প্রথম কিস্তি
চরিত্র
ফারহান ফেরদৌস
আনিকা রাশিদ
প্রত্যয় সাহান
মিথিলা মৃন্ময়ী
প্রত্যেকেই চল্লিশোর্ধ
লিভিং রুম
ফারহান ফেরদৌস-আনিকা রাশিদ এবং প্রত্যয় সাহান-মিথিলা মৃন্ময়ী দম্পতিদ্বয় মুখোমুখি বসে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বুঝবো যে, এটা প্রত্যয় সাহান-মিথিলা মৃন্ময়ী দম্পতির বাসা এবং কিছুক্ষণ আগেই এ বাসায় ফারহান ফেরদৌস এবং আনিকা রাশিদ এসেছে। বলা বাহুল্য, দম্পতিদ্বয়ের মধ্যে পরিচয়-ও মাত্রই হয়েছে। লিভিং রুমের মাঝখানে একটি কফি টেবিল। টেবিলটি আর্ট বইয়ে ভর্তি। এক পাশে ফুলদানি, সেখানে বড় বড় দুইটি টিউলিপ ফুলের তোড়া। সবাই গম্ভীর কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহনীয়।
মৃন্ময়ী : আচ্ছা আমিই শুরু করছি তাহলে। এখানটায় আমি যা বলতে চেয়েছি সেটা আমাদের ভাষ্য। অবশ্যই, আপনাদেরটাও শুনবো আমরা। পুরোটা পড়ছি না…আ…আ…আ… হ্যাঁ এখান থেকে…নভেম্বরের ০৩ তারিখ বিকেল পাঁচটায় রমনা পার্কে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ১১ বছরের রামিন ‘অস্ত্রসজ্জিত’ অবস্থায় একটি লাঠি দিয়ে আমাদের সন্তান শৌনকের মুখে আঘাত করে। আঘাতের ফলে ওর সামনের পাটির দুটি দাঁত ভেঙে যায়। উপরের ঠোঁটে কয়েকটি সেলাই পড়ে। শুধু তাই নয় এ আঘাতের ফলে ওর সামনের পাটির ডান পাশের দাঁতের নার্ভ সিস্টেমের বেশ ক্ষতি হয়েছে।
ফারহান : (সেলফোন ব্রাউজ করতে করতে) এক্সকিউজ মি! আপনি কি ‘অস্ত্রসজ্জিত’ বললেন?
মৃন্ময়ী : অস্ত্রসজ্জিত? আচ্ছা আপনার বোধ হয় শব্দটি পছন্দ হয়নি, তাই না? তাহলে আমরা কী বলতে পারি প্রত্যয়, লাঠি…লাঠি হাতে…মানে কি বলা যায়! ‘লাঠিসজ্জিত’, কি চলবে এটা?
ফারহান : (এখনও সেলফোন ব্রাউজ করতে করতে) লাঠিসজ্জিত? কী জানি!
প্রত্যয় সাহান : হ্যাঁ, লাঠিসজ্জিত।
মৃন্ময়ী : (সংশোধন করে নিয়ে) হ্যাঁ, লাঠিসজ্জিত। মূল কথা হলো, রমনা পার্ক আমাদের কাছে সবসময়ই খুব নিরাপদ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো না।
প্রত্যয় সাহান : একদম ঠিক! আমরা সবসময়ই রমনা পার্ককে ইয়েস আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নো বলেছি।
মৃন্ময়ী : একদম। যাই হোক। এখানে আসার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। যা হয়েছে সেটা নিয়ে কথা না বলে আবেগতাড়িত হয়ে একটা অন্ধ কানাগলির মতো জায়গায় আটকে থাকার কোনো মানে হয় না।
আনিকা : আপনাদেরও ধন্যবাদ প্রাপ্য। এটা বলতেই হবে।
মৃন্ময়ী : না, না, ধন্যবাদ বলার মতো কিছু তো করিনি আমরা! সৌভাগ্যক্রমে, আমরা এখনো একসাথে বসে কথা বলার মতো সভ্য। এর ভেতরের আর্টকে তো আর অস্বীকার করা যায় না…
ফারহান : যেটাতে বাচ্চারা এখনো অভ্যস্থ হয়ে উঠতে পেরেছে বলে মনে হয় না। অ্যাটলিস্ট আমাদেরগুলো তো অবশ্যই না।
আনিকা : আচ্ছা যে নার্ভটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বললেন, তার সাথে যুক্ত দাঁতটার এখন কী হবে?
