়ের সাথে মানুষের সংগ্রামের ভেতর দিয়ে নাটকের উদ্ভব। উপনিবেশ পূর্ব কেনিয়াতে, বিভিন্ন জাতীয়তার কৃষকরা জঙ্গল পরিষ্কার করে শস্য বুনেছে, সেগুলোকে পাকিয়ে ঘরে তুলেছে। জমিতে একটি বীজের অঙ্কুরোদগম থেকে বহু বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটেছে। মানুষের হাত ও হাতে ধরে থাকা হাতিয়ারের মধ্যস্থতা থেকেই প্রাণহীনতা থেকে প্রাণের সঞ্চারণ ঘটেছে। এছাড়া ছিল আরও আরও রহস্য। গরু-ছাগল ও পাখিদের নিজেদের ভেতর মানুষের মতোই মিলন থেকে নতুন জীবন এসেছে যা মানুষের জীবনকে টেকসই করতে সহায়তা করেছে। জীবনকে উদযাপনের এই উর্বরতার নিঃসরণ হচ্ছিলো পৃথিবী থেকে কিংবা মানুষ ও প্রাণিশরীরের দুই উরুর মাঝ থেকে। মানবজীবন নিজেই ছিল এক রহস্য। জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং মৃত্যু; কিন্তু অনেকগুলো পর্যায়ের মাধ্যমে। তাই সেখানে ছিল জন্ম, খাতনা কিংবা বেড়ে ওঠা ও দায়িত্ব, বিয়ে এবং মৃতের সৎকার উপলক্ষ্যে বিভিন্ন প্রথা ও আনুষ্ঠানিকতা।

 

কিন্তু সেখানে ছিল প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা, ছিল খরা ও বন্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও মৃত্যু। সম্প্রদায়গুলোকে তৈরি করতে হতো কূপ ও দেয়াল। কিন্তু ঈশ্বরের প্রয়োজন প্রায়শ্চিত্ত। আরও আরও প্রথা, আরও আরও আনুষ্ঠানিকতা। আত্মা ও ঈশ্বর অবশ্যই অদৃশ্যমান ছিল কিন্তু মুখোশ পরে তাদের উপস্থাপন করা যেত। কাজ ও উদযাপনের মাধ্যমে প্রকৃতিকে মিত্রে পরিণত করা যেত।

 

কিন্তু দেখুন মানুষের নিষ্ঠুরতা। একটি সম্প্রদায়ের গবাদি পশুরূপী সম্পদ কেড়ে নেয়ার জন্যে আসতো শত্রুরা। ফলে নিজেদের অধিকার পুনরায় আদায় করে নেয়ার জন্যে লড়াই করতে হতো। বর্শা ও যোদ্ধা দীর্ঘজীবী হোক। দীর্ঘজীবী হোক তারা যারা তাদের সম্প্রদায়কে রক্ষা করেছে শত্রুদের থেকে। জয়ী যোদ্ধারা ফিরে আসতো প্রথা ও উদযাপনে। নাচ ও গানে যুদ্ধের দৃশ্যগুলোকে ফুটিয়ে তোলা হতো। যারা সেখানে নেই তাদের চিত্রায়িত করা হতো। এর ফলে যোদ্ধারা তাদের মহিমাকে পুনর্যাপন করতো সম্প্রদায়গত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে। এসবে শত্রুদের চিত্রায়নও থাকতো খারাপ লোক, চোর, অলস হিসেবে। সম্প্রদায়গত কল্যানের জন্যে যা হুমকি, তেমন বিষয়কেও কোরাসের মাধ্যমে গল্পে ফুটিয়ে তোলা হতো।

 

কোন কোন নাটক দিবস, সপ্তাহ এমনকি মাসব্যাপী চলতো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় কেনিয়ার আগিকুয়ুদের ইতুইকার কথা, যা প্রতি ২৫ বছর পরপর উদযাপিত হতো এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ক্ষমতা হস্তান্তরকে স্মরণীয় করার জন্যে। কেনিয়াত্তার লেখা ফেয়ারিং মাউন্ট কেনিয়া অনুযায়ী ইতুইকাতে মহাভোজ, নাচ ও গানের মাধ্যমে ছয় মাস ধরে উদযাপন চলতো। নতুন গান ও নাচের মুদ্রা, শব্দ ও ছন্দে নতুন সরকারের আইন ও নীতিমালাগুলোকে ফুটিয়ে তোলা হতো। একটি নাটকীয় শোভাযাত্রার মাধ্যমে ইতুইকা কিভাবে বর্তমান অবস্থায় এলো তা স্মরণ করা হতো। নাচ, গান ও সময়োপযোগী মূকাভিনয়ই ছিল এসব নাটকীয় শোভাযাত্রার একেবারে কেন্দ্রীয় বিষয়।

 

উপনিবেশ পূর্ব কেনিয়ায় নাটক কোন ধরনের বিচ্ছিন্ন বিষয় ছিল না। এটি ছিল সম্প্রদায়গত দৈনন্দিন ও মৌসুমী জীবন ছন্দের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ছিল একটি কাজের ভেতর করা আরেকটি কাজ, যেখানে প্রায়শই ঐ অন্য কাজের ভেতর থেকেই কর্মশক্তি গ্রহণ করা হতো। বিষয়ের সাথে জড়িত থেকে উপভোগের মতো বিনোদন ছিল এগুলো। এগুলো ছিল নৈতিক নির্দেশনা এবং জীবন-মৃত্যু এবং সম্প্রদায়গতভাবে টিকে থাকার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসব নাটক কোন ভবনের ভেতর উপস্থাপন করা হতো না। এগুলো যে কোন স্থানে উপস্থাপিত হতে পারতো, যে কোন খোলা জায়গায় (পিটার ব্রুকের থেকে ধার করা শব্দ, ‘খোলা জায়গা’) প্রচুর মানুষের ভেতর, যা ছিল এই ঐতিহ্যের অংশ।

 

চার

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা ওই ঐতিহ্যটিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। মিশনারিরা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় উদ্দীপনা থেকে এসব ঐতিহ্যকে শয়তানের কাজ হিসেবে দেখেছিল। বাইবেলকে স্থানীয়দের হৃদয়ে আন্দোলিত করার আগে এসব বিষয়ের সাথে লড়াই অনিবার্য ছিল। ঔপনিবেশিক প্রশাসনও এসব বিষয়ে সহায়তা করেছিল। স্থানীয়দের যে কোন জমায়েতের জন্যে লাইসেন্সের প্রয়োজন হতো। উপনিবেশ তার বাইবেলের বক্তব্যকে ভয় পেতো, যেখানে বলা হয়েছিল কোথাও দুই বা তিনজন জড়ো হলে ঈশ্বর তাদের ক্রন্দন শুনে থাকেন! কেন তারা উপরে থাকা ঈশ্বর বা স্থানীয়দের ঈশ্বরকে মানুষের ক্রন্দন শুনতে দিবে? এ ধরনের বহু আনুষ্ঠানিকতা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যেমন ১৯২৫ সালে নিষিদ্ধ করা হয় ইতুইকা। ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ সালের মাও মাও সংগ্রামের সময় এই নিষেধাজ্ঞা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছিল। এসময় পাঁচজনের বেশি মানুষের জমায়েতকে গণজমায়েত মনে করা হতো ও এজন্যে প্রয়োজন হতো লাইসেন্সের। মিশনারি ও ঔপনবেশিক প্রশাসন উভয়েই বিদ্যালয় ব্যবস্থাকে ব্যবহার করেছিল মানুষের ভেতরের ‘খোলা জায়গা’ ধারণাকে ধ্বংস করার জন্যে। এজন্যে তারা এসব বিষয়কে সরকারি নজরদারিসম্পন্ন শহুরে কমিউনিটি হল, বিদ্যালয়ের হলরুম, চার্চ এবং মঞ্চ রয়েছে এমন প্রকৃত থিয়েটার ভবনগুলোতে বন্দি করতে চেয়েছিল। ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ সালের ভেতর এই ‘খোলা জায়গা’ ধারণাকে কারাগার ও বিনা বিচারে আটকদের কেন্দ্রগুলোতে বন্দি করা হয়। এসব জায়গায় রাজনৈতিক ও অন্যান্য বন্দিদেরকে উপনিবেশপন্থি ও মাও মাও বিরোধী হীনমন্য প্রোপাগান্ডামূলক নাটক মঞ্চস্থ করার জন্যে উৎসাহিত করা হতো।

 

সামাজিক হলগুলোতে সংক্ষিপ্ত নাটক ধরনের কনসার্টকে উৎসাহিত করা হতো। এসবে থাকতো খুব সরল প্লট, প্রায়ই এতে দেখা যেত সাদাসিধা কৃষককে যে কিনা পুরোপুরি হতবুদ্ধ হয়ে গিয়েছে প্রথমবার বড় শহরে এসে এবং এর আধুনিক জীবনের জটিল বিষয়গুলো দেখে। এতে দেখা যেত সেই নির্বোধ কৃষক টেলিফোন বুথে গিয়ে ফোনকে বলছে তার আত্মীয়দের কাছে টাকা পৌঁছে দিতে আর সেই বুথেই এজন্যে টাকার বান্ডিল রেখে আসছে। আর অবশ্যই দেখা যেত আইনের অনেক লম্বা হাত (!) যেখানে বড় বড় আপরাধীদের ধরে শহরে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হতো। বিদ্যালয় ও চার্চগুলোতে সবচেয়ে জনিপ্রিয় ছিল অপব্যয়ী ছেলে ও স্থানীয় সত্তা বিষয়ে ধর্মীয় থিয়েটারগুলো। তবে বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি নাটকও প্রযোজিত হতো। অ্যালায়েন্স হাই স্কুলে শেক্সপিয়ারের স্পিচ ডে-তে আমি উপস্থিত থেকেছিলাম, যা ছিল বার্ষিক আয়োজন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৮ সালের ভেতর আমি দেখেছিলাম অ্যাজ ইউ লাইক ইট, হেনরি ফোর পার্ট ওয়ান, কিং লিয়ার এবং মিডসামার নাইটস ড্রিম। পঞ্চাশের দশক জুড়ে, ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং সরকার দ্বারা উপনিবেশব্যাপী নিয়োজিত ড্রামা অ্যান্ড মিউজিক অফিসার কর্তৃক বার্ষিক স্কুল ড্রামা ফেস্টিভালের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ড্রামাগুলোকে একটি ব্যবস্থার ভেতর নিয়ে আসা হয়েছিল। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালের ভেতর মোমবাসা, নাইরোবি, নাকুরু, কিসুমু, কিতালে, এলডরেতের মতো বড় শরগুলোতে ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রিত থিয়েটার ভবন তৈরি হয়েছিল। এসব থিয়েটার শেক্সপিয়ার ও জর্জ বার্নার্ড শ-র সাথে সাথে পশ্চিমা কমেডি ও মধুমাখা সঙ্গীত আয়োজনে বিশেষায়িত ছিল। এর ভেতর সবচেয়ে বিখ্যাত দুইটির একটি হলো পুরোপুরি পেশাদার নাইরোবির ডনোভান মৌল থিয়েটার। অন্যটি হলো ভবিষ্যতের বহুনৃতাত্ত্বিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে ঔপনিবেশিক সরকারের প্রতিষ্ঠা করা কেনিয়া ন্যাশনাল থিয়েটার। ১৯৬৩ সালের স্বাধীনতা থিয়েটার বিষয়ে স্ট্যাটাস কো বদলায় নি। ‘খালি জায়গা’ আগের স্থানগুলোতেই বন্দি ছিল। অ্যানি গেট ইয়োর গান, বোয়িং বোয়িং, জিসাস ক্রাইস্ট সুপারস্টার, ডেসপারেট ফ্লাওয়ার্স এবং অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড-এর মতো পশ্চিমা গীতিপ্রধান আধেয়গুলো প্রবাসী অধ্যুষিত পেশাদার, অর্ধ-পেশাদার ও অপেশাদার থিয়েটারগুলোতে আগের মতোই চলমান ছিল। তখন একটি এশিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ থিয়েটার ঐতিহ্যও ছিল, তবে তা মূলত কেনিয়ান-এশিয়ান সম্প্রদায়ের সামাজিক হল ও বিদ্যালয়ের গণ্ডিতেই আবদ্ধ ছিল।

 

ঔপনিবেশিক শাসন বেতার নাটককেও উৎসাহিত করেছিল যেখানে আফ্রিকানদের দেখানো হতো ভাঁড় হিসেবে। যদি আফ্রিকানদের তাদের নিজেদের নির্বুদ্ধিতা এবং সরলতা দেখিয়ে হাসানো যায় তাহলে হয়তো তাদেরকে মাও মাও, স্বাধীনতা কিংবা এ ধরনের বিষয়গুলো ভুলিয়ে দেয়া যাবে! কিপাঙ্গা ও আরো কিছু আফ্রিকান কমেডিয়ান এসব নাটকের চারপাশে জড়ো হয়েছিলেন।

 

স্বাধীনতার সাথে সাথে বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও বেশি বেশি স্নাতক যোগ দিতে থাকলো এবং ধীরে ধীরে এক ধরনের বিদ্রোহ তৈরি হলো। যদিও তখন পর্যন্ত এই বিদ্রোহ মূলত বিদ্যালয়ের চার দেয়াল, সামাজিক হল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ এবং ইংরেজি ভাষার সীমানাতেই আবদ্ধ ছিল। থিয়েটার বিষয়ে আফ্রিকান পেটি-বুর্জোয়াদের এই বিদ্রোহের শেকড় গাঁথা ছিল পঞ্চাশের দশকে অ্যালায়েন্স হাই স্কুল, থিকা, মাং’গু, কাগুমো ও অন্যান্য নামকরা বিদ্যালয়ে শেক্সপিয়ার ও জি. বি. শ-এর বিপরীতে কিশওয়াহিলি ভাষায় লিখিত চিত্রনাট্যগুলোতে। অ্যালায়েন্স হাই স্কুলে ছিল হেনরি কুরিয়ার (তিনি কিয়ামবু সঙ্গীত উৎসবেরও আয়োজক ছিলেন) নাকুপেন্দা লাকিনি (১৯৫৪); কিমানি নায়োইকের মাইশা নি নিনি (১৯৫৫); গেরিশন নগুগির নিমেলোগওয়া নিসিওয়ে না এমপেনজি (১৯৫৬); বি. এম. কুরুতুর আতাকিওয়া না পোলিসি (১৯৫৭)। এগুলো সবই মঞ্চায়িত হয়েছিল নাকুরুর মেনেনগাই সোশ্যাল হলে, যা ছিল ঔপনিবেশিক সেটেলারদের মূল ভূমি।

 

তবে ষাটের দশক ও সত্তরের দশকের প্রথম দিকের বিদ্রোহগুলোতে আরও জাতীয়তাবাদী বৈশিষ্ট্য ছিল। ভয়েজ অব কেনিয়া বেতার ও টেলিভিশন, কেনিয়া ন্যাশনাল থিয়েটার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিনয়শিল্পীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার সাথে সাথে ফ্রান্সিস ইমবুগা, কেনেথ ওয়াতেনে কিবাওয়ানা ও মিকেরে মুগোর মতো কেনিয়ান নাট্যকার এবং সেথ আদাগালা, তিরুস গাথওয়ে, ওয়াইগওয়া ওয়াচিরা ও ডেভিড মুলওয়ার মতো কেনিয়ান পরিচালকরা বের হয়ে এসেছিল। জন রুগান্ডা ও জন ডে গ্রাফটের মতো আফ্রিকান অন্যান্য দেশের পরিচিত নাট্যকাররা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের অনুরূপ কাজ করা কেনিয়ানদের শক্তিশালী করেছিল। অপেশাদার থিয়েটার কো¤পানি গড়ে উঠেছিল। তাদের কতকগুলো মাত্র দিনকতক টিকে ছিল। কিন্তু দ্য ইউনিভার্সিটি প্লেয়ার্স ও মিম্বি ওয়া মাইনার তামাদুনি প্লেয়ার্স দীর্ঘ সময় টিকে ছিল। নিয়মিত প্রযোজনা, প্রাসঙ্গিকতার খোঁজে চলমানতা ও পেশাদারিত্বের দিক থেকে তামাদুনি প্লেয়ার্স ছিল সবচেয়ে ধারাবাহিক।

