লুইজ এলিজাবেথ গ্ল্যুকের কবিতা : ২

২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন লুইজ এলিজাবেথ গ্ল্যুক। গ্ল্যুকের লেখায় নোবেল দাতা গোষ্ঠী পেয়েছেন : “unmistakable poetic voice that with austere beauty makes individual existence universal.” আমরা উদ্যোগ নিয়েছি গ্ল্যুকের কবিতার ধারাবাহিক উপস্থাপনার। কয়েক কিস্তিতে বেশ কিছু কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করার পরিকল্পনা রেখেছি। আজ থাকছে অনুভব আহমেদের অনুবাদে ৫টি কবিতা।

অসময়ের অন্ধকার

কী করে তুমি বলো

পৃথিবী আমাকে সুখ দেবে? প্রতিটি জিনিসের জন্ম হয়েছে আমার ভার হতে,

আমি পারবোনা তোমাদের সবার সাথে জিতে যেতে।

 

আর তুমি আমাকে বাধ্য করতে চাইছো,

তুমি বলতে চাইছো

তোমাদের মধ্যে কে বেশি মূল্যবান

কে অবিকল আমার মতো।

 

তুমি ধরে আছো একটা বিশুদ্ধ জীবনের উদাহরণ, বিচ্ছিন্ন সংগ্রামে নিজেকে পাওয়ার –

 

কী করে বোঝাবে আমাকে তুমি?

যখন তুমি নিজেই জানোনা নিজেকে?

তোমার স্মৃতি অতোটা প্রখর নয়, যতোটা আমি হেঁটে এসেছি দূর

 

ভুলে যেওনা তুমি আমারই উত্তরসূরি।

 

তুমি কষ্ট পাচ্ছো এই জন্য নয় যে, তোমাকে স্পর্শ করছে প্রতিটা জিনিস

বরং এজন্য যে, তুমি জন্মেছো,

তুমি জীবনে আছো তা আমার থেকে আলাদা।

 

এপিথ্যালিয়াম

সেখানে যারা ছিলো, তাদের শরীর কেবলই আয়োজন।

আমি দেখতে এসেছিলাম আসলেই কী।

কান্নার বাষ্প হয়ে।

এই অসীম বেদনার পৃথিবীতে আকার ধরে রাখা শরীর, কার ক্ষুধার ভাষা –

 

আর এই ঘর, গোলাপের বাকশো

কী বলছে ওরা

এই কোলাহলে। বিবাহের দুঃসহ অনুদানে

স্বামী স্ত্রীর সবুজ পাহাড়ে চড়া সোনালি আলোয়

যতোক্ষণ না পাহাড় ফুরোয়।

একটা আকাশ না আটকায়।

 

এই আমার হাত, সে বললো কিন্তু সেগুলো অনেক পুরোনো

এই আমার হাত যা তোমাকে আর আঘাত করবেনা।

 

*এপিথ্যালিয়াম : নববধূর উদ্দেশ্যে রচিত কবিতা অথবা তার উদ্দ্যেশে গাওয়া গান

 

শীতের শেষে

এ পৃথিবীতে, একটা পাখি কালো ডালপালার আড়ালে নির্জনে ডেকে বলে যায়

তুমি জন্মাতে চেয়েছিলে, আমি তোমাকে জন্মাতে দিয়েছি।

কখন আমার হাত ভরে গেছে তোমার আনন্দে?

 

অন্ধকার আর আলোর শিহরণে নিমজ্জিত যেন তুমি আনকোরা, যেন নিজেকে নতুন করে বলছো

সমস্ত উজ্জ্বলতা নিয়ে, সমস্ত দ্যুতি নিয়ে

ভাবছো না কী হারাতে হবে,

ভাবছো না আমার আওয়াজ অথবা যেকোনো কিছু তোমারই অংশ —

তুমি আর শুনতে পাবে না অন্য পৃথিবীতে

স্পষ্টভাবে আবার

পাখির কুজন অথবা মানুষের কান্না,

 

আবছা স্বরে, ফিরে আসা প্রতিধ্বনিতে

সেই সব শব্দ যারা বলে চলেছে বিদায়, বিদায় —

এই অবিরাম ত্রস্ত

যা বেজে যাচ্ছে আমাদের মাঝে।

 

সুখ

একজন পুরুষ আর একজন নারী শুয়ে আছে বিছানায়। এখন সকাল।

আমি ভাবছি এখনই তারা জেগে উঠবে।

পাশে টেবিলে ফুলদানিতে লিলি

সূর্যের আলো ছুঁয়েছে তাদের ঠোঁট

আমি ওকে দেখলাম ওর দিকে পাশ ফিরে নীরবে ডাকলাম নাম ধরে, তার মুখ গভীর

জানালার কাছে

একবার

দুবার

একটা পাখি ডেকে চলেছে

আর তখনই সে তাকালো, তার শরীর ছেঁয়ে আছে আমার নিঃশ্বাসে।

আমি চোখ খুললাম, তুমি আমাকে দেখছো। সারাঘরময় ছুটে চলেছে রোদ

তাকাও আমার দিকে, তুমি বললে

আমাকে আরও নিবিড় করে ধরো তোমার কাছে

আমি তোমার আয়না হবো।

কী শান্ত তুমি। একটা জ্বলন্ত চাকা আমাদের পার করে গেলো ধীরে।

 

ঘোড়া

ওই ঘোড়াগুলো তোমাকে কী দিতে পারে যা আমি দিতে পারিনা?

 

আমি তোমাকে দেখি যখন তুমি একা,

যখন তুমি খামারের পেছন দিকটায় ঘুরে বেড়াও,

তোমার হাত ঢেকে থাকে কালো পশমে।

 

আমি জানি কেনো তোমার এ নীরবতা :

অবজ্ঞা, ঘৃণা আমার প্রতি, বিয়ের প্রতি।

এখনও তুমি চাও আমি তোমাকে স্পর্শ করি;

তুমি কাঁদো শিশুর মতো, কিন্তু আমি যখন তাকাই তখন তোমার শরীরে  কোনও সারল্য নেই

কিছুই নেই, আমি জানি। আছে শুধু তাড়া

আমার আগে মরবার।

স্বপ্নে; আমি দেখি তুমি আর ঘোড়া

একটা শুকনো মাঠ ঘুরে বেড়াচ্ছ, তোমরা একসাথে হাঁটছো, অন্ধকারে, তোমাদের কোনও ছায়া নেই।

কিন্তু আমি টের পাই তারা আমার দিকে এগিয়ে আসছে, নিঃশব্দে রাতের গভীরে

তারাই তাদের অধীশ্বর।

 

তাকাও, তুমি কি ভাবো আমি বুঝিনা?

পশু কি

জীবনের এই অংশে এসে?

 

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here