মৃন্ময়ী : আমরা এখনো ঠিক জানি না। জানেনই তো আজকালকার ডাক্তাররা আগবাড়িয়ে কিছু বলার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক। বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে নার্ভটা পুরোপুরি এক্সপোস্ড হয়নি।
প্রত্যয় : অল্প একটু দেখা যাচ্ছে।
মৃন্ময়ী : হু, দাঁতের নিচে নার্ভের অল্প একটু বের হয়ে আছে আর বাকিটা ঢাকাই আছে। ডাক্তাররা তাই নার্ভের সাথে সংযুক্ত দাঁতটি এখনি তুলে ফেলতে চাইছেন না।
প্রত্যয় : আর কয়েকটা দিন তারা দেখতে চাইছেন।
মৃন্ময়ী : অবশ্যই এন্ডডন্টিক সার্জারিটা এভয়েড করা গেলে তো সবচেয়ে ভালো হয়।
আনিকা : হ্যাঁ…তা তো অবশ্যই…
মৃন্ময়ী : তাই, নার্ভটা নিজে থেকে ঠিক হয় কি না তা দেখার জন্য কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে চাইছেন ডক্টররা। অন্তবর্তীকালীন এই সময়ে নার্ভটাকে একটা সুযোগ দিতে চাইছেন তারা। এই আর কি।
প্রত্যয় : এর মধ্যেই তারা দাঁতে সিরামিক ক্রাউন বসাবে।
মৃন্ময়ী : যাই হোক না কেন ১৮’র আগে তো আর ইমপ্ল্যান্ট করা যাবে না।
প্রত্যয় : হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই। নো ইমপ্ল্যান্ট বিফোর এইটিন।
মৃন্ময়ী : হু…জানেন নিশ্চয়ই…বাড়ন্তির সময়টাতে স্থায়ী কোনো ইমপ্ল্যান্ট করা যায় না।
আনিকা : তা তো অবশ্যই। আমার ধারণা দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে।
মৃন্ময়ী : উই হোপ সো (একটু বিরতি নেয়)।
আনিকা : বাহ্! এই টিউলিপগুলো তো অসাধারণ!
মৃন্ময়ী : ওহ ওগুলো? ফুলার রোডের ঐ পাশের কর্নারে একটা ফুলের দোকান আছে না ওখান থেকে আনা। ঐ যে রাস্তার শেষ মাথার দোকানটা।
আনিকা : ও আচ্ছা।
মৃন্ময়ী : প্রতিদিন সকালে আসে, সাভার থেকে। ৫০টার একটা তোড়া ২০০০ টাকা।
আনিকা : তাই নাকি!
মৃন্ময়ী : হু…একটু বেশি…কিন্তু কি আর করা! ফুলার রোডের শেষ মাথার ঐ দোকানটার কথা বলছি।
আনিকা : হ্যাঁ, হ্যাঁ…বুঝতে পেরেছি আমি।
মৃন্ময়ী : ব্যাপার কি হয়েছে জানেন…শৌনক তো রামিনের কথা বলতেই চাইছিল না।
প্রত্যয় : হ্যাঁ একদমই বলতে চাইছিল না।
মৃন্ময়ী : অবাক করা ব্যাপার! বাচ্চাটার মুখ থ্যাবড়ানো, দাঁত গেছে পড়ে অথচ কথাই বলতে চাইছিল না বিষয়টা নিয়ে।
আনিকা : আচ্ছা।
প্রত্যয় : সত্যি বলতে কি রামিনকে শনাক্ত করতে হলে ওকে তো পুরো বিষয়টা বন্ধুদের সামনে বলতে হতো। আর এটাতেই ওর আপত্তি। কিছুই বলতে চাইছিল না। এটা বাহাদুরি ছাড়া আর কিছু না, মৃন্ময়ী।
মৃন্ময়ী : অবশ্যই। কিন্তু বাহাদুরিটাও তো সাহসের ব্যাপার, তাই না?
আনিকা : তা তো বটেই। তাহলে আপনারা কীভাবে…ইয়ে…মানে…মানে আমি বলতে চাইছি যে, তাহলে আপনারা রামিনের নাম জানলেন কী করে?
মৃন্ময়ী : আচ্ছা। আমরা শৌনককে বোঝালাম যে, ঐ ছেলেটির পক্ষ নিয়ে তুমি আসলে ওকে হেল্প করছো না।
প্রত্যয় : হ্যাঁ…বললাম যে, তুমি যদি না বলো কে মেরেছে তাহলে ঐ ছেলেটা যাকে তাকে যখন-তখন মারতে থাকবে, ও বুঝবেই না যে শোধরানোর দরকার আছে।
মৃন্ময়ী : আর আমরা যদি ঐ ছেলেটির বাবা-মা হতাম তাহলে আমরাও পুরো বিষয়টা জানতে চাইতাম।
আনিকা : একদম ঠিক বলেছেন।
ফারহান : হ্যাঁ… (সেলফোন ভাইব্রেট করে।) এক্সকিউজ মি… (সে ওখান থেকে উঠে যায়। ফোনে কথা বলার সময়টায় সে পকেট থেকে একটা পত্রিকা বের করে।) হ্যাঁ, সৌমিক, থ্যাংক্স ফর কলিং। হ্যাঁ…হ্যাঁ…আজকের টাইম্স-এ এসেছে। দাঁড়াও তোমাকে পড়ে শোনাচ্ছি। ল্যানসেট-এ প্রকাশিত একটি আর্টিকেল অনুযায়ী এবং যেটা গতকালের ফিনান্সিয়াল টাইম্স-এও এসেছে, দুজন অস্ট্রেলিয়ান গবেষক প্রমাণ করেছেন যে, এক্সিমকো-ফার্মা ল্যাবরেটরিজে প্রস্তুতকৃত এন্ট্রিল নামক হাইপার টেনসিভ বেটা ব্লকার-এর নিউরলজিক্যাল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। আর এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কানে না শোনা থেকে সারা শরীর নিঃসাড় হয়ে যাওয়া পর্যন্ত হতে পারে…এখন আমায় বলো তোমার এই মিডিয়া ওয়াচডগটা কে? হ্যাঁ…হ্যাঁ এটা অবশ্যই সমস্যা। না…না…সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুই সপ্তাহের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক মিটিং। এগুলো সামাল দেয়ার জন্য তোমার হাতে কিছু আছে? বলো আছে কিছু? ওকে…হ্যাঁ, সৌমিক, সৌমিক…পিআর-এ কাজ করে তোমার ঐ মেয়েকে জিজ্ঞেস করো তো এইসব বিষয় আর কোথাও এসেছে কিনা।…হ্যাঁ জানাও আমাকে। (ফোন রাখে সে) দুঃখিত।
প্রত্যয় : তাহলে আপনি একজন…
ফারহান : ল ইয়ার।
আনিকা : আর আপনি?
প্রত্যয় : আমি? আমার ঐ একটা হোলসেল কোম্পানি আছে, বাসার জিনিসপত্র বিক্রি করি আর কি। আর মৃন্ময়ী লেখক। পাশাপাশি একটা আর্ট-হিস্ট্রি বইয়ের দোকানে কাজ করে।
আনিকা : লেখক?
মৃন্ময়ী : ইথিওপিয়ান-ইরিট্রিয়ান যুদ্ধের পর সেবা সভ্যতা নিয়ে নতুন করে প্রত্নখনন শুরু হয়েছিল। আমি সেই সভ্যতা নিয়ে একটি কালেকশন লেখায় কন্ট্রিবিউট করেছিলাম। আর আসছে জানুয়ারিতে দারফুর ট্র্যাজেডি নিয়ে লেখা আমার একটা বই আসছে।
আনিকা : তাহলে তো আপনি আফ্রিকা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।
মৃন্ময়ী : হ্যাঁ, ঐ অঞ্চলটা নিয়ে আমার আগ্রহ আছে বলতে পারেন।
আনিকা : শৌনক কি একাই না ওর আরো ভাই-বোন কেউ আছে?
মৃন্ময়ী : হ্যাঁ, হ্যাঁ ওর ন’ বছর বয়েসি একটা বোন আছে। প্রকৃতি নাম। কাল রাত থেকে বাবার ওপর খুব রেগে আছে। ওর বাবা বাসার পোষা খরগোশটাকে বের করে দিয়েছে।
আনিকা : ঘর থেকে বের করে দিয়েছে!?
প্রত্যয় : হ্যাঁ। বের করে দিয়েছি! এই ফাজিল প্রাণীটা রাতভর বিশ্রী শব্দ করে আর দিনভর পড়ে পড়ে ঘুমায়। কাল রাতে এটা এতো বাজে শব্দ করছিল যে শৌনক আর নিতেই পারছিল না। আর সত্যি বলতে কি, অনেক দিন ধরেই ব্যাটাকে ভাগানোর একটা বুদ্ধি করছিলাম আমি। আর কাল রাতেই সে সুযোগটা চলে এলো। তাই নিজেকে বোঝালাম ‘ওকে যথেষ্ট হয়েছে প্রত্যয়, আর না’ আর তারপর ব্যাটাকে ধরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে এলাম। আমার ধারণা ছিল এরা ঝোপঝাড়-গর্তটর্ত খুব পছন্দ করে কিন্তু না কাল রাত থেকে ব্যাটা বাড়ির সামনের ফুটপাতে অবশ হয়ে বসে আছে। আমি বুঝলাম না। না এগুলো পোষা প্রাণী, না বন্য। আমি ঠিক বুঝতেই পারলাম না এদের ন্যাচারাল হ্যাবিটটা কি! জঙ্গলে নিয়ে ফেলে আসুন দেখবেন ওরা একদম খুশি হবে না। তাই ঠিক বুঝতেই পারছি না এরা আসলে কোথায় বিলং করে।
আনিকা : আপনি কি সত্যিই ওটাকে বাইরে ফেলে এসেছেন?
মৃন্ময়ী : হ্যাঁ, খরগোশটাকে বাইরেই রেখে এসেছে আর তারপর থেকেই প্রকৃতিকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে ওটা নিজে থেকেই চলে গেছে। কিন্তু ও বিশ্বাসই করছে না।
ফারহান : এটা কি আজ সকালের কথা?
প্রত্যয় : ঠিক আজ সকাল না। বলতে পারেন কাল রাত আর আজ সকাল মিলে।
মৃন্ময়ী : আর আপনি? কী করছেন আপনি?
আনিকা : আমি ওয়েল্থ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করি।
মৃন্ময়ী : এটা সম্ভব কি না আমি জানি না…মাফ করবেন…এভাবে জিজ্ঞেস করছি বলে, রামিন কি শৌনককে স্যরি বলবে?
ফারহান : হ্যাঁ, ওরা নিজেরা কথা বলে নিলেই সবচে’ ভালো হয়।
আনিকা : কিন্তু রামিনের স্যরি বলা উচিত, ফারহান। ওর শৌনককে বলা উচিত যে, সে দুঃখিত।
ফারহান : হ্যাঁ, তা তো বটেই। তা তো বটেই।
মৃন্ময়ী : কিন্তু সে কি আসলেই স্যরি ফিল করছে?
ফারহান : ও বুঝতে পারছে যে, সে কি করেছে। কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতাটা এখনো ধরতে পারেনি। বয়সও তো খুব কম…মাত্র ১১।
মৃন্ময়ী : হ্যাঁ…১১, কিন্তু একেবারে বাচ্চা বলতে যা বোঝায় তো সে নিশ্চয়ই না, তাই না?