 

এই বিদ্রোহের নানারকম ধরন ছিল। একটি ছিল নাটক লেখা, পরিচালনা ও অভিনয়ে আফ্রিকান নিখুঁত পেটি-বুর্জোয়াদের জোরালো উপস্থিতি। নাটকের বিষয়ের মাধ্যমে এই বিদ্রোহ একই সাথে আগের চেয়ে আরও বেশি জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিক, উপনিবেশ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রূপ নিচ্ছিলো। এই ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিত হয়েছিল মিকেরে মুগো ও নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গোর দ্য ট্রায়াল অব দেদান কিমাথি নাটকে যা প্রযোজনা করেছিল কেনিয়া ফেস্তাক ৭৭ ড্রামা গ্রুপ। একই গ্রুপ দ্বারা নাইরোবি ও লাগোসে পরিবেশিত ফ্রান্সিস ইমবুগার নাটক বিট্রেয়াল ইন দ্য সিটি-তে বিদ্রোহের ধরনটি দেখা গিয়েছিল দেশের আভ্যন্তরীন বিন্যাসের তীক্ষè সমালোচনার মাধ্যমে।

 

তবে এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিদ্রোহ ছিল কেনিয়ান ন্যাশনাল থিয়েটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। পঞ্চাশের দশকে থিয়েটারটি স্থাপিত হয়েছিল ব্রিটিশদের দ্বারা। তখন থেকে এটি ব্রিটিশ পরিচালক ও ব্রিটিশ অপেশাদার দলগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯৬৩ সালে কেনিয়া তার নিজের জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা পেলেও এই থিয়েটার প্রবাসী ব্রিটিশ সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণেই থেকে গিয়েছিল। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র প্রবাসীদের একটি পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে এটি কাজ করতো যেখানে ব্রিটিশ কাউন্সিলের একজন প্রতিনিধি থাকতো। এই নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিবাদ এসেছিল বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক পেটি-বুর্জোয়াগোষ্ঠী থেকে এবং তা সমর্থন পেয়েছিল কিছু দেশিপ্রেমিক সাংবাদিকদের যারা এই কাউন্সিল ও এর স্বৈরতন্ত্রের বিপরীতে কেনিয়াকরণের ডাক দিয়েছিলেন। বিদেশি স্বার্থরক্ষাকারী হিসেবে কেনিয়া কালচারাল সেন্টারের নিন্দা করে ১৯৭০ সালে সাহিত্য বিভাগের কর্মীরা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এই বিবৃতি ছিল সারা দেশে সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের বিরোধিতার সাংস্কৃতিক প্রতিফলন। আফ্রিকান থিয়েটারের জন্যে আরও বেশি দিন ও সপ্তাহ বরাদ্দ করার দাবিও উঠেছিল। এসব পার¯পরিক ঘৃণামূলক বিতর্কের ফল হিসাবে ১৯৭৬ সালে বর্ণবাদী সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছিল যখন একজন শ্বেতাঙ্গ নারীর নাক রক্তাক্ত হয়েছিল আরেকজন আফ্রিকান অভিনেতাকে জারজ বলার পর। এরপর সেখানে পুলিশ এসেছিল কিন্তু সেই নারীটি তাকে আঘাত করা ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারেন নি কারণ তার কাছে সব আফ্রিকান চেহারাই একই রকম লেগেছিল। আমাকে ও কেনিয়া ফেস্তাক ৭৭ ড্রামা গ্রুপের পরিচালক সেথ আদাগালাকে পরে সিআইডি সদরদপ্তরে তলব করা হয়েছিল। আমাদের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় অপেশাদার গ্রুপের নেতাদের অভিযোগ ছিল যে আমরা তাদের থিয়েটারের সফলতার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছি, যা ছিল একেবারেই অসত্য। তবে একটি জাতীয় থিয়েটারের ধারণা, গঠনতন্ত্র ও অন্যান্য প্রশ্নে সংগ্রামটি আরেকটি বিতর্ক তৈরি করেছিল। এটি কি একটি ভবন মাত্র? এটি কি এর স্থানিক অবস্থান? এটি কি এখানে পরিবেশিত নাটকের ধরন? নাকি এটি শুধুমাত্র পরিচালক ও প্রশাসনিক কর্মীদের গায়ের রঙ?

