মৃত্যুদেবতা : ৩

ইয়াসমিনা রেজা ফরাসি নাট্যকার, অভিনেত্রী, ঔপন্যাসিক ও চিত্রনাট্যকার। তাঁর বিখ্যাত নাটক ``লা দিয়েউ দু কার্নেজে''র ইংরেজি অনুবাদ ``গড অফ কার্নেজে''র বাংলা অনুবাদ করেছেন জাহিন জামাল।

তৃতীয় কিস্তি

চরিত্র

ফারহান ফেরদৌস

আনিকা রাশিদ

প্রত্যয় সাহান

মিথিলা মৃন্ময়ী

প্রত্যেকেই চল্লিশোর্ধ

 

 

প্রত্যয় আপনি কি ওয়াশরুম ব্যবহার করতে চান?

 

আনিকা (ফারহানকে) তোমার পা ধরে কেউ বলছে না এখানে থাকো!

 

মৃন্ময়ী না, না, কেউ তাকে বাধ্য করছে না এখানটায় থাকতে।

 

আনিকা আমার মাথা ঘুরাচ্ছে!

 

ফারহান একটা নির্দিষ্ট পয়েন্টের দিকে তাকিয়ে থাকো। দেখবে ঠিক হয়ে যাবে।

 

আনিকা যাও এখান থেকে, যাও। একা থাকতে দাও আমায়।

 

মৃন্ময়ী ওয়াশরুমে নিয়ে গেলেই বোধ হয় ভালো হতো।

 

ফারহান ওয়াশরুমে যাও না। বমি যদি এসেই থাকে তাহলে ওয়াশরুমে যাওয়াটাই ভালো।

 

প্রত্যয় মৃন্মো, উনাকে পেপটো-বিসমল দেয়াটাই বোধ হয় ভালো হবে।

 

ফারহান ভাপা পিঠা খাওয়াতে এমন হচ্ছে না তো?

 

মৃন্ময়ী এটা গতকাল রাতে বানানো!

 

আনিকা (ফারহানকে) ডোন্ট টাচ মি, আই সেইড ডোন্ট টাচ মি!

 

ফারহান মাথাটা একটু ঠাণ্ডা করো কুটকুট…

 

প্রত্যয় প্লিজ, যেখানে কিছুই হয়নি সেখানে এতো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি না করি আমরা।

 

আনিকা ও মনে করে বাড়ি, বাচ্চাদের স্কুল আর বাগান এগুলো শুধুই আমার কাজ।

 

ফারহান না আমি এটা মনে করি না।

 

আনিকা হ্যাঁ, তুমি তাই মনে করো। আর আমি এও জানি কেন তুমি এটা মনে করো। কারণ এগুলো সবই ভয়ঙ্কর, খুব, খুব, খুবই ভয়ঙ্কর।

 

মৃন্ময়ী আপনি যদি তাই মনে করেন তাহলে বাচ্চা নিয়েছিলেন কেন?

 

প্রত্যয় হয়তো রামিন আপনার অনাগ্রহটা টের পায়।

 

আনিকা কীসের অনাগ্রহের কথা বলছেন আপনি?

 

প্রত্যয় আপনি তো এইমাত্রই বললেন…(আনিকা ভয়ঙ্করভাবে বমি করে। বমির বেশ বড় একটা অংশ অ্যালানের গায়ে পড়ে। কফি টেবিলের উপর থাকা আর্ট বইও বমিতে ভিজে যায়।) ডিশপ্যান নিয়ে এসো, যাও, তাড়াতাড়ি…! (মৃন্ময়ী দৌড়ে ভেতরে ডিশপ্যান খুঁজতে যায়। প্রত্যয় টেবিলের উপর থাকা ট্রে-টা আনিকার দিকে এগিয়ে দেয়, যদি কাজে লাগে। আনিকা আবার বমি করার চেষ্টা করে কিন্তু কিছু বের হয় না।)

 

ফারহান তখনই বলেছিলাম ওয়াশরুমে যাও, কুটকুট। নাও এখন হলো তো। কী বিশ্রী ব্যাপার! ধ্যাৎ!

 

প্রত্যয় আপনার স্যুটইতো বড় অংশটা খেয়ে নিয়েছে।

(এর মাঝে মৃন্ময়ী একটি বেসিন এবং কাপড় নিয়ে দৌড়ে প্রবেশ করে। সে বেসিনটি আনিকার দিকে এগিয়ে দেয়।)

 

মৃন্ময়ী যাই হোক, ভাপা পিঠার জন্য যে বমি হয়নি, এটা নিশ্চিত।

 

প্রত্যয় না, না, ভাপা পিঠা না…স্নায়বিক কারণে হয়েছে। ক্লিয়ারলি স্নায়বিক।

 

মৃন্ময়ী আপনি কি ওয়াশরুমে গিয়ে পরিষ্কার হতে চান? ওহ শিট! কোকোশকা…ওহ মাই গড…আমার কোকোশকা! (আনিকা আবার বমি করে। এবার বেসিনে।)

 

প্রত্যয় উনাকে কিছু পেপটো-বিসমল দাও না।

 

মৃন্ময়ী এখন না। এখন কিছুই আর পেটে রাখতে পারবেন না।

 

ফারহান ওয়াশরুমটা কোন দিকে?

 

মৃন্ময়ী আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।

(ফারহান ও মৃন্ময়ী বের হয়ে যায়)

 

প্রত্যয় নার্ভের কারণে এমনটা হচ্ছে। ভয় থেকে হয়েছে। ভুলে যাবেন না আনিকা, চান-বা-না-চান আপনি একজন মা। আমি বুঝতে পারছি কেন আপনি এতোটা ডেসপারেট হয়েছেন।

 

আনিকা হু…

 

প্রত্যয় আমি সবসময়ই বলি যা আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে সেটাকে আপনি কখনো নিয়ন্ত্রণ করতে যাবেন না।

 

আনিকা হু…

 

প্রত্যয় আমার ক্ষেত্রে এটা সার্ভিকেল ভার্টেব্রি। মাঝে মাঝে এটা জাস্ট সিজ করে আমাকে।

 

আনিকা হু… (সে আরেকটু বমি করে। মৃন্ময়ী আরেকটি বেসিনভর্তি পানি আর এক টুকরো স্পঞ্জ নিয়ে প্রবেশ করে)

 

মৃন্ময়ী কোকোশকাকে কি করা যায় বলো তো?

 

প্রত্যয় ও আচ্ছা, কোকোশকা! মি. ক্লিন দিয়ে আমি ধুয়ে দিতে পারি।…কিন্তু সমস্যাটা হলো শুকাবো কি করে! আরেকটা কাজ করা যায়…স্পঞ্জ দিয়ে উপর থেকে ময়লাটা সরিয়ে পার্ফিউম স্প্রে করে দিতে পারো।

 

মৃন্ময়ী পার্ফিউম?

 

প্রত্যয় হ্যাঁ, পার্ফিউম। আমার ঐ কুরোসটা ইউজ করতে পারো। আমি ওটা কখনো ব্যবহার করিনি।

 

মৃন্ময়ী নাহ্…সব পৃষ্ঠাগুলো জাপটে যাবে।

 

প্রত্যয় আচ্ছা তাহলে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে ব্লো করলে হয়তো সোজা হয়ে যাবে। তারপর আমরা ছবিটাকে অন্য বইগুলোর মাঝে রেখে দিলাম। এতে কাজ হবে মনে হয়। অথবা আয়রন করে ফেলা যেতে পারে। ঐ যে ভেজা টাকা আয়রন করে না, ওভাবে।

 

মৃন্ময়ী ও মাই গড!

 

আনিকা আমি আপনাকে আরেকটা কিনে দেবো।

 

মৃন্ময়ী আপনি পাবেন না এটা। এই প্রিন্টটা মার্কেট আউট হয়ে গেছে বহু বছর আগে।

 

আনিকা আমি খুবই দুঃখিত…

 

প্রত্যয় এটা ঠিক করে ফেলা যাবে। দেখি আমাকে দাও, মৃন্মো।

(মৃন্ময়ী বিরক্তি নিয়ে বেসিনভর্তি পানি আর স্পঞ্জটা মাইকেলের হাতে দেয়। প্রত্যয় বইটা পরিষ্কার করতে শুরু করে।)

 

মৃন্ময়ী এটা ১৯৫৩ সালের লন্ডন এক্সিবিশনের একটা ক্যাটালগের রিপ্রিন্ট।

 

প্রত্যয় হেয়ার ড্রায়ারটা নিয়ে এসো না। আর কুরোসটাও। ওয়াশরুমের ক্লসেটে আছে।

 

মৃন্ময়ী উনার হাজব্যান্ড ওয়াশরুমটা ব্যবহার করছেন।

 

প্রত্যয় হা..হা..হা.. উনি তো আর ন্যাংটো হয়ে পরিষ্কার করছেন না, নাকি? (মৃন্ময়ী বের হয়ে যায়। প্রত্যয় বই পরিস্কার করতে থাকে।) উহু, এই অংশটুকুর অবস্থা সবচে খারাপ। তুন্দ্রা অঞ্চলের জনগণকে আরো ভালো করে পরিস্কার করতে হবে। আমি আসছি। (প্রত্যয় বেসিনটা নিয়ে বের হয়ে যায়। একটুপর একই সময়ে মৃন্ময়ী আর প্রত্যয় প্রবেশ করে। মৃন্ময়ীর হাতে পার্ফিউমের বোতল আর প্রত্যয়ের হাতে এক বেসিন পরিস্কার পানি। প্রত্যয় বইটা পরিস্কার করা শেষ করে।)

 

মৃন্ময়ী (আনিকাকে) একটু ভালো লাগছে কি এখন?

 

আনিকা হ্যাঁ আগের চেয়ে ভালো।

 

মৃন্ময়ী এখন কি স্প্রে করবো?

 

প্রত্যয় হেয়ার ড্রায়ারটা কোথায় গেল?

 

মৃন্ময়ী উনার শেষ হলে নিয়ে আসবেন।

 

প্রত্যয় তাহলে তো তার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। কুরোস সবশেষে স্প্রে করতে হবে।

 

আনিকা আচ্ছা ওয়াশরুমটা কি আমি একটু ব্যবহার করতে পারবো?

 

মৃন্ময়ী হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই, কেন নয়!

 

আনিকা আমি খুবই দুঃখিত। আসলে আমি বোঝাতে পারছি না।

(মৃন্ময়ী আনিকাকে নিয়ে বাইরে যায়, প্রায় সাথে সাথেই আবার ফিরে আসে)

 

মৃন্ময়ী কী হচ্ছে কী এসব বলো তো! অদ্ভুত!

 

প্রত্যয় আর একটা কিছু বললেই এই ভদ্রলোকের খবর ছিল!

 

মৃন্ময়ী আর এই মহিলাও তো ভয়াবহ!

 

প্রত্যয় অতোটা খারাপ নয়।

 

মৃন্ময়ী ভড়ং আছে প্রচুর।

 

প্রত্যয় কিন্তু হাজব্যান্ডের মতো অতোটা বিরক্তিকর নয়।

 

মৃন্ময়ী এরা দুজনই ভয়াবহ! তুমি বারবার উনাদের পক্ষ নিচ্ছিলে কেন? (টিউলিপের উপর স্প্রে করে)

 

প্রত্যয় আমি আবার কখন ওদের পক্ষ নিলাম! কি বলছো এসব!

 

মৃন্ময়ী তুমি তো দু’দিকেই টানছিলে।

 

প্রত্যয় নাহ্…কক্ষনো না!

 

মৃন্ময়ী অবশ্যই তুমি দু’দিকেই টানছিলে। গ্যাং লিডার ছিলাম, আপনারা আপনাদের বাচ্চাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। আরে ছেলেটা তো সবার জন্য বিপজ্জনক। আর একটা বাচ্চা যখন সবার জন্য বিপজ্জনক তখন এটা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। ধ্যাৎ! সবগুলো বইয়ের উপর বমিটমি করে কি একটা অবস্থা! ছি! (সে কোকোশকার উপর স্প্রে করে)

 

প্রত্যয় (বইয়ের ভেতর নির্দিষ্ট একটা জায়গা দেখিয়ে) তুন্দ্রা অঞ্চলের ঐ মানুষগুলোর উপর বেশি করে স্প্রে করো।

 

মৃন্ময়ী আরে ভাই তোমার যদি বমি পায় তাহলে জায়গামতো গিয়ে করো না! আশ্চর্য!

 

প্রত্যয় …আর ঐ ফউজিতা-র উপরেও…

 

মৃন্ময়ী (সবকিছুর উপর স্প্রে করতে করতে) ডিজগাসটিং!

 

প্রত্যয় দেখলে কেমন বুদ্ধি করে আমি হাউজ ফিটিংসের প্রসঙ্গ এনে কথা ওদিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলাম।

 

মৃন্ময়ী অসাধারণ ছিল!