প্রত্যয় : কিন্তু অ্যাডাল্টও বলা যায় না ওকে, মৃন্ময়ী। মাফ করবেন, আপনাদের কিছু অফারও করিনি আমরা। চা বা কফি কিছু চলবে? আচ্ছা, ভালো কথা ঐ ভাপা পিঠাগুলোর কিছু কি আছে এখনো, মৃন্মো? অসাধারণ ছিল পিঠাগুলো!
ফারহান : এসপ্রেসো হলে আমি না করবো না।
আনিকা : শুধু পানি।
প্রত্যয় : (মৃন্ময়ী যখন ভেতরে যাচ্ছিল তখন তাকে থামিয়ে) আমার জন্যেও এসপ্রেসো…আর হ্যাঁ পিঠাগুলো যদি কিছু থেকে থাকে। (একটু বিরতির পর, হঠাৎ অপ্রাসঙ্গিকভাবে) বুঝলেন আমি সবসময়ই যেটা বলি, আমরা হলাম অনেকটা ঐ কামারের মাটির মতো চাইলেই ওটা দিয়ে যেকোনো আকৃতি আপনি দিতে পারেন। হ্যাঁ শেষ পর্যন্ত হয়তো খুব ভালো কিছু হবে না। কিন্তু চেষ্টা করতে দোষ কি! ভালো কিছু হবে না যে তা কে বলতে পারে?
আনিকা : হু…
প্রত্যয় : এই ভাপা পিঠাগুলো আপনাদের চেখে দেখতেই হবে। ভালো ভাপা পিঠা এখন বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি!
আনিকা : হু, ঠিক বলেছেন।
ফারহান : আপনার কোম্পানি কী বিক্রি করে বললেন যেন?
প্রত্যয় : মোস্টলি হার্ডওয়্যার। ঘরের প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার। দরজার লক, ডোরনব, সল্ডারিং আয়রন এইসব আর কি। সস্প্যান, ফ্রাইপ্যানও পাওয়া যায়।
ফারহান : এ ব্যাবসায় তাহলে পয়সার ঝনঝনানি ভালোই আছে, তাই না?
প্রত্যয় : না যেভাবে বলছেন অতোটা না। শুরুটা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু এখন যদি প্রতিদিন আমি যাই আর কর্মীদের একটু পুশ করি তাহলে চলে যায় কোনোমতে। অন্ততপক্ষে, টেক্সটাইলের মতো এটা কোনো মৌসুমী ব্যাবসা না। যদিও গ্রাহক চাহিদার কথা মাথায় রেখে ঈদ, ক্রিসমাস বা পুজোর সময় আমরা আলাদা কিছু আইটেমও রাখি।
ফারহান : আমি নিশ্চিত যে…
আনিকা : আচ্ছা আপনি যখন দেখলেনই যে, খরগোশটা ওভাবে অবশ হয়ে ফুটপাতে পড়ে আছে, তখন আবার ঘরে ফিরিয়ে আনলেন না কেন?
প্রত্যয় : কারণ আমি ওটাকে তুলতে পারতাম না।
আনিকা : বুঝলাম না। কিন্তু আপনিই তো ওটাকে তুলে রাস্তায় নিয়ে ফেলে এসেছেন বললেন।
প্রত্যয় : আমি খাঁচাসহ ওটাকে নিয়ে রাস্তায় ছেড়ে এসেছিলাম। এসব দাঁতাল প্রাণী হাত দিয়ে ধরতে আমার ভালো লাগে না।
(এর মধ্যে মৃন্ময়ী একটা ট্রে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। ট্রে-তে পানীয় আর ভাপা পিঠা দেখা যায়।)
মৃন্ময়ী : বুঝলাম না কে যেন পিঠাগুলো ফ্রিজে রেখেছিল। মনিকা সবকিছুই ফ্রিজে তুলে রাখে। কিচ্ছু বলা যায় না ওকে। চিনি ক’ চামচ?
ফারহান : নো, থ্যাংক্স। ভাপা পিঠায় কী দিয়েছেন?
মৃন্ময়ী : গুড়, আম আর নারকেল।
আনিকা : আম আর নারকেল? ভাপা পিঠায়?
মৃন্ময়ী : আমার নিজের রেসিপি। (সে ভাপা পিঠাগুলো কেটে সবাইকে ভাগ করে দেয়) খেতে একটু ঠাণ্ডা লাগবে…দুঃখিত।
আনিকা : না, না ঠিক আছে। আম আর নারকেল দিয়ে ভাপা পিঠা, প্রথম খাচ্ছি আমি।
মৃন্ময়ী : আম আর নারকেল, একটু কেতাবি শোনাবে কিন্তু এর মাঝে একটা ট্রিক আছে।
আনিকা : ট্রিক?
মৃন্ময়ী : হ্যাঁ, আমগুলোকে একটু মোটা স্লাইস করে কাটতে হবে নইলে বেশি সেদ্ধ হয়ে গলে যেতে পারে।
আনিকা : ও হ্যাঁ, তাই তো।
প্রত্যয় : ও কিন্তু আপনাকে আসল সিক্রেটটাই বলছে না।
মৃন্ময়ী : আহ ওদেরকে আগে টেস্ট করতে দাও না।
ফারহান : উম…বেশ টেস্টি। অসাধারণ।
আনিকা : হ্যাঁ, স্বাদটা খুবই ভালো।
মৃন্ময়ী : …জিঞ্জারব্রেড গুঁড়া!