 

কোন কোন দলের আবার অন্য পছন্দ ছিল। এর ভেতর ছিল বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার, মূলত মিলনায়তনের প্রথম সারির সমান উচ্চতায় প্রশস্ত কিন্তু অগভীর একটি শিক্ষামূলক লেকচার হল। এসব থিয়েটার থেকে সত্তরের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষামূলক প্রযোজনা এসেছিল। এডুকেশন থিয়েটার টু নামে দাপ্তরিকভাবে পরিচিত এসব থিয়েটার হয়ে দাঁড়িয়েছিল সরকারি মালিকানাধীন কিন্তু বিদেশি দ্বারা পরিচালিত কেনিয়া ন্যাশনাল থিয়েটার অ্যান্ড কালচারাল সেন্টারের বিকল্প। মুমবি ওয়া মাইনা ও অন্যান্য অক্লান্ত পরিচালকদের অধীনে এখানে তামাদুম ও অন্যান্য গ্রুপ একের পর এক নতুন ধরনের নাটক উপস্থাপন করেছিল।

 

পূর্বে স্কুল ড্রামা ফেস্টিভাল ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রবাসী কর্তাদের নিয়ন্ত্রণে। এখন তা আনা হয়েছিল প্রথম কেনিয়ান আফ্রিকান নাটক ও সাহিত্যবিষয়ক কর্মকর্তা ওয়াসামবো ওয়েরের নিয়ন্ত্রণে। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই উৎসব (যা টিচার্স ট্রেইনিং কলেজেও আলাদাভাবে কিন্তু একই ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত হয়) এখন আগের চেয়ে আরও বেশি জাতীয়তাবাদী হয়ে উঠছিল এর বিষয়ের প্রেক্ষাপটে। ইউনিভার্সিটি অব নাইরোবি থেকে আগের চেয়ে বেশি বেশি স্নাতক বেরিয়ে এসে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যোগ দেয়া ও নাটকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসাই ছিল এর পেছনের কারণ। নতুন অফিসারের অধীনে এই উৎসব তার অতীত থেকে অনেক সরে আসলো। এই উৎসবের স্থান কেনিয়া ন্যাশনাল থিয়েটার থেকে কাকামেগা নামের এক প্রান্তিক স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর থেকে উৎসব বিভিন্ন প্রদেশে আয়োজিত হবে এবং বিজয়ী নাটক সারা দেশে পরিবেশিত হবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। থিয়েটারের প্রকাশভঙ্গির মূল ভাষা হিসেবে ইংরেজির পরিবর্তে কিশওয়াহিলি ধীওে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল।

 

ইউনিভার্সিটি অব নাইরোবির সাহিত্য বিভাগ তাদের নিজস্ব ভ্রাম্যমান থিয়েটার শুরু করেছিল। শিক্ষার্থীরা শহুরে ও গ্রামীণ কমিউনিটি সেন্টার ও বিদ্যালয়গুলোতে দারুণ অভ্যর্থনা পেয়েছিল। অন্যান্য বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়েও এমন ছোট ছোট থিয়েটার গ্রুপ তৈরি হয়েছিল। শুরু থেকে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সাধারণ মানুষের প্রধানতম ঝোঁক ছিল থিয়েটারে।

 

পেছন ফিরে তাকালে এটি স্পষ্ট দেখা যায় যে, সত্তরের দশকের প্রথম দিকে কেনিয়ার থিয়েটার সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিল। এসব ঐতিহ্যের প্রধানতম প্রতীক ছিল ইউরোপীয় অধ্যুষিত কেনিয়া ন্যাশনাল থিয়েটার (যদিও শাসক শ্রেণি কর্তৃক সহায়তাপ্রাপ্ত), নাইরোবির দ্য ডনোভান মৌল এবং বড় বড় শহরে এ ধরনের কেন্দ্রগুলো।

