ডিকলোনাইজিং দ্যা মাইন্ড ।। কিস্তি : ৪

নগুগি ওয়া থিওঙ্গো সাহিত্য ও রাজনীতির দুনিয়ায় চেনা একটি নাম। তাঁর বিখ্যাত বই Decolonising the Mind: The Politics of Language in African Literature (1986)। ঔপনিবেশিক রাজনীতি, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি বোঝার দারুণ প্রতিনিধি-পুস্তক এই বই। বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করবেন শিবলী নোমান।

 

আফ্রিকান সাহিত্যের ভাষা

সাত

কিন্তু আফ্রিকান সাহিত্য মৃত্যুর প্রতি অসম্মতি জানিয়েছিল। লাতিনকে জায়গা করে দিয়ে তারা আন্তর্জাতিক কনফারেন্সগুলোতে সাহিত্যিক প্রত্নতত্ত্বের খনন, শ্রেণিবিন্যস্তকরণ এবং তর্কের বিষয় তথা ফসিলে পরিণত হতে চায় নি।

 

আফ্রিকার এসব ভাষা ও জাতীয় ঐতিহ্যগুলো কৃষকশ্রেণির দ্বারাই জীবিত ছিল। নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলা ও বৃহৎ জাতীয় অথবা মহাদেশীয় ভূগোলের অংশ হওয়ার ভেতর তারা কোন ধরনের বিরোধ দেখে নি। তাদের প্রত্যক্ষ জাতীয়তা, বার্লিন দ্বারা অঙ্কিত তাদের বহুজাতিভিত্তিক রাষ্ট্র এবং পুরো আফ্রিকার ভেতর তারা কোন ধরনের শত্রুভাবাপন্ন কিন্তু প্রয়োজনীয় বিরোধ দেখে নি। বহুজাতিভিত্তিক রাষ্ট্রগুলোকে না ভেঙেই এসব মানুষ খুব সুখীভাবে ওলোফ, হাউসা, ইয়োরুবা, ইবো, আরবি, আমহারিক, কিশওয়াহিলি, গিকুয়ু, লুয়ো, লুহিয়া, শোনা, এনদেবেলে, কিম্বুন্দু, জুলু অথবা লিঙ্গালা ভাষায় কথা বলে। উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের সময় যে দল বা নেতা তাদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অবস্থানকে সবচেয়ে বেশি ও সবচেয়ে ভালোভাবে ¯পষ্ট করতে পেরেছিল, তাদেরই চারপাশে জড়ো হওয়ার এক সীমাহীন সক্ষমতা তারা দেখিয়েছিল। যদি কিছু থেকে থাকে তা হলো পেটি-বুর্জোয়াদের ছোট ছোট বিরোধ, তাদের জাতিগত উৎকট স্বাদেশিকতা যা যুদ্ধের সময় কখনো কখনো নিজেদের ভেতর বিভক্তি তৈরিতে উৎসাহিত করেছিল। কিন্তু কৃষকশ্রেণির ভেতর তাদের ভাষাসমূহ এবং তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে কোন দ্বিধা বা জটিলতা ছিল না।

 

উপরন্তু, প্রয়োজন বা ইতিহাসের দ্বারা বাধ্য হয়ে কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিকে যখন তাদের প্রভুর ভাষায় মানিয়ে নিতে হয়েছিল তখন তারা সেংহর বা আচেবের দেখানো পথে এসব ভাষাকে সম্মান না দেখিয়ে এসব ভাষাগুলোর আফ্রিকায়ন করেছিল। ফলে এক ধরনের নতুন আফ্রিকান ভাষার তৈরি হলো যেমন সিয়েরা লিয়নের কিরো বা নাইজেরিয়ায় পিদগিন, এসব ভাষা তার বাক্যপ্রকরণ ও ছন্দের জন্যে আফ্রিকান ভাষাসমূহের কাছে ঋণী। দৈনন্দিন কথাবার্তা, অনুষ্ঠানাদি, রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং সবার উপরে প্রবাদ, গল্প, কবিতা ও ধাঁধায় সমৃদ্ধ ওরাটিউরে এই সব ভাষাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল।

 

কৃষক ও শহুরে শ্রমিক শ্রেণি থেকে বের হয়েছিল গায়কেরা। এসব গায়কের কণ্ঠে জায়গা পেতো পুরনো সঙ্গীত কিংবা কারখানা ও শহুরে জীবনের নতুন নতুন অভিজ্ঞতা এবং শ্রমজীবী শ্রেণির সংগ্রাম ও সংগঠন নিয়ে তৈরি নতুন গান। এসব গায়কেরা ভাষাকে নতুন একটি বৈচিত্র্যতা এনে দিল। যা করা হয়েছিল নতুন নতুন শব্দ ও প্রকাশভঙ্গি উদ্ভাবনের মাধ্যমে এসব ভাষার নবজীবন ও শক্তিদান এবং আফ্রিকা ও বিশ্বে ঘটে যাওয়া নতুন নতুন ঘটনাকে এর ভেতর একীভূত করার ক্ষমতাবৃদ্ধির মাধ্যমে।