আনিকা : ব্রিলিয়ান্ট!
মৃন্ময়ী : সত্যি বলতে কি এটা আমি প্রত্যয়ের মায়ের কাছ থেকে শিখেছি।
ফারহান : জিঞ্জারব্রেড, ডেলিশাস…যাই হোক বাজে একটা ঘটনার পরেও আমরা নতুন একটা রেসিপি পেলাম।
মৃন্ময়ী : শুধু যদি আমার ছেলেটা দুটো দাঁত না হারাতো!
ফারহান : অবশ্যই, অবশ্যই। আমি আসলে ওটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম।
আনিকা : তাই নাকি! তাহলে আমাকে বলতেই হবে তোমার বলার ধরনটা খুবই অদ্ভুত!
ফারহান : না…না…না…একদমই না…আমি আসলে…(তার সেলফোন আবার ভাইব্রেট করে। সে স্ক্রিনের দিকে তাকায়।) আমাকে ফোনটা নিতেই হচ্ছে…স্যরি…হ্যাঁ.. সৌমিক…না, না, না…রিপ্লাই দেয়ার কথা কল্পনাতেও এনো না…এগুলো কন্ট্রভার্সিকে আরো উসকে দেবে…আর ইউ ইনস্যুর্ড? আই সেইড আর ইউ ইনস্যুর্ড? হুম…হুম…সিম্পটম্পগুলো কী একটু বলবে? এটাক্সিয়া! এটাক্সিয়া কী? অসাড় হয়ে যাওয়া…আচ্ছা। স্ট্যান্ডার্ড একটা ডোজ দেবার পর কী হয়? হু…হু…এসব তুমি জানো ক’দিন ধরে? কিন্তু এ পুরোটা সময় একবারের জন্যও তোমার এসব মনে পড়েনি? সব মিলিয়ে কতো হবে? আহ্…বুঝতে পেরেছি। আচ্ছা দেখছি আমি…(ফোন রেখে সে আবার একটি নাম্বারে ডায়াল করে। পুরোটা সময় প্লেটে থাকা পিঠার স্লাইসগুলো আনমনে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করে।)
আনিকা : ফারহান, ফোনটা রেখে আমাদের সাথে জয়েন করবে তুমি?
ফারহান : হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই। আসছি আমি…(এবার ফোনে কথা বলে) রোল্যান্ড?… তারা এই ঝুঁকিটা সম্পর্কে দু’বছর ধরে জানত…হ্যাঁ একটা ইন্টার্নাল রিপোর্টে এসেছিল এটা কিন্তু রিপোর্টটিতে কোনো অবাঞ্ছিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে ফর্মালি আইডেন্টিফাই করা হয়নি। নারে ভাই, কোনো প্রিকোশন নেয়নি তারা। কোনো ইনস্যুরেন্সও নেই এমনকি অ্যানুয়াল রিপোর্টে এ সম্পর্কে একটা শব্দও লেখা হয়নি। বোঝো অবস্থাটা এবার। (ফোনের কলিগের সাথে একসাথে হেসে ওঠে) সবমিলিয়ে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলারের কথা বলছে তারা…এখন পুরোপুরি অস্বীকার করছে…আর ঐ গাধাটা চাইছে সে যেন পত্রিকায় একটা রিপ্লাই দিতে পারে। অবশ্যই এসব রিপ্লাই-টিপ্লাই আমরা দিতে চাই না। আর ধরো যদি গল্পটা স্প্রেড করেই তাহলে বরং আমরা একটা প্রেস রিলিজ ছাড়তে পারি- ধরো এমন, আমরা বললাম যে, শেয়ারহোল্ডাদের বার্ষিক মিটিংয়ের আগে কিছু ভুল তথ্য ফাঁস হয়েছে…হ্যাঁ, হ্যাঁ, ও আমাকে জানাচ্ছে…ওকে। (ফোন রাখে) আমি লাঞ্চ করিনি।
প্রত্যয় : প্লিজ নিজের মতো করে নিয়ে নিন।
ফারহান : ধন্যবাদ। আমার আবার লজ্জা-শরম একটু কম! যাই হোক কি বলছিলাম আমরা?
মৃন্ময়ী : আমরা বলছিলাম যে, অন্য কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা যদি মিলিত হতে পারতাম তাহলে আরো ভালো হতো।
ফারহান : ও হ্যাঁ, অবশ্যই ভালো হতো। বাই দ্য ওয়ে কি বলছিলেন এই ভাপাপিঠাগুলো আপনার মায়ের বানানো?
প্রত্যয় : না, না, রেসিপিটা শুধু আমার মায়ের কিন্তু বানিয়েছে মৃন্মো নিজেই।
মৃন্ময়ী : তোমার মা কিন্তু নারকেল আর আম একসাথে মেশায় না।
প্রত্যয় : না, তা ঠিক।
মৃন্ময়ী : ভাবতেই খারাপ লাগছে তাকে অপারেশন টেবিলে শুতে হবে!
আনিকা : আপনার শাশুড়ির কথা বলছেন? কীসের জন্য?