 

প্রত্যয় ভালো বলেছিলাম, তাই না?

 

মৃন্ময়ী অসাধারণ। বিশেষ করে স্টক ম্যানেজারের অংশটা।

 

প্রত্যয় আস্ত এক বোকাচোদা! বউকে কি বলে ডাকে, শুনেছো?

 

মৃন্ময়ী কুটকুট!

 

প্রত্যয় হ্যাঁ… কুটকুট! হাহাহাহাহা…!

 

মৃন্ময়ী কুটকুট! হাহাহাহাহা…!

 

(দু’জনেই হেসে ওঠে। ফারহান হেয়ার ড্রায়ার হাতে ফিরে আসে)

 

ফারহান হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন, আমি ওকে কুটকুট বলেই ডাকি।

 

মৃন্ময়ী ওহ! আয়্যাম রিয়েলি স্যরি। আমি আসলে ওভাবে বলতে চাইনি। আসলে অন্যদের ডাকনাম নিয়ে ফাজলামো করাটা এতো সহজ আর সিলি। কি বলবো! এই আমরা নিজেদের কি বলে ডাকি যেন? মানে দু’জন দু’জনকে? এরচেয়েও বাজে কিছু, তাই না?

 

ফারহান হেয়ার ড্রায়ারটা কি লাগবে আপনার?

 

মৃন্ময়ী থ্যাংক ইউ।

 

প্রত্যয় থ্যাংক ইউ। (সে হেয়ার ড্রায়ারটা নেয়) আমরা একে অপরকে দার্জিলিং বলে ডাকি, তাই না মৃন্মো? ঐ যে চায়ের মতো। সত্যি বলতে কি এটা আরো ভয়ঙ্কর। (প্রত্যয় হেয়ার ড্রায়ারটা অন করে বইগুলো শুকাতে শুরু থাকে। মৃন্ময়ী ন্যাতানো পৃষ্ঠাগুলো খুলে সোজা করে রাখে।) ধীরে সোজা করে রাখো ওগুলো…ধীরে…

 

মৃন্ময়ী উনি এখন কেমন বোধ করছেন? আগের চেয়ে একটু ভালো কি?

 

ফারহান আগের চেয়ে বেশ ভালো।

 

মৃন্ময়ী খুব বাজে ব্যবহার করেছি তখন। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার।

 

ফারহান না, না, না, একদম না।

 

মৃন্ময়ী ক্যাটালগটা নিয়ে যা বললাম…ছি…ছি…ছি…স্টিম রোলার চালালাম মনে হলো…বিশ^াসই হচ্ছে না আমি এমনটা করেছি।

 

প্রত্যয় পৃষ্ঠাটা উল্টে দাও। হ্যাঁ…এখন একটু টেনে ধরো…পুরোটা লম্বা করে টেনে ধরো।

 

ফারহান ছিঁড়ে যাবে পৃষ্ঠাটা।

 

মৃন্ময়ী হ্যাঁ, ছিঁড়ে যাবে। উনি ঠিক বলেছেন। যথেষ্ট হয়েছে প্রত্যয়। শুকিয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো কেন যে এতো গুরুত্বপূর্ণ, অধিকাংশ সময় আপনি তা বুঝতেই পারবেন না।

(প্রত্যয় ক্যাটালগটা বন্ধ করে। এরপর দু’জন মিলে অন্য ভারি বই দিয়ে এটাকে চাপা দেয়। প্রত্যয় ফউজিতা বইটাও শুকানো শেষ করে। দি পিপল অব দি তুন্দ্রা…ইত্যাদি)

 

প্রত্যয় যাই হোক, কিন্তু প্রশ্ন হলো এই কুটকুট নামটা এলো কোত্থেকে?

 

ফারহান পিঁপড়ের কামড় থেকে!

 

প্রত্যয় জানতাম আমি…ঠিক ঠিক জানতাম। (সে কুকুরের মতো করে ডেকে ওঠে) পিঁপড়ে যেমন কামড়ায়…হাহাহাহাহা…কুটকুট করে…সেখান থেকে! আর আমাদেরটা এসেছে ইন্ডিয়া থেকে। যখন হানিমুনে গিয়েছিলাম তখন। বোকার মতো কাজ, সত্যি বলছি।

 

মৃন্ময়ী আমার বোধ হয় ভেতরে গিয়ে দেখে আসা উচিত কি অবস্থা উনার।

 

প্রত্যয় যাও না দার্জিলিং।

 

মৃন্ময়ী যাবো আমি? …(এর মাঝেই আনিকা ফিরে আসে) ঐ তো চলে এসেছে আনিকা। আমি আপনার কথাই ভাবছিলাম। কী অবস্থা এখন?