 

কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণি থেকে হয় তাদের নিজেদের লেখক বের হয়ে এসেছিল অথবা আফ্রিকান ভাষায় লেখা পেটি-বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীদের অবস্থান ও আগ্রহ দ্বারা তারা আকর্ষিত হয়েছিল। আলবার্ট জেরার্ডের আফ্রিকান ল্যাঙ্গুয়েজ লিটারেচার (১৯৮১) শীর্ষক দশম শতাব্দী থেকে বর্তমান পর্যন্ত আফ্রিকান ভাষার সাহিত্য নিয়ে পথপ্রদর্শনমূলক গবেষণায় আমাদের ভাষাকে একটি লিখিত সাহিত্য দেয়ার পেছনে যারা আছেন তাদের উল্লেখ রয়েছে। এর ভেতর আছেন হেরুয়ি ওয়ালদা সেলাসি, গ্রামাকো টাকলা হাওয়ারাত, শাবান রবার্ট, আব্দুল লতিফ আবদালা, এবরাহিম হুসেইন, ইউফ্রেস কেজিলাহাবি, বি. এইচ. ভিলাকাজি, ওকোট পি’বিতেক, এ. সি. জর্ডান, পি. এমবোয়া, ডি. ও. ফাগুনওয়া, মাজিসি কুনেনে এবং আরো অনেকে। এভাবে বিলুপ্তির পক্ষে আভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত চাপের পরেও আমাদের ভাষাগুলো অমর হয়ে গেলো ছাপার অক্ষরে। কেনিয়ার ক্ষেত্রে আমি বিশেষভাবে বলতে চাই গাকারা ওয়া ওয়ানজাউর কথা, যাকে গিকুয়ু ভাষায় লেখার জন্য ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ১০ বছর জেলে রেখেছিল ব্রিটিশরা। রাজনৈতিক বন্দীত্বের সময় গোপনে লেখা তাঁর বই এমওয়ানদিকি ওয়া মাও মাও ইথামারিওইনি হাইনাম্যান কেনিয়া কর্তৃক প্রকাশিত হয় এবং তা ১৯৮৪ সালে জিতে নেয় নোমা অ্যাওয়ার্ড। এটি ছিল গিকুয়ু ভাষার গদ্যের সীমানা বৃদ্ধি করার মতো শক্তিশালী কাজ এবং ১৯৪৬ সালে শুরু করা তাঁর কাজের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। কেনিয়ার বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং জাতীয় মুদ্রণ জগত যখন ইংরেজি ভাষায় আন্দোলিত হচ্ছিলো, তখন দারিদ্রতা, কারাগারের কঠোরতা, স্বাধীনতা পরবর্তী একাকীত্বের মাঝে কাজ করে গেলেও তিনি কখনো কেনিয়ার জাতীয় ভাষাগুলোর সম্ভাবনার উপর আস্থা হারান নি। কেনিয়ার মানুষের উপনিবেশবিরোধী গণআন্দোলন, বিশেষত মাও মাও বা কেনিয়া ল্যান্ড অ্যান্ড ফ্রিডম আর্র্মি নামক সশস্ত্র দলটি ছিল তাঁর অনুপ্রেরণা। এই দলটির মাধ্যমেই ১৯৫২ সালে আফ্রিকায় আধুনিক গেরিলা যুদ্ধযুগের সূচনা হয়। তিনি হলেন জাগ্রত কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক গণআন্দোলন থেকে বের হয়ে আসা লেখকদের স্পষ্ট উদাহরণ।

 

ইউরোপীয় ভাষাভাষী আফ্রিকান পেটি-বুর্জোয়াদের ভেতর থেকেও বেশ কিছু মানুষ বেরিয়ে এসেছিল যারা আমাদের সাহিত্য জগতে ইউরোপীয় ভাষার ‘‘নিয়তিবাদী যুক্তি” মেনে নেয়া দলের সাথে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এদেরই একজন ছিলেন ওবি ওয়ালি, যিনি ১৯৬২ সালে মাকারেরেতে সমবেত হওয়া ব্যক্তিদের পায়ের নিচের মাটি সরিয়ে দিয়েছিলেন ট্রানজিশন (১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩)-এ প্রকাশিত প্রবন্ধে। তিনি লিখেছিলেন :

শিক্ষিত আফ্রিকানদের লেখার অবশ্যম্ভাবী ভাষা হিসেবে ইংরেজি ও ফরাসির সমালোচনাহীন ব্যবহার বিপথে চলছে। আর এর কোন সম্ভাবনা নেই আফ্রিকান সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আর যতক্ষণ পর্যন্ত আফ্রিকান লেখকরা এটি মেনে নিবেন না যে সত্যি সত্যি কোন আফ্রিকান সাহিত্য লিখতে হলে তা আফ্রিকান ভাষাতেই লিখতে হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা কানাগলিতেই ঘুরপাক খাবেন।
আফ্রিকান সাহিত্য নিয়ে আগামী কনফারেন্সগুলোতে আমরা আফ্রিকান ভাষায় আফ্রিকানদের লেখার যাবতীয় সমস্যা এবং প্রকৃত আফ্রিকান সংবেদনশীলতার উন্নয়নের নিহিতার্থ নিয়ে আলোচনার জন্য সময় পেতে পছন্দ করবো।

 

ওবি ওয়ালির পূর্বসূরি রয়েছে। সেনেগালের ডেভিড ডিওপের মতো মানুষেরা ঔপনিবেশিক ভাষার এমন ব্যবহারের বিরুদ্ধে আরো শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছিলেন।

নিজের ভাষা ও মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকান স্রষ্টারা জয়ী (ঔপনিবেশিক) রাষ্ট্রগুলোর সাহিত্যিক প্রবণতার এক ধরনের প্রতিনিধিতে পরিণত হবেন মাত্র (এবং তা একেবারে অকারণ নয়)। চিন্তা ও ভঙ্গির মাধ্যমে আত্তীকরণবাদী নীতিমালার নিখুঁত নকশা হিসেবে তাদের কাজগুলো নিঃসন্দেহেই সমালোচকদের একটি দলের উষ্ণ অভিনন্দন পাবে। এই প্রশংসা মূলত ঔপনিবেশিকতাকেই করা হয়, যখন তা মানুষকে আর দাস করে রাখতে পারে না আর পশ্চিমা সাহিত্যবিষয়ক কায়দা দিয়ে তাদের বশমানা বুদ্ধিজীবীতে পরিণত করে। এটি হলো জারজিকরণের আরও সূক্ষ্ম পদ্ধতি।২৯

ডেভিড ডিওপ অনেকটা স্পষ্টভাবেই দেখতে পেরেছিলেন যে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার ব্যবহার মূলত ছিল সাময়িক ঐতিহাসিক প্রয়োজন।

নিশ্চিতভাবেই অন্যায় শাসন থেকে মুক্ত আফ্রিকায় কোন লেখককে তার পুনিরাবিষ্কৃত ভাষা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে তার অনুভূতি এবং তার নিজের মানুষের অনুভূতি কিছু প্রকাশ করতে হবে না।৩০

ওবি ওয়ালির এই লেখার গুরুত্ব ছিল এর প্রকাশভঙ্গি ও সময়ের কারণে, যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬২ সালের মাকারেরে কনফারেন্স অব আফ্রিকান রাইটার্স অব ইংলিশ এক্সপ্রেশনের ঠিক পরপর। এটি ছিল ইংরেজি ও ফরাসি ভাষাকে বেছে নেয়ার ব্যাপারে অবজ্ঞাপূর্ণ, বিবাদপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক এবং আফ্রিকান ভাষাসমূহ ব্যবহারের আহ্বানের প্রতি একেবারেই দুঃখহীন। একেবারেই আশ্চর্যজনক নয় যে এটি প্রথমে প্রতিকূলতা ও পরে নিশ্চুপতার মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু ইউরোপীয় ভাষাসমূহে রচিত সাহিত্যের ২০ বছরের বিঘ্নহীন কর্তৃত্বের পর এবং আফ্রিকায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঘটনাসমূহের প্রতিক্রিয়ামূলক মোড় নেয়ার পর এবং নব্য-ঔপনিবেশিক স্থিতাবস্থা থেকে বিপ্লবী বিচ্ছিন্নতার অন্বেষণের প্রভাবে লেখকদের ভেতর আত্মসন্ধানের মতোই আরও একবার আফ্রিকান সাহিত্যের ভাষা নিয়ে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছিল।

 

