স্বপ্নগাঁথা

বর্তমান জনসংখ্যার একটা বড় অংশ তরুণ। অথচ সিংহভাগ তারুণ্যের দেশে তরুণদের নিয়ে ভাবনা নেই কারো। খোদ তরুণরাও তারুণ্যের সম্ভাবনা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।

 

পর্যায়ক্রমে সকল জাতিরই একটা সময় আসে যে সময়টাতে তার অধিকাংশ জনগণ থাাকে তরুণ। জাতি হয় তারুণ্যে ভরপুর। পৃথিবীর বহু জাতি এই তারুণ্যের উপযুক্ত ব্যবহার করে সমৃদ্ধ করেছে নিজেদের। অথচ আমাদের ক্ষেত্রে এমনটা দৃশ্যমান নয়। নেই কর্মে স্বাধীনতা, নেই সমান সুযোগ সুবিধা, নেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ। অথচ এই প্রজন্ম দেশ গড়ার কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু খুব একটা অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না তরুণদের। সুযোগ দিতে হবে তরুণদের ভাবতে হবে অধিকাংশ তরুণের চাওয়া কী? ‘‘এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান’’ ফলাফলশূন্য জীর্ণ হয়ে আঁকড়ে ধরে থাকার কোন মানে নেই।

 

তারুণ্যের স্বপ্ন, সাক্ষর রেখে যেতে চাই। কর্মে জীর্ণ জরাকে পরিবর্তন করে সজীব করতে চাই সমাজকে। গতিশীলতা আনতে চাই অচল অবস্থার। সাহসী হাত বাড়াতে চাই সংস্কারে। সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করতে চাই। যার যার অবস্থান ও যোগ্যতা নিয়ে যোগ দিতে চাই পরিবর্তনের মিছিলে। একগুঁয়ে জীবনকে পরিহার করে তারুণ্য বিশ্বাস করে পরিবর্তনে। একজন তরুণ হিসেবে ভালো লাগে ভাবতে, চিন্তা করতে, শিল্পের সংস্পর্শে থাকতে। যে ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে শ্রেণি-বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা আর মানুষের প্রকৃত মুক্তি। আমাদের শ্রেণি-বৈষম্য দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে, যা আমাদে ঐক্যে পৌঁছাতে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।

 

আর মানুষের রাজনীতিবিমুখ হওয়ার পিছনে রয়েছে সুষ্ঠ রাজনৈতিক চর্চার অভাব। ফলস্বরূপ রাজনীতির সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা কমে যাচ্ছ। রাজনীতিতে  বেড়ে যাচ্ছে অতিমাত্রায় তেলবাজি, পাওয়ায় প্রাকটিস, সমালোচনা গ্রহণ না করার মনোভাব। অধিকাংশই রাজনীতিকে দেখছে অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের মাধ্যম হিসেবে যার দরুণ রাজনীতিতে ব্যাবসায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও কিছু শ্রেণি  আাছে যারা নিজেদের ক্যারিয়ার নির্মাণের জন্য রাজনীতিকে ব্যাবহার করছে। এক কথায় রাজনীতিতে জাতীয় স্বার্থের তুলনায় ব্যক্তি স্বার্থ অধিক প্রাধান্য পাচ্ছ। তৃণমূল থেকেই ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতির চর্চা হচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক আদর্শের ও রাজনৈতিক দর্শনের চর্চা হচ্ছে না।

 

এই সব দিক থেকে অনেক বিষয়ই হতাশার, যেমন : দুর্নীতি, বেকার সমস্যা, দারিদ্র্যের হার, বৈষম্যমূলক আর্থসামাজিক অবস্থান, ম্যাগালোমেনিয়া, হলুদ সাংবাদিকতা এবং মনোপলি আচরণ, ভিক্ষাবৃত্তি, অমীমাংসিত যৌনতা, জনগনের অধিক মাত্রায় স্বার্থবাদী ও পল্টিবাজ প্রবণতা।

 

স্বাধীনতার এতো বছর পরেও আমরা কোন একটা জাতীয় ঐক্যের জায়গা তৈরি করতে পারলাম না যার মাধ্যমে দল, মত, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে একত্রিত হতে পারি আমরা। আমরা হিন্দু এবং মুসলমানই থেকে গেলাম, বাঙালি হতে পারলাম কোথায় আদতে। মননে ও চেতনায় বাংলাদেশী হতে পারলাম কতটুক?

 

রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া একটা শ্রেণি-বৈষম্যহীন, ধর্মীয় ভেদাভেদহীন, শোষণহীন রাষ্ট্র ব্যাবস্থা। থাকবে চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। যেখানে আমরা প্রত্যেকেই আমার থেকে আমাদের হয়ে যাবো। অধিকারের দিক থেকে প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেকটা নাগরিক হবে সমান। বাজেটের সুষ্ঠ ও সুপরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত হবে, যেন নিশ্চিত হয় মানুষের মৌলিক অধিকার। থাকবে জীবনধারণ ও জীবিকার নিশ্চয়তা। সর্বোপরি প্রত্যেকটা জীবন হবে নিরাপদ।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here