সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিশ্চয়ই ব্যবহার করব। কিন্তু গবেষণা বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক সমস্যার কারণ। The Philadelphia Inquirer থেকে এ বিষয়ক লেখা অনুবাদ করেছেন হাসান রাকিব।
কোন কিছুই মাত্রাতিরিক্ত ঠিক নয়। এই যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের সংকট, ব্যক্তিগত জটিলতা থেকে সামাজিক নানা বিশৃঙ্খলা। আর তা এই করোনা পেনডামিকের সময় আমরা নতুন করে উপলব্ধি করতে পারছি। করোনা ভাইরাসের জীবাণু এক মহদেশ থেকে আরেক মহাদেশ ছড়ানোর পূর্বেই ভার্চুয়ালি তা ছড়িয়ে পরেছিলো সমগ্র বিশ্বে। এর ফলে একদিকে যেমন সুযোগ হয়েছে পূর্ব-প্রস্তুতি এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার, একইসাথে এর প্রভাবে তৈরি হয়েছে ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা যা একপর্যায়ে গিয়ে ডিপ্রেশন, ট্রমা ইত্যাদি আকার ধারণ করেছে।
পেনডামিকের সময় সোস্যালমিডিয়ার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মানুষকে বিষন্নতার দিকে ধাবিত করছে এবং মানুষের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বিভিন্নরকম ডিজর্ডার, ট্রমা এবং মানসিক চাপ।
এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া এবং চীনের জিনান ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক একটি গবেষণা চালিয়েছে সাম্প্রতি। গবেষণার বিষয় ছিলো : পেনডামিকের সময়ে অতিরিক্ত সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার এবং সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে পেনডামিক এর মাত্রাতিরিক্ত তথ্য আদান প্রদান কীভাবে আমাদের মধ্যে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে, যার ফলে আমরা সম্মুখীন হচ্ছি বিভিন্ন ট্রমা ও মানসিক যন্ত্রণার। গবেষকদল উহানে বসবাসরত ৩২০ জনের মধ্যে পর্যবেক্ষণ ও জরিপ চালিয়েছে যে, কীভাবে তারা চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম We chat ব্যবহার করে মহামারি (সময়ে স্বাস্থ্য/ চিকিৎসা / করোনা) সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং ছড়িয়ে দিয়েছে। গবেষকরা সেখানে স্ট্রেস মিটার (মানসিক চাপ পরিমাপক একক নির্ধারণ করে) ডিপ্রেশন/দুশ্চিন্তা ও হতাশার পরিমাণ নির্ধারণ করেছে।
এই গবেষণার গবেষক বো জং যিনি একজন সাংবাদিকতার অধ্যাপক বলেছেন যে, তাঁদের গবেষক দল প্রথমেই এটা উপলব্ধি করতে চেয়েছে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যখন উহানে লকডাউন ছিলো সে সময়টাতে সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে সেখানকার মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে কেমন প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল/ প্রভাব ফেলেছিল।
যদি চীনের দিকে লক্ষ্য করা যায় সেসময় স্থানীয় মিডিয়াগুলো কোভিড ১৯ নিয়ে কোনো তথ্য, প্রতিবেদন ও সংবাদ উপস্থাপন করা থেকে বিরত থেকেছে। যদি শুধু সেখানকার স্থানীয় পত্রিকা ও টেলিভিশনগুলোকে লক্ষ্য করা যায় তাহলে করোনা ভাইরাস বিষয়ক কোন তথ্যই পাওয়া যাবে না।
এই বিষয়টা তাদের মধ্যে এক ধরনের চাপ ও উদ্বেগের জন্ম দেয়। ফলে অধিকাংশ মানুষই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল হওয়া শুরু করে। বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্য/করোনা বিষয়ক কোন তথ্য পাওয়া এবং তা প্রকাশের জন্য সোস্যাল মিডিয়ার উপর আস্থা রাখা শুরু করে।
আর হ্যারি পল, বিশ্লেষণ করে দেখেন যে, মার্চের শেষ থেকে মে’র শুরু পর্যন্ত ৪৬-৫১% প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যেসব বিবৃতি ও তথ্য শেয়ার করেছে তা পেনডামিক শুরু হওয়ার পূর্বের সময়ের থেকে তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি।
এই গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী দুই ভগেরও বেশি যাদের পেনডামিক শুরু হওয়ার আগে কোনো প্রকার ডিপ্রেশন এবং ট্রমাটিক ডিজর্ডার ছিলো না এদের মধ্যে ২০ শতাংশেরও বেশির সেকেন্ডারি লেভেলের ট্রমা ও ডিজর্ডার ঘটেছে অন্যের অভিজ্ঞতা এবং ট্রমা ও ডিজর্ডার বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য শোনা ও শেযারের মাধ্যম। গবেষকেরা আরো বলেছেন, এটাও সম্ভব ছিলো যারা করোনা/ স্বাস্থ্য বিষয়ক অধিক তথ্য প্রচার করেছে We chat-এ এই বিষয়কে অধিক প্রাধান্যের সাথে বিবেচনা করেছে, তাদের চেয়ে যারা কম করেছে তারা কম ডিপ্রেশন ও ট্রমার সম্মুখীন হয়েছে। অনেকে এমন পরামর্শের সম্মুখীন হয়েছে যে, মানসিক স্বাস্থ্যের চাপজনিত সংকট বিশেষ করে পেনডামিকের মতো সংকটে সোস্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নিয়েছে।
এই গবেষণা তত্ত্বের মতে, সোস্যাল মিডিয়ার মাত্রাতিরিক্ত ব্যাবহার আমাদেরকে বিভিন্ন বিষণ্ণতা এবং নতুন ট্রমার সাথে যুক্ত করে।
বো জোং বলেছেন, আমাদের এটার গুরুত্ব বোঝা উচিত যে, ফেসবুক, টুইটারসহ সকল ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোনো একটা সংকটে আমাদেরকে কীভাবে সাহায্য করতে পারে। আমি মনে করি, যখনই আমরা কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হই তখন আমরা কীভাবে সাহায্য পেতে পারি কীভবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারি, এসব না ভেবে তার চেয়ে বেশি আমারা (অযথা) ঝুঁকে পড়ি সোস্যাল মিডিয়াতে। অবশ্য এটাও মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।
আমি চাই না মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে খারাপ কিছু ভাবুক। আমরা শুধু জানাতে চাই, এখানেও ভারসাম্যের প্রয়োজন রয়েছে। যেমন ধরুন আপনি প্রত্যেক ৫ মিটার অথবা ১০ মিনিট পরপর যখন সেখানে (সোস্যাল মিডিয়াতে) প্রবেশ করবেন কোনো এক সময় তা আপনার নিজেরই (মানসিক) চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং আমাদের অবশ্যই উচিত হবে না সোস্যাল মিডিয়াকে দোষারোপ বা নিন্দা করা। আমাদেরকে মনোনিবেশ করতে হবে কীভাবে আমরা এটা ব্যবহার করবো, তার ওপর।
অসাধারণ কতো নতুন বিষয়ে জানলাম।