আট

আফ্রিকান লেখক হিসেবে আমরা সর্বদা ইউরো-আমেরিকার সাথে নব্য-ঔপনবেশিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স¤পর্কের ব্যাপারে অভিযোগ করেছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিদেশি ভাষাসসমূহে আমাদের লেখা চালিয়ে যাওয়া কি সেই নব্য-ঔপনিবেশিকতার সাংস্কৃতিক অংশের সামনে হীনমন্য হয়ে ও নুয়ে পড়ে তাদেরকেই সম্মান জানানো নয়? একজন রাজনৈতিক যিনি বলেন সাম্রাজ্যবাদ ছাড়া আফ্রিকা কিছুই করতে পারবে না, তার সাথে ইউরোপিয়ান ভাষাসমূহ ছাড়া আফ্রিকা কিছুই করতে পারবে না বলা লেখকের পার্থক্য কোথায়?
কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ দিয়ে আমরা যখন ক্ষমতাশালী ভাষা নিয়ে লম্বা-চওড়া বক্তৃতা ও বিতর্ক করছিলাম, সেই সময় সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতি ও আফ্রিকান প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলো সফলতার দেখা পাচ্ছিলো। আফ্রিকার সবচেয়ে ক্ষুদ্র ভাষাগুলোতেও খ্রিস্টীয় বাইবেল ছাপা হয়েছিল অগণিত সংখ্যায়। দালাল শাসক গোষ্ঠীটিও খুশি ছিল কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির নিয়ন্ত্রণ পেয়ে। তারা এই শ্রেণির কাছে বিকৃতি, স্বৈরতান্ত্রিক দিক-নির্দেশনা, ডিক্রি, ফসিলের মতো নির্জীব বিষয়াদিকে আফ্রিকান সংস্কৃতি বলে প্রচার করতো। আফ্রিকান জনগণের কাছে তাদের ভাষার মাধ্যমেই সামন্তবাদী আদর্শিকতা, কুসংস্কার, মিথ্যা ও অন্যান্য পশ্চাদবর্তী উপাদানগুলো ছড়িয়ে দেয়া হতো আর যারা আগামীদিনের বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলতেন তাদের থেকেও এসবের দিকে কোন বাধা আসতো না। কারণ তারা নিজেদের আবদ্ধ করেছিলেন ইংরেজি, ফরাসি বা পর্তুগিজ ভাষার ভেতরে। এটা খুবই পরিহাসের বিষয় যে, আফ্রিকাকে ইউরোপের কাছে বিক্রি করে দেয়ায় বিশ্বাস করা সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল আফ্রিকান রাজনীতিবিদটি সাধারণত আফ্রিকান ভাষায় খুব দক্ষ হন। এটিও পরিহাসের যে আফ্রিকাকে আফ্রিকার হাত থেকে বাঁচানো, কিংবা ভাষিক পৌত্তলিকতা থেকে রক্ষায় বিশ্বাসী সবচেয়ে উদ্দীপ্ত ইউরোপিয়ান মিশনারিটিও আফ্রিকান ভাষায় দক্ষ, কখনো কখনো এই ভাষায় তারা লিখেও থাকেন। ইউরোপিয়ান মিশনারি তাদের প্রভুত্বের লক্ষ্যে এতটাই বিশ্বাস করে যে তারা সবচেয়ে ব্যবহারোপযোগী অবস্থায় বর্তমান থাকা ভাষাসমূহে যোগাযোগ করে না; অন্যদিকে ‘আফ্রিকান সাহিত্য’-তে আফ্রিকান লেখকের বিশ্বাসও এত বেশি যে সে কৃষকদের ঐসব নৃতাত্ত্বিক, বিভেদকারী এবং অনুন্নত ভাষাসমূহে লিখতে চায় না!

 

আরও পরিহাসের বিষয় হলো কিছু বিরুদ্ধ মত থাকলেও, তারা যেসব লেখা লিখেছেন তা আফ্রিকান সাহিত্য নয়। পেলশিয়ান গাইড টু ইংলিশ লিটারেচার-এর সম্পাদক তাদের সর্বশেষ সংখ্যায় সঠিক কাজটি করেছেন এসব সাহিত্যকে বিংশ শতাব্দীর ইংরেজি সাহিত্যের অংশ হিসেবে আলোচনা করে। ঠিক সেভাবে যেভাবে ফ্রেঞ্চ একাডেমি ফরাসি সাহিত্য ও ভাষায় সেংহরের প্রকৃত ও প্রতিভাবান অবদানকে সম্মান জানিয়ে সঠিক কাজটি করেছিল। আমরা এর মাধ্যমে যা তৈরি করছি তা হলো একটি হাইব্রিড ঐতিহ্য যা পরিবর্তনের ভেতর আছে। একে শুধুমাত্র আফ্রো-ইউরোপিয়ান সাহিত্যও বলা যায়, সেই সাহিত্য যা ইউরোপিয়ান ভাষাসমূহে আফ্রিকানদের দ্বারা রচিত। এই ধারা থেকে অনেক প্রকৃত মেধাবী লেখক ও কাজ বেরিয়ে এসেছে। এদের ভেতর আছেন চিনুয়া আচেবে, ওলে সোয়িনকা, আয়ি কেওয়েই আরমাহ, সেমবেন ওসমান, আগোস্তিনো নেতো, সেদার সেংহর এবং আরও অনেকে। কে তাঁদের মেধাকে অস্বীকার করবে? বার্লিন ও তার পরের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়াদির বিরুদ্ধে আফ্রিকার চলমান সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলোকে তাঁরা তাঁদের সৃজনশীল চিন্তার মাধ্যমে প্রতিফলিত করেছেন। আমরা একই সাথে দুইটি কাজ করতে পারবো না! নব্য-ঔপনিবেশিক ব্যবস্থায় আফ্রিকা যতদিন ইউরোপীয় পুঁজির অধীনে থাকবে ততদিন পর্যন্তই তাঁদের এসব আফ্রো-ইউরোপীয় সাহিত্যিক ঐতিহ্য টিকে থাকবে। তাই আফ্রো-ইউরোপীয় সাহিত্যকে বলা যায় সাম্রাজ্যবাদের যুগে আফ্রিকানদের দ্বারা ইউরোপীয় ভাষায় রচিত সাহিত্য।৩১

 

কিন্তু ২০ বছর আগে ওবি ওয়ালির বিবাদমূলক তেজস্বিতার মতো আরও কেউ কেউ এসব বিষয়ের অবশ্যম্ভাবী উপসংহার নিয়ে কথা বলছেন। আফ্রিকান সাহিত্য শুধুমাত্র আফ্রিকান ভাষাতেই লেখা সম্ভব, আর এই ভাষা হলো আফ্রিকান কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির ভাষা। এ শ্রেণিটিই হলো আমাদের প্রতিটি জাতীয়তার প্রধানতম জোট এবং নব্য-ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে অবশ্যম্ভাবী বিপ্লবী বিচ্ছিন্নতার প্রধানতম প্রতিনিধি।

নয়

আফ্রো-ইউরোপীয়, বা আমার ক্ষেত্রে আফ্রো-ইংরেজি সাহিত্যে ১৭ বছর যুক্ত থাকার পর ১৯৭৭ সালে আমি গিকুয়ু ভাষায় লেখা শুরু করি। সেসময় আমি নগুগি ওয়া মিরির সাথে এনগাহিকা এনদিনদা৩২ চিত্রনাট্যের খসড়া করেছিলাম। এরপর থেকে এ পর্যন্ত আমি গিকুয়ু ভাষায় কাইতানি মুথারাবাইনি৩৩ নামে একটি উপন্যাস, মাইতু এনজুগিরা৩৪ নামে একটি গীতিনাট্য, এনজামবা নিনে না এমবাথি আই মাথাগু, বাথিতুরা ইয়া এনজামবা নিনে, এনজামবা নিনে না চিবু কিংআংগি নামে তিনটি শিশুতোষ বই এবং মাতিগারি মা এনজিরুঙ্গি নামে একটি উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি রচনা করেছি। আমি যেখানেই গিয়েছি, বিশেষত ইউরোপে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘‘কেন আপনি গিকুয়ু ভাষায় লিখছেন? কেন আপনি এখন একটি আফ্রিকান ভাষায় লেখেন?” কিছু কিছু বিদ্যায়তনিক জায়গায় আমাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে তিরস্কারের, ‘‘কেন আপনি আমাদের পরিত্যাগ করলেন?” বিষয়টা যেন এমন ছিল যে গিকুয়ু ভাষায় লেখার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি অস্বাভাবিক কিছু করেছি। কিন্তু গিকুয়ু আমার মাতৃভাষা! খুব বড় সত্য হলো, অন্যান্য সংস্কৃতির সাহিত্যবিষয়ক চর্চার ক্ষেত্রে সাধারণ বোধ যা বলে, একজন আফ্রিকান লেখককে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করেই মাপা হয় যে তার ভেতর আফ্রিকান বাস্তবতাকে সাম্রাজ্যবাদ কুতটুকু বিকৃত করতে পেরেছে। বাস্তবতা এক্ষেত্রে উল্টে গিয়েছে। এখানে অস্বাভাবিককে দেখা হয় স্বাভাবিক আর স্বাভাবিককে দেখা হয়ে অস্বাভাবিক। ইউরোপকে সমৃদ্ধ করেছে আফ্রিকা, কিন্তু আফ্রিকাকে বিশ্বাস করানো হয় যে দারিদ্রতা থেকে মুক্ত হতে তার প্রয়োজন ইউরোপকে। ইউরোপ ও আমেরিকার উন্নয়নের জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে আফ্রিকার প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদ, কিন্তু আফ্রিকাকে কৃতজ্ঞ হতে বলা হয় তাদেরই দেয়া সাহায্যের জন্যে যারা এখনো আফ্রিকার পিঠে চড়ে রয়েছে। আফ্রিকায় বাস্তবতার এই উল্টে যাওয়াকে যৌক্তিক বলে এমন বুদ্ধিজীবীদেরও আফ্রিকা তৈরি করেছে।