 

আনিকা ঠিক আছে বোধ হয়।

 

ফারহান যদি নিশ্চিত না হও তাহলে কফি টেবিলটা থেকে দূরে থাকো।

 

আনিকা টাওয়েলটা আমি বাথটাবে রেখে এসেছি। কোথায় রাখবো বুঝতে পারছিলাম না।

 

মৃন্ময়ী একদম ঠিক আছে।

 

আনিকা আপনারা তো দেখছি সব পরিষ্কার করে ফেলেছেন। আমি সত্যি খুবই দুঃখিত।

 

প্রত্যয় সবকিছু ঠিক আছে। একদম ভাববেন না।

মৃন্ময়ী আমাকে ক্ষমা করবেন আনিকা। আপনার কোনো খেয়ালই রাখতে পারিনি আমি। পুরোটা সময় কোকোশকা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম।

 

আনিকা না, না, এসব নিয়ে একদম ভাববেন না আপনি।

 

মৃন্ময়ী আর যেভাবে আমি রিঅ্যাক্ট করেছি, খুব খারাপ হয়েছে বিষয়টা।

 

আনিকা না, না, এভাবে বলবেন না। (কিছু ব্রিবত মুহূর্ত পর) বাথরুমে হঠাৎই মনে হলো আমার… আমরাই বোধ হয় খুব বেশি…মানে আমি বলতে চাইছি…

 

মৃন্ময়ী হ্যাঁ?

 

প্রত্যয় আহা এতো হেজিটেট করার কিছু নেই আনিকা…বলে ফেলুন না…

 

আনিকা …মানে আমি বলতে চাইছি যে, অপমান তো একধরনের আঘাত, তাই না?

 

প্রত্যয় অবশ্যই আঘাত।

 

মৃন্ময়ী এক্ষেত্রে আমি অবশ্য বলবো এটা নির্ভর করে…ইট ডিপেন্ডস্।

 

প্রত্যয় হ্যাঁ, হ্যাঁ…ইট ডিপেন্ডস্…

 

আনিকা এর আগে রামিন কখনো কোনো সহিংস আচরণ করেনি। কোনো কারণ ছাড়াই সে এমন একটা কাজ করলো এটা বিশ্বাস করা কঠিন।

 

ফারহান হ্যাঁ, ওকে তো গুপ্তচর বলা হয়েছিল! (তার ফোন আবার বেজে ওঠে) আই অ্যাম স্যরি। (আনিকার দিকে ইঙ্গিতে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি করে সে একপাশে সরে আসে) হ্যাঁ…বলেছি তো, যতক্ষণ পর্যন্ত ভিকটিমদের কাছ থেকে কোনো স্টেটমেন্ট না আসে। আমরা কোনো ভিকটিম চাই না। আমি এটাও চাই না যে, তোমার কথা ভিকটিমদের মতো শোনাক।…পুরোপুরি অস্বীকার করবে আর সম্ভব হলে পত্রিকাগুলোকে এক হাত দিয়ে দাও…হ্যাঁ, হ্যাঁ ওরা তোমাকে প্রেস রিলিজটা ফ্যাক্স করবে, সৌমিক। (ফোন রাখে সে) কি বলছিলাম! হ্যাঁ কেউ আমাকে গুপ্তচর বললে আমার তো রাগাণি¦ত হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

 

প্রত্যয় যদি না এটা সত্য হয়ে থাকে।

 

ফারহান কী বললেন আপনি?

 

প্রত্যয় মানে আমি বলছি, ধরুন যে, এটা জাস্টিফায়েড?

 

আনিকা কি? আমার ছেলে গুপ্তচর?

 

প্রত্যয় অবশ্যই না। আমি মজা করছিলাম।

 

আনিকা আপনার ছেলেও সেক্ষেত্রে গুপ্তচর। যেভাবে আপনি বললেন তাতে তাই মনে হচ্ছে।

 

প্রত্যয় কী, কী বলছেন কি আপনি? আমাদের ছেলে গুপ্তচর?

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here