দুটি অনুগল্প

ভাষা

১.
পুরোহিতরা বলছেন যে, ইসলাম সঠিক, এবং একথা বলে তারা মন্দিরে গিয়ে পূর্বের মতো পূজা অর্চনা শুরু করলেন। ইমামরা বলছেন যে, ইহুদিসহ সবাই সঠিক, এবং একথা বলে তারা মসজিদে গিয়ে পূর্বের মতো ইমামতি শুরু করলেন। পাদ্রিদল চুপ থাকার পাত্র নন; তাঁদের প্রতিনিধি হয়ে একজন পাদ্রি বলছেন যে, ধর্ম কখনই মুখ্য নয়, এবং একথা বলে তিনি পূর্বাধিক উদ্যমে ধর্মপ্রচারে নেমে গেলেন। পাদ্রির কথায় ফাদারদের চিন্তিত হবার কথা থাকলেও তারা চিন্তিত নন। ফাদাররা বলতে থাকলেন যে, মুসলমানদের এখন সমর্থন দেয়া যায়, তবে বাকিরাও আমাদের ভাই, এবং একথা বলে সব ফাদার ধর্মপ্রচারে নেমে গেলেন। ফাদারদের উদ্যমী কর্মতৎপরতা হীনযান-মহাযানীদের ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ালো। তারা পরস্পর বসলেন, আলোচনা হলো, মিটে গেলো পরস্পরের বিবাদ। এরপর দু-ভাগ এক হয়ে নতুন নামকরণ হলো, এবং তারা ঘোষণা দিলেন যে, জীব হত্যা পাপ হলেও মহাপাপ নয়; প্রয়োজনে হত্যা করা নির্বাণের পথে অগ্রসর হওয়ার উপায়। যেমন আমরা আহারের প্রয়োজনে পশু-পাখি হত্যা করি। এতো সব দেখে রাজনীতির মাঠ নীরব থাকা একেবারেই বেমানান দেখায় বলে তাঁরাও শামিল হলেন শিকারে। সে শামিলতায়, বাম এসে গণতন্ত্রের সাথে, আর গণতন্ত্র বামের সাথে মিশে একাধিক রূপ ধারণ করলেন, এবং সবাই সমবেত কণ্ঠে শ্লোগান ধরলেন, জনগণের অধিকার, এ আমাদের অঙ্গীকার। অবশ্য সবার অঙ্গীকারের ভাষা সবাই বোঝে! কারও মাথায় তো বুদ্ধি কম আছে বলে মনে হয় না!

 

২.
সব বুদ্ধিমান যখন অঙ্গীকার রাখতে ব্যস্ত, ঠিক তখন, সময়কে তাগিদ দিলেন প্রকৃতি। প্রকৃতির তাগিদ পেয়ে সময়ও সূর্যকে নিজের অঙ্গীকারের কথা শোনায়। এরপর, সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে, জানান দেয় যে, সময় এখন গোধূলি।

০৬.০৭.২০২০

 

আয়না

মোজাফ্ফর সাহেব একজন বেসরকারি স্কুল শিক্ষক। তিনি জানেন যে, যেকোন দেশের রাজধানী আবশ্যিকভাবে সেই দেশেরই সামগ্রিকত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। আর এজন্যই হয়তো বড় বড় সব কাজ রাজধানীতে গিয়েই করতে হয়। যেমন নিজের স্কুলের এমপিও ভুক্ত করণের কাজ করতে ঢাকায় এসেছেন তিনি। মোজাফ্ফর সাহেব ঢাকায় এসে নিজের স্কুলের এম.পি.ও ভুক্তি করার কাজ করলেন। কাজ শেষ করে তার খুব ঢাকা শহর ঘুরে দেখবার ইচ্ছে হলো। নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি খুব করে ঢাকা শহর ঘুরলেন। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত মোজাফ্ফর সাহেব দশ টাকা খরচ করে পায়খানা করার জন্য একটি পাবলিক টয়লেটে ঢুকলেন। টয়লেটের ভিতরে অসহনীয় দুর্গন্ধ তাকে অস্থির করে তুললো। এরপরও তিনি বসলেন প্রয়োজনের খাতিরে। দুর্গন্ধ অসহনীয় হলেও কক্ষে বৈদ্যুতিক আলোর কোনো কমতি ছিলো না। বাঁ হাতের পাশে দেয়ালে আঁটানো সাবানদানিতে একটি সাদা সাবানও দেয়া ছিলো সেখানে। সাবানদানিতে সাবানের উপস্থিতি দেখে খুশি হলেন মোজাফ্ফর সাহেব। হঠাৎ কী যেন ভেবে মোজাফ্ফর সাহেব সাবানের দিকে মনোযোগী হলেন। তিনি দেখলেন, সাবানদানিতে রাখা সাবানটির গায়ে কেমন যেন হলুদ-কালচে রঙের পায়খানা লেগে আছে।

১১.০৭.২০২০

3 মন্তব্যসমূহ

  1. ভাই, এই যে আপনি সমাজতন্ত্র নামক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিপরীতে পুজিবাদকে না এনে গণতন্ত্র নামক একটা প্রবণতাকে বনাম করে তুললেন, তার কী হবে? গণতন্ত্র তো কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা না; বরং তা প্রক্রিয়াগত প্রবণতা।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here