 

আমি বিশ্বাস করি গিকুয়ু ভাষা, যা একটি কেনিয়ান ভাষা ও একটি আফ্রিকান ভাষা, সে ভাষায় আমার লেখাগুলো কেনিয়া ও আফ্রিকার মানুষের সাম্রাজ্যবাদী সংগ্রামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেনিয়ান ভাষাগুলো, যেগুলো হলো অনেকগুলো জাতীয়তার ভাষা যার দ্বারা গঠিত হয়েছে কেনিয়া, সেই কেনিয়ার বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব ভাষার সাথে পশ্চাদপদতা, অনুন্নয়ন, অপমান ও শাস্তির মতো নেতিবাচক বিষয়কে জুড়ে দেয়া হয়েছিল। আমরা যারা এই বিদ্যালয় ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতাম তাদের এসব ভাষা — যার কারণে নিয়মিত অপমানিত হতে হতো ও শাস্তি পেতে হতো — সেসব ভাষার মানুষ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতি এক ধরনের ঘৃণার বোধ কাজ করতো। আমি কেনিয়ার শিশুদের তাদের নিজেদের সম্প্রদায় ও ইতিহাস থেকে তৈরি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অবমাননাকর সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহ্যের ভেতর বড় হতে দেখতে চাই না। আমি চাই তারা ঔপনিবেশিক বিচ্ছিন্নতার সীমা ছাড়িয়ে যাবে।

 

ঔপনিবেশিক বিচ্ছিন্নতার দুইটি স¤পর্কিত ধরন রয়েছে। একটি হলো বাস্তবতা থেকে একজনকে দূরে সরিয়ে দেয়ার সক্রিয় (বা নিষ্ক্রিয়) প্রচেষ্টা এবং অন্যটি হলো একজনের পরিবেশের থেকে খুবই বাইরের কোন বিষয়ের সাথে তার সক্রিয় (বা নিষ্ক্রিয়) পরিচিতি। এটি শুরু হয় বাসা ও সম্প্রদায়ের ভেতর ব্যবহৃত ভাষার সাথে একজনের ধারণা তৈরি, চিন্তা, আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, মানসিক উন্নয়নের ভাষার খুবই ইচ্ছাকৃত পার্থক্য তৈরির মাধ্যমে। এর ফলে একই ব্যক্তির শরীর ও মনের ভেতর বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়ে এবং ঐ ব্যক্তির দুইটি অসম্পর্কিত ভাষাগত অঞ্চল দখল করে ফেলা যায়। বৃহৎ সামাজিক পরিসরে এর পরিণাম হলো শরীরবিহীন মাথা ও মাথাবিহীন শরীরস¤পন্ন একটি সমাজ উৎপাদন।

 

তাই ভাষার সকল বিভাজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গের ভেতর ঐকতান পুনঃস্থাপনের জন্যে আমি কাজ করতে চাই, যেন কেনিয়ার শিশুরা তাদের নিজস্ব পরিবেশ আবার ফিরে পায় এবং একে পুরোপুরি বুঝতে পারে। এই বুঝতে পারার ফলে সামষ্টিক ইতিবাচকতার জন্যে তারা যে কোন পরিবর্তনকে বুঝার মতো অবস্থায় পৌঁছাতে পারবে। আমি দেখতে চাই কেনিয়ার মানুষের মাতৃভাষাগুলো (আমাদের জাতীয় ভাষাসমূহ) শুধুমাত্র একটি শিশুর বাচনিক প্রকাশভঙ্গির ছন্দে আবদ্ধ সাহিত্য না থেকে প্রকৃতির সাথে তার সংগ্রাম ও সামাজিক চরিত্রের সাহিত্যিক প্রতিফলনও ঘটাবে। সূচনা থেকেই তার নিজের সাথে তার ভাষা ও তার পরিবেশের এই ঐকতান থাকলে, নিজের ভাষা, নিজের ও নিজের পরিবেশের সাথে কোন ধরনের জটিলতা তৈরি না করেই সে অন্য ভাষা এবং অন্য মানুষের সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিবাচক মানবিক, গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী উপাদানগুলো শিখতে ও উপভোগ করতে পারবে। এর ফলে আফ্রিকান শিশুদের জীবনে সমগ্র কেনিয়ার জাতীয় ভাষা কিশওয়াহিলি; লুয়ো, গিকুয়ু, মাসাই, লুহিয়া, কালেঞ্জিন, কাম্বা, মিজিকেন্দা, সোমালি, গাল্লা, তুরকানা, আরবিভাষী ও অন্যান্য জাতিসত্তার ভাষাসমূহ; হাউসা, ওলোফ, ইয়োরুবা, ইবো, জুলু, নায়ানজা, লিংগালা, কিমাবুন্দুসহ অন্যান্য আফ্রিকান ভাষা এবং ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, রুশ, চাইনিজ, জাপানিজ, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ প্রভৃতি বিদেশি ভাষা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে হাজির হবে।