মৃন্ময়ী : হাঁটুতে একটা অপারেশন করাতে হবে।
প্রত্যয় : রিভল্ভ করে এমন ধাতু আর পলিইথিলিনের তৈরি একটি প্রসথেসিস তাঁর পায়ের ভেতর বসনো হবে। আর এটা শোনার পর মা বসে বসে ভাবছিল কেয়ামতের দিন কবর থেকে যখন তাকে তোলা হবে, তখন এসব জিনিস তো থেকে যাবে। (হাসি)
মৃন্ময়ী : বাজে কথা বলো না তো।
প্রত্যয় : আর সে বলে দিয়েছে তাকে যেন বাবার পাশে কবর দেয়া না হয়। বরং সে চায় চিটাগাং-এ তার মায়ের পাশে শুতে। ভাবতেই হাসি পাচ্ছে দুটো কফিন পাশাপাশি আর তার ভেতর থেকে দুজন কথা বলার চেষ্টা করছে। হাহাহাহাহা! (হাসিতে ফেটে পড়ে, তারপর থামে)
আনিকা : কি বলবো…আপনাদের ব্যবহারে মুগ্ধ না হয়ে কোনো উপায় নেই! বাজে ব্যাপারটাকে আর বাড়তে না দিয়ে এটাকে যে সহজভাবে আপনারা সামাল দিতে চাচ্ছেন সেটার জন্য প্রশংসা করতেই হয়।
মৃন্ময়ী : সত্যি বলতে কি, এরচে বেশি কিছু করার সুযোগও তো নেই আমাদের।
প্রত্যয় : হু।
আনিকা : মোটেই না। ক’জন বাবা-মা আছে যে নিজের বাচ্চার এমন সময় এতোটা সহজভাবে সামাল দিতে পারে। যদি শৌনক রামিনের দুটো দাঁত ভেঙে দিত, কথা দিতে পারছি না, তবে মনে হয় না আমি আর ফারহান আপনাদের সাথে এতটা ভালো আচরণ করতে পারতাম। আমি নিশ্চিত না, কিন্তু বলতে পারি আমরা হয়ত অতটা উদার নই।
প্রত্যয় : ওভাবে বলবেন না…আপনারাও নিশ্চয়ই উদার হতেন।
ফারহান : আনিকা ঠিকই বলেছে। এতটা নিশ্চিত নই।
প্রত্যয় : ও হ্যাঁ। কারণ, আমরা জানি অন্য কোনো একটা রাস্তা নিশ্চয়ই বের হতো তখন। (পয্)
মৃন্ময়ী : তাহলে রামিন কি কিছু বলবে এ বিষয়ে? কীভাবে দেখবে ঘটনাটাকে?
আনিকা : ও খুব বেশি কিছু বলছে না বিষয়টা নিয়ে। আমার ধারণা ও নিজেও এখনো শক্-এ আছে।
মৃন্ময়ী : না…না…এতটুকু তো নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে যে, সে তার বন্ধুর কী হাল করেছে?
ফারহান : না, না, না, ও আসলে বুঝতেই পারেনি যে, শৌনকের ঠোঁট-মুখ সে ভঁচকে দিয়েছে।
আনিকা : কী! কী বলছো এসব! রামিন খুব ভালোভাবেই জানে কী করেছে সে।
ফারহান : হ্যাঁ, হ্যাঁ…ও যে মাস্তানের মতো কাজ করেছে সেটা ও বুঝতে পেরেছে। কিন্তু আপনাদের ভাষ্যমতে ‘শৌনকের নাক-মুখ ভঁচকে দেয়া’ সম্পর্কে ও আসলে অতোটা…মানে কি বলে…শব্দটা কি…অবগত নয়…।
মৃন্ময়ী : ‘ভঁচকে দেয়া’শব্দটা যে কতোটা মর্মান্তিক তা আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে না। যাই হোক মর্মান্তিক হলেও শব্দটা আপনি ঠিকই বাছাই করেছেন।
ফারহান : আমার ছেলে আপনার ছেলের ঠোঁট-মুখ ভঁচকে দেয়নি।
মৃন্ময়ী : আপনার ছেলে আমার ছেলের ঠোঁট-মুখ ভেঙে দিয়েছে। পাঁচটার সময় আসুন তাহলেই ওর মুখ আর দাঁতের অবস্থা দেখতে পাবেন।
প্রত্যয় : সাময়িকভাবে ভেঙেছে।
ফারহান : ঠোঁটের ঐ ফোলাটুকু ঠিক হয়ে যাবে। আর দাঁতের কথা বলছেন! ভালো একজন ডেন্টিস্ট দেখান, খরচ যা আসবে আমরা দেবো।
প্রত্যয় : ধন্যবাদ। কিন্তু ওটা দেখার জন্য ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আছে। আমরা চাই ছেলেরা নিজেরা বিষয়টা মিটমাট করে ফেলুক যাতে ভবিষ্যতে এমন সমস্যা আর না হয়।
আনিকা : ওদের মধ্যে কথা বলানোর একটা ব্যবস্থা করি, কি বলুন?
প্রত্যয় : হ্যাঁ, সেটাই হওয়া উচিত।
মৃন্ময়ী : আমাদেরও কি সেখানে থাকা উচিত?
ফারহান : আমার মনে হয় না ওদের বাড়তি কোনো কোচের দরকার আছে। ওরা নিজেরা বিষয়টা মোকাবিলা করুক। ম্যান টু ম্যান।
আনিকা : ম্যান টু ম্যান, হাস্যকর কথা বলো না তো ফারহান! তোমার কথা শুনলে মনে হয় আমাদের ওখানে না থাকাটাই জরুরি। আসলে আমরা যদি ওখানটায় না থাকি সেটাই ভালো হয়, তাই না?
মৃন্ময়ী : আমাদের ওখানে থাকা উচিত কি অনুচিত এটা প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হলো ওরা কি নিজেরা কথা বলতে চায় কি না। মানে আমি বলতে চাইছি, ওরা একটা মিনিংফুল ডিসকাশন করবে কি না?
প্রত্যয় : শৌনক সেরকমটাই চায়।
মৃন্ময়ী : আর রামিন?
আনিকা : ওর মতামত জানতে চাওয়ার কিছু নেই।
মৃন্ময়ী : কিন্তু ওর তরফ থেকেই বিষয়টা আসতে হবে।
আনিকা : দেখুন রামিন একটা মাস্তানের মতো আচরণ করেছে। ওর কথা শোনার কিছু নেই।
মৃন্ময়ী : কিন্তু ওকে যদি চাপ দিয়ে শৌনকের সাথে কথা বলানোর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এটা ভালো কিছু হবে না।
ফারহান : ম্যাডাম, মানছি আমাদের ছেলেটা একটা অসভ্য আচরণ করেছে। কিন্তু ওর কাছ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত অনুতাপ প্রত্যাশা করাটা একটু অবাস্তব মনে হচ্ছে আমার কাছে। বুঝতে পারছেন? আমি সত্যিই খুব দুঃখিত যে আমাকে এখন অফিসে যেতে হবে। আনিকা তুমি থাকো এখানটায়। কি হয় আমাকে জানিয়ো। যে সিদ্ধান্তই নাও না কেন আমি কোনো কাজে আসবো বলে মনে হয় না। জানেন তো, মেয়েরা সবসময় মনে করে তাদের একজন পুরুষ বা স্বামী লাগবে! এমন যেন ওরা উপকারি জ¦ীন…এসে সবকিছু ঠিকঠাক করে বিদায় নেবে। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, এরা কোনো কাজেরই না। এরা শুধু পারে ঘটনাতে আরো বেশি প্যাঁচ লাগাতে!
আনিকা : আমি আসলে খুবই বিব্রত।। দুঃখিত আমিও থাকতে পারছি না। আসলে আমার হাজবেন্ড আমাদের ছোট বাচ্চাটার ট্রলার ঠেলার মতো ভালো বাবা কখনোই হয়ে উঠতে পারেনি।
মৃন্ময়ী : কি বলছেন কি! বাচ্চাকে হাঁটতে নিয়ে যাওয়া তো খুব আনন্দের একটা ব্যাপার! কিন্তু খুব অল্প সময়ের জন্য এই মুহূর্তগুলো টেকে। প্রত্যয় তো বাচ্চাদের টেক কেয়ার করাটা খুব এনজয় করে, তাই না প্রত্যয়? এমনকি, স্ট্রলার ঠেলতেও ওর খুব ভালো লাগতো। তাই না প্রত্যয়?
প্রত্যয় : হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই।
মৃন্ময়ী : আচ্ছা, তাহলে কী সিদ্ধান্ত হলো?
আনিকা : আপনারা কি একটু কষ্ট করে আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আমাদের বাড়ি আসতে পারবেন?
মৃন্ময়ী : সাড়ে সাতটায়?… কি বলো প্রত্যয়?
প্রত্যয় : সত্যি বলতে কি…
আনিকা : বলুন না…
প্রত্যয় : …মানে বলতে চাইছি…কীভাবে বলি…আমার মনে হয় রামিনের আমাদের এখানে আগে আসা উচিত।
মৃন্ময়ী : আমারও তাই মনে হয়।
প্রত্যয় : মানে শৌনকের শরীরের এমন অবস্থায় হাঁটাহাঁটি করাটা একদম ঠিক হবে না।
মৃন্ময়ী : হ্যাঁ…তাও ঠিক…একদম উচিত হবে না।
ফারহান : ব্যক্তিগতভাবে সাড়ে সাতটায় আমি কোথাওই থাকতে পারবো না। দুঃখিত।
আনিকা : যেহেতু তুমি কোনো কাজে আসবে না সেহেতু তোমাকে আমাদের দরকার হবে বলেও মনে হয় না।
মৃন্ময়ী : একই কথা বলতে হচ্ছে। কিন্তু ওর বাবা থাকলে ভালো হতো।
(এর মাঝে ফারহানের ফোন আবার ভাইব্রেট করে)
ফারহান : (ফোনে) আচ্ছা। কিন্তু সেক্ষেত্রে আজ সন্ধ্যায় না। ঠিক আছে? কিন্তু এক্সিকিউটিভ রিপোর্টে এসবের কিছুই তো উল্লেখ নেই। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো ঝুঁকিই এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। কোনো প্রমাণ নেই। (ফোন রাখে)
মৃন্ময়ী : তাহলে কাল?
ফারহান : আগামীকাল আমি হেগ-এ যাচ্ছি।
মৃন্ময়ী : আপনি হেগ-এ কাজ করেন?
ফারহান : আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে একটা মামলা লড়ছি আমি।
আনিকা : আসল বিষয় হলো বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে কথা বলুক। আমি সাড়ে সাতটায় রামিনকে এখানে নিয়ে আসবো। তারপর ওদের একা ছেড়ে দিতে পারি কথা বলার জন্য। আপনি মনে হয় তা চাচ্ছেন না। কনভিন্সড মনে হচ্ছে না আপনাকে।
মৃন্ময়ী : রামিন যদি ওর রেসপন্সিবিলিটি সম্পর্কে না জানে তাহলে দুটো চায়না কুকুর মুখোমুখি হলে যা হয় ওদের ক্ষেত্রেও তাই হবে। খুব বাজে কিছু হবে তাহলে।
ফারহান : আমি বুঝতে পারছি না আপনি কি বলতে চাইছেন? মানে রেসপন্সিবিলিটি বলতে কী বোঝাতে চাইছেন?
মৃন্ময়ী : দেখুন আমি নিশ্চিত যে, আপনার ছেলে অসভ্য নয়।
আনিকা : অবশ্যই সে অসভ্য নয়।
ফারহান : কিন্তু সে অসভ্য।
আনিকা : ফারহান, দিস ইজ অ্যাবসার্ড! কি বলছো এসব তুমি?
ফারহান : আমি বলছি যে, ও একটা অসভ্য।
প্রত্যয় : রামিন ওর আচরণকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে?
আনিকা : এ বিষয়ে ও কোনো কথা বলতে চায় না।
মৃন্ময়ী : কিন্তু তাকে কথা বলতে হবে।
ফারহান : হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওকে অনেক কিছুই করতে হবে। ওকে এখানে আসতে হবে, এসে কথা বলতে হবে, ঘটনাটার জন্য সে যে দুঃখিত এটা জানাতে হবে…বাবা-মা হিসেবে আমাদের যে দুর্বলতা ছিল এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। উই হ্যাভ টু ইম্প্রোভ। বাট ইন দ্য মিনটাইম প্লিজ বেয়ার উইথ আস্।
প্রত্যয় : প্লিজ কাম ডাউন…কাম ডাউন প্লিজ। এটা খুব বাজে হচ্ছে। এমনটা না করি আমরা।
মৃন্ময়ী : আমি শুধু ওর কথাই ভাবছি। রামিন, রামিনের কথা বলছি আমি।
ফারহান : আমি বুঝতে পেরেছি।
আনিকা : আসুন আর কিছুক্ষণের জন্য বসি আমরা, বসে কথা বলি?
প্রত্যয় : কফি হবে নাকি আর একবার।
ফারহান : কফি? হ্যাঁ, অবশ্যই।
আনিকা : আমাকেও দেবেন প্লিজ। থ্যাংক্স।
প্রত্যয় : ঠিক আছে মৃন্মো…আমি যাচ্ছি।
(বিরতি। আনিকা কফি টেবিলের উপর পড়ে থাকা আর্ট বইগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখে।)
আনিকা : আপনি তো দেখি একজন আর্ট লাভার।
মৃন্ময়ী : আর্ট, ফোটোগ্রাফ। একভাবে দেখলে এগুলোই আমার কাজ।
আনিকা : বেকন আমার বেশ ভালো লাগে।
মৃন্ময়ী : আচ্ছা হ্যাঁ, বেকন।
আনিকা : (পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে) বিভৎসতা…ঐশ্বর্য।
মৃন্ময়ী : হু, ক্যাওয়াস এন্ড ব্যালান্স।
আনিকা : ঠিক বলেছেন।
মৃন্ময়ী : রামিনের কি আর্টে আগ্রহ আছে?
আনিকা : তেমন একটা না। আপনার বাচ্চাদের?
মৃন্ময়ী : ওদের দেখাই আমরা। আসলে আমরা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে যে ফাঁকগুলো আছে সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করি।
আনিকা : আচ্ছা…!
মৃন্ময়ী : ওদেরকে আমরা বিভিন্ন লেখা পড়তে দেই। কনসার্ট আর বিভিন্ন এক্সিবিশনে নিয়ে যাই। সংস্কৃতির যে নিজস্ব একটা শক্তি আছে সেটা আমরা বিশ^াস করি।
আনিকা : একদম ঠিক বলেছেন আপনি।
(কফি হাতে প্রত্যয়ের প্রবেশ)
প্রত্যয় : এই ভাপা পিঠাগুলো কী কেক না ডেজার্ট জাতীয় কিছু? এটা একটা ভালো প্রশ্ন। কিচেনে আমি ভাবছিলাম। এটা ছোট্ট একটা স্লাইস। নিয়ে নিন।
মৃন্ময়ী : ভাপা পিঠা হলো কেক জাতীয়। আর এটা যেহেতু ফল দিয়ে তৈরি তাহলে এটাকে অন্য কোনো নাম দেয়া যেতে পারে।
ফারহান : আপনি তো দেখি আসলেই একজন ভালো কুক।
মৃন্ময়ী : আমার ভালো লাগে এটা। রান্নার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা কী জানেন? এটাকে আপনার ভালোবাসতে হবে।
প্রত্যয় : আপনাদের কি আরো কোনো বেবি আছে?