 

বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থাকা পেটি-বুর্জোয়া ভিত্তিই তখনও পর্যন্ত এর প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল। এসব স্থান থেকেই অভিনয় শিল্পী, পরিচালক ও নাটকের সিংহভাগ আসতো। সবচেয়ে বড় কথা হলো যেসব সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহ্যকে এগুলো ভাঙতে চাইতো সেসব ঐতিহ্যই ছিল এদের সীমাবদ্ধতা। তখনও পর্যন্ত বিদ্রোহ ও ঘোষণার মূল মাধ্যম ছিল ইংরেজি। সবচেয়ে রেডিক্যাল মৌলিক পাণ্ডুলিপিটিও পেটি-বুর্জোয়া অবস্থান থেকে লেখা হতো। আর তখনও পর্যন্ত থিয়েটার বন্দি ছিল চার দেয়ালের মাঝে। বদ্ধ দেয়াল ও আনুষ্ঠানিক থিয়েটারের পর্দার বাইরে থিয়েটারকে গ্রামীণ ও শহুরে কমিউনিটি হলে নিয়ে যাওয়ার সকল চেষ্টারই উদ্দেশ্য বা ধারণা ছিল মানুষের কাছে থিয়েটারকে পৌঁছে দেয়া, সাধারণ মানুষকে থিয়েটারের ঐশ্বর্যের স্বাদ দেয়া। থিয়েটার নিয়ে মানুষের কোন ঐতিহ্য ছিল না। সাধারণ মানুষকে উন্নতির ছোঁয়া দেয়ার জন্যে — বিশেষত যদি তারা তা পাওয়ার জন্যে যথাযথ আচরণ করে — থিয়েটার নিয়ে সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মানুষের কাছে থিয়েটারকে পৌঁছে দেয়ার দর্শন ছিল অভিন্ন।

 

কিন্তু প্রধানত সাম্রাজ্যবাদই কৃষকশ্রেণির প্রথা ও উদযাপনে থিয়েটারের যে শেকড় ছিল, সেই জাতীয় ঐতিহ্যের মুক্ত বিকাশকে থামিয়ে দিয়েছিল। আফ্রিকান থিয়েটারের আসল ভাষা খুঁজে পাওয়া সম্ভব শুধুমাত্র এবং বিশেষত আফ্রিকান কৃষকদের জীবন, ইতিহাস ও সংগ্রামে।

 

সূত্র

১. ব্যক্তিমালিকানাধীন ছোট বাস — অনুবাদক।
২. আরও দেখা যেতে পারে নগুগি ওয়া মিরির অন লিটারেরি কনটেন্ট, ওয়ার্কিং পেপার নং ৩৪০, আইডিএস, নাইরোবি, এপ্রিল ১৯৭৯। তিনি কামিরিথু কমিউনিটি এডুকেশন অ্যান্ড কালচারাল সেন্টারে গ্রামীন সমাজের শ্রেণি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাহিত্যিক বিষয় নিয়ে তাঁর আলোচনা করেছেন — লেখক।
৩. জোমো কেনিয়াত্তা, ফেসিং মাউন্ট কেনিয়া, লন্ডন, ১৯৩৮ — লেখক।
৪. আফ্রিকান থিয়েটার নিয়ে একটি আলোচনায় পিটার ব্রুকের শিরোনাম দ্য এম্পটি স্পেস ও আফ্রিকান সাহিত্য চর্চার ভেতর তুলনার জন্যে আমি ওয়াসামবো ওয়েরের কাছে ঋণী। আলোচনাটি হয়েছি ১৯৮৩ সালে লন্ডনে — লেখক।

 

(চলবে)

1 COMMENT

  1. ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বেরিয়ে আসতে শিক্ষা বিস্তার অপরিহার্য ছিল। দরিদ্র শ্রেণির প্রতি বঞ্চনার একটা সুন্দর চিত্র ভেসে উঠেছে। ‘প্রোলেতারিয়েৎ’ শব্দটা মুখ্য শব্দের অন্তর্ভুক্ত হতেই পারে। লেখাটা সম্পাদনার স্পর্শ বঞ্চিত।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here