 

চিনুয়া আচেবে একদা আফ্রিকান বুদ্ধিজীবীদের বিমূর্ত সার্বজনীনতায় পলায়ণপ্রবৃত্তি প্রসঙ্গে জনসমক্ষে অভিযোগ করেছিলেন, যা আফ্রিকান সাহিত্যের ভাষা প্রশ্নে আরও বেশি প্রযোজ্য,

বিশ্বে আফ্রিকার ভাগ্যই এমন যে ‘আফ্রিকান’ বিশেষণ ব্যবহার করা মাত্রই প্রত্যাখ্যানের এক কদাকার ভয় ঘিরে ধরে। এই দায় ও বাসভূমির সাথে সকল সম্পর্ক ছেদ করে সার্বজনীন ব্যক্তিতে পরিণত হওয়ার পথে বিরাট লাফ দেয়াই উত্তম মনে হয়। আমি নিজেও এই অস্বস্তি বুঝতে পারি। (কিন্তু কোন অস্বস্তি থেকে পালিয়ে বেড়ানোকে আমার ঐ অস্বস্তির সাথে বোঝাপড়ার খুব অসন্তোষজনক উপায় মনে হয় — থিয়োঙ্গো)। আর যদি লেখকরাই এ ধরনের পলায়নপ্রবৃত্তি গ্রহণ করে, আর কে এই দ্বন্দ্বে লিপ্ত হবে?৩৫

কে?
পৃথিবীর ইতিহাস বলে ইংরেজির জন্যে স্পেন্সার, মিল্টন ও শেক্সপিয়ার বা রুশ ভাষার জন্যে পুশকিন এবং তলস্তয় যা করেছেন — কিংবা বিশ্বের অন্যান্য লেখকরা নিজের ভাষায় সাহিত্য তৈরির সাহস দেখানোর ফলেই পরবর্তী সময়ে দর্শন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং মানুষের অন্যান্য সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের ভাষার দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল — আমাদের ভাষার জন্যে তা করতে আমরা আফ্রিকান লেখকরাও বাধ্য।
কিন্তু আমাদের ভাষায় লেখাটি সঠিক দিকে প্রথম পদক্ষেপ হলেও যদি এসব লেখা বিদেশি নিয়ন্ত্রণ থেকে উৎপাদিকা শক্তিকে মুক্ত করার জন্যে আমাদের মানুষের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের আধেয়কে বহন না করে, তাহলে আফ্রিকান সাহিত্যের রেনেসাঁ একা একা আসবে না। এসব সাহিত্যের আধেয়তে থাকতে হবে সকল জাতীয়তার কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির ভেতর প্রয়োজনীয় ঐক্যের আহ্বান যার দ্বারা আভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত পরজীবীদের হাত থেকে তাদের সম্পদ ও উৎপাদনের নিয়ন্ত্রণ দখলের সংগ্রাম চলতে থাকে।

 

অন্য কথায়, সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করার ও বিশ্বের অন্যান্য মানুষের সাথে একটি উন্নত গণতন্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক জোট গঠনের সংগ্রামে আফ্রিকার সংগঠিত কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির সাথে আফ্রিকান ভাষার লেখকদের পুনরায় যুক্ত হতে হবে। সংগ্রামের ক্ষেত্রে এই একতা আমাদের বহাভাষাভিত্তিক বৈচিত্র্যতায় ঐক্যের কাজ করবে। এর ফলে আফ্রিকার মানুষের সাথে এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের প্রকৃত সংযোগের দিকটিও উন্মোচিত হবে।
কিন্তু যখনই লেখকরা আফ্রিকান ভাষায় নিজেদের প্রকাশ করে কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রামের সাথে যুক্ত হবেন, তখনই তারা সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বের সামনে পড়বেন। একটি জাগ্রত কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণি হলো দালালদের শাসনব্যবস্থার সবচেয়ে বড় শত্রু। সাধারণ মানুষের ভাষায় যিনি বিপ্লবী ঐক্য ও আশার কথা বলে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, তিনি একটি নাশকতামূলক চরিত্রে পরিণত হন। এভাবে আফ্রিকান ভাষায় লেখা আধেয়গুলো নাশকতামূলক অথবা রাজনৈতিক বিরোধিতাকারীতে পরিণত হয় এবং লেখকের সামনে জেল, নির্বাসন, এমনকি মৃত্যুর সম্ভাবনাও দেখা দেয়। তার জন্যে কোন ‘জাতীয়’ খেতাব বা সম্মানের ব্যবস্থা থাকে না; শুধু থাকে সংখ্যালঘু শাসক শ্রেণি কর্তৃক গালাগাল, মানহানি আর অসংখ্য মিথ্যার বেসাতি। আর এই শাসক শ্রেণি — যারা আসলে শাসন করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে — গণতন্ত্রকে মনে করে প্রকৃত ভয়ের কারণ। নিজেদের জীবন গঠনে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ কিংবা পারস্পরিক উপলব্ধি লাভে সক্ষম ভাষায় নিজেদের ভেতর আলোচনাকে একটি দেশ ও তার প্রতিষ্ঠানসমূহের সুশাসনের জন্যে বিপজ্জনক মনে করা হয়। জনগণের জীবনকে আহ্বান করে আফ্রিকান ভাষাগুলো নব্য-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের শত্রুতে পরিণত হয়েছে।

 

টীকা ও সূত্র

২৯. ডেভিড ডিওপ, কন্ট্রিবিউশন টু দ্য ডিবেট অন ন্যাশনাল পোয়েট্রি, প্রেজেন্স আফ্রিকেইন ৬, ১৯৫৬ — লেখক

৩০. ডেভিড ডিওপ, পূর্বোক্ত — লেখক

৩১. ‘আফ্রো-ইউরোপিয়ান সাহিত্য’ শব্দবন্ধটি এই সাহিত্যের ইউরোপীয়তার উপর অনেক বেশি জোর দেয়। ইউরো-আফ্রিকান সাহিত্য? সেক্ষেত্রে ইংরেজি, ফরাসি ও পর্তুগিজ ভাষার সাহিত্যগুলো সম্ভবত অ্যাংলো-আফ্রিকান সাহিত্য, ফ্রাঙ্কো-আফ্রিকান সাহিত্য অথবা লুজো-আফ্রিকান সাহিত্য হিসেবে পরিচিত হতো। যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সাহিত্যের এসব ছোট ছোট ধরনগুলো একটি আলাদা ধরনের ঐতিহ্য তৈরি করেছে যাকে আফ্রিকান সাহিত্য থেকে পৃথক করা প্রয়োজন, যদিও বর্তমান সাহিত্যবৃত্তিক জগতে এগুলো আফ্রিকান সাহিত্য পরিভাষাটিকে জবরদখল করে রেখেছে। এক্ষেত্রে সাহিত্য বিশারদদের দ্বারা এমন কিছু উদ্ধত দাবিও করা হয় যে, ইউরোপিয়ান ভাষাসমূহে লেখা সাহিত্য নাকি একই ধরনের সাহিত্য যা গণমানুষের ভাষা, অর্থাৎ আফ্রিকান ভাষায় লেখা, তার চেয়ে অনেক বেশি আফ্রিকানতার কাছাকাছি। ফলে, সংখ্যালঘু মানুষের আফ্রো-ইউরোপিয়ান সাহিত্য (ইউরো-আফ্রিকান সাহিত্য?) তাদের পরিচিতি হিসেবে ‘আফ্রিকান সাহিত্য’ পরিভাষাকে পুরোপুরি দখল করে ফেলেছে, আর আফ্রিকান ভাষায় আফ্রিকানদের লেখা সাহিত্যগুলোর যোগ্যতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছে। আলবার্ট জেরার্ডের সময়োপযোগী বইটির নাম হলো আফ্রিকান ল্যাঙ্গুয়েজ লিটারেচার্স — লেখক

৩২. আমার যখন ইচ্ছে তখন বিয়ে করবো — অনুবাদক

৩৩. ক্রুশের উপর শয়তান — অনুবাদক

৩৪. মা, আমার জন্যে গান গাও — অনুবাদক

৩৫. চিনুয়া আচেবে, আফ্রিকা অ্যান্ড হার রাইটার্স, সূত্র: মর্নিং ইয়েট অন ক্রিয়েশন ডে, পৃ. ২৭ — লেখক

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here