২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন লুইজ এলিজাবেথ গ্ল্যুক। গ্ল্যুকের লেখায় নোবেল দাতা গোষ্ঠী পেয়েছেন : “unmistakable poetic voice that with austere beauty makes individual existence universal.” আমরা উদ্যোগ নিয়েছি গ্ল্যুকের কবিতার ধারাবাহিক উপস্থাপনার। কয়েক কিস্তিতে বেশ কিছু কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করার পরিকল্পনা রেখেছি। আজ থাকছে খোরশেদ আলমের অনুবাদে ৫টি কবিতা।
তুলোআঁটা দেশ
মাছের কঙ্কাল বয়ে যায় হ্যাটেরাসদ্বীপে
হয়তো অন্য কোনো নিদর্শন
হে সমুদ্র হে স্থল তোমরা রয়েছ
আকীর্ণ করে মৃত্যু, অথচ আকাঙ্ক্ষাই জীবন
একটি খোলা তুলোখণ্ড ঘিরে আছে
মসের চারপাশে অবিশুদ্ধ বাতাসে।
যেন জন্মই ক্ষতি, মৃত্যু নয়
জানি, আমিও হবো একদিন নিঃশেষ।
ছবি
বাবা তেরেজে হাত রাখলেন
মা উঁকি দিলেন, পরম আনন্দ মুখে
মেখে ভাসলেন সুখের সাগরে
নিবেদিত অনুপেক্ষণীয় দৃষ্টি নিয়ে
তাকিয়ে রইলেন।
কপার বিচের নিকটে
ছায়াঢাকা সমাহিত অনুভবে।
ভরা রৌদ্র দিনে, পথের পাশে
মা দাঁড়ালেন, ক্যামেরার সামনে।
বিদায়
চোখ ভরা জল নিয়ে
বাবা দাঁড়িয়ে আছেন প্ল্যাটফর্মে
জানালার দৃষ্টি গলে তাঁর মুখমণ্ডলে
নিবুনিবু আলো — যেন অতীতের
ভুলে যাওয়া অন্য একজন।
তার ছায়া মুখে মেখে নিয়ে
সহসাই তিনি ঘুরে দাঁড়ালেন
আর মন দিলেন পাঠে।
জীবনের অভ্যস্ত রুটিনে অপেক্ষার
ট্রেন সেখানে ধোঁয়াটে নিশ্বাস ছাড়ে।
অন্ধকারে গ্রেটেল
এই পৃথিবীই তো চেয়েছিলাম।
যারা আমাদের চেয়ে দেখবে মৃত
তারাই তো মৃতময়। ডাইনির কান্না
শুনতে পাচ্ছি একখানা
মিষ্টিমাখা খণ্ডের ভেতর
জোসনা রাতে : যেন স্রষ্টার আশীর্বাদ।
তার জিহ্বা কুঁকড়ে যাচ্ছে ধোঁয়ায়…
এখন সে বাহু থেকে বিচ্যুত
এবং বিচ্যুত নারীর স্মরণ থেকেও
পিতার গৃহে শান্তিতে ঘুমাই, নেই ক্ষুধাও।
কেন আমি ভুলে যাব?
বাবা দরজা ভেজালেন, পাপাত্মা
দূর করে দিলেন, বিস্মৃত সকলে
অথচ ঘুরে এলো বছর।
গ্রীষ্মের বিকেলে এমনকি ভাই তুমিও
চলে যাবে বলে তাকালে আমার দিকে,
আর কখনো ঘটেনি এমন।
কিন্তু আমি তোমার জন্যই হত্যাকরেছি
জ্বলন্ত আগুনে উনুনের ভেতর –
রাত্রি নেমে এলে তোমাকে ধরতে চেয়েছি
কিন্তু তুমি তো আর নেই।
হ্যানসেল, শত্রুরা নিরবতা ক্ষুণ্ন করে
তাহলে আমি কি একা?
আমরা সত্যি সত্যি দাঁড়ানো
প্রচণ্ড আগুনে অন্ধকার বনের ভেতর।
পর্বত
ছাত্ররা আমার দিকে আশার দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো
আমি তাদের বললাম, অশেষ শ্রমের জীবনই
অনন্ত সৌন্দর্য। কিন্তু তাদের অভিব্যক্তি খুব কমই
পাল্টালো। অশেষ শ্রম কী–তারা জানতে চাইলো
তাদের আমি শোনালাম সিসিফাসের সেইগল্প,
কীভাবে আশাহত হতে হতে পর্বতের শিখরদেশে
সে একটা পাথর তোলে। জানে, আসবেনা কাজে
তার এই অনর্থক শ্রম, তবু সে ওঠায় অবিরত।
হয়তো একাজে শিল্পীর জীবনে আনন্দই আছে
যা তাকে প্ররোচিত করে পাথর ওঠাতে।
আমিও তো পাথর টেনে চলেছি সঙ্গোপনে
খুব ধীরে ঠিক পর্বতের ওপরে,
হে বৎস, আমি কিন্তু ছলনা করছিনে।
অথচ তারা কর্ণপাত করলোনা, হলনা প্রবঞ্চিতও
তাদের আঙুলগুলো আওয়াজ তুলল কাঠের টেবিলে —
আমি ফিরে যাই সেই মিথের কাছে
বলি, আসলে ঘটেছে পুরোটাই নরকে
তবে কি শিল্পী যা বলেছে সব মিথ্যে,
তিনি তো স্পর্শ করতে চান স্বপ্নের শিখর
যেখানে অসীম আকাঙ্ক্ষা তার অনন্ত পূর্ণতার
যেখানে কোনো জীবনের ভার নেই দায় নেই,
আছে শুধু শিল্পীর সাফল্য চূড়ায় ওঠার।
আমার দু হাত তোখালি
আসলে পাথরটাই বাড়ায় উচ্চতা, পর্বতের।