ফটোগ্রাফারের ডায়েরি

বাবার কাছে ছোটবেলায় অনেক পত্রিকা আসতো। বাংলার বাণী, ইত্তেফাক পরে জনকণ্ঠ, আজকের কাগজ আর অবজারভার। এর পাশাপাশি তখন কিছু সাপ্তাহিক আর মাসিক ম্যাগাজিনও বাড়িতে আসতো। খেলার পাতার পাশাপাশি অন্য কোনো খবরের চেয়ে পত্রিকার বিভিন্ন ছবির দিকেই দৃষ্টি যেত। ছোটবেলাটা কেটেছে গ্রামে। প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে যেতে বাজারে স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তোলার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দেখতে ভালো লাগত। পাশাপাশি স্টুডিওর দাদা দেখালেন কী করে ফিল্ম থেকে নেগেটিভ তৈরি করেন, অর্থাৎ ডার্করুমের কাজ করেন। সে এক বিস্ময় ছিল আমার কাছে। এভাবেই কাটতে থাকে দিন। ক্যামেরা চেয়েছিলাম বাবার কাছে। বললেন, এসএসসির গণ্ডি পেরোও তখন দেখা যাবে। এর মধ্যে ইয়াশিকার বহুল ব্যাবহৃত এমএফ২ ধার করে ছবি তুলি মাঝে মাঝে। আর স্টুডিওতে গিয়ে দাদার কাছে রেঞ্জ ফাইণ্ডার আর ইয়াশিকার এসএলআর ধরে দেখি।

এস এসসির পর ক্যামেরা এলো সেই ইয়াশিকার পয়েন্ট এন্ড শুট — যা পরে কলেজের পিকনিক থেকে ফেরার পথে হারাই। ছবি তোলার পোকা ততদিনে ঘাড়ে চেপে বসেছে। আর তা পাকাপোক্ত হলো প্রথম আলোতে একটা কর্মশালায় গিয়ে নাসির আলী মামুন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এবং ভূতত্বে পড়াকালীন ফিল্ডের দরুণ। যা পরে পুরোটাই নেশায় পরিণত হয়। তখন মূলত ল্যান্ডস্কেপ, সংগৃহীত স্যাম্পল আর পোর্টেট ছবিতে সীমাবদ্ধ ছিল। এর মধ্যে রাশান জেনিট ব্র্যান্ডের একটা এসএলআর, সাথে ৫০ মিলিমিটার লেন্সসহ কিনি। এভাবেই চলতে থাকে এই নেশার সাথে পথ চলা।

সম্ভবত সময়টা ২০০৩-এর  দিকে হবে। বন্ধু জাহাঙ্গীর বলল, তার পত্রিকায় আর্টিকেলের জন্য কোকিলের কিছু ছবি লাগবে। সেই প্রথম পাখির ছবির জন্য ঘোরা আর এটি যে পরে অন্য সকল সাবজেক্টকে পিছনে ফেলে দেবে তা ভাবিনি কখনো। সেই কোকিলের ছবি ছাপা হয় যুগান্তর পত্রিকায়। যদিও এর মধ্যেই প্রদায়ক হিসেবে কাজ করার দরুণ অনেক ছবি ছাপা হয়।  তারপর পাখি দেখাটা আসলে দৈনন্দিন কাজের অংশ হয়ে গেছে।

ফটোগ্রাফির শেখাটা মূলত বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও বই পড়ে হলেও পরে পাঠশালা থেকে বেসিক ফটোগ্রাফি ও এডভান্স বেসিক ফটোগ্রাফির ওপর কোর্স করেছিলাম। যা পরে স্ট্রিট ফটোজার্নালিজমের ক্ষেত্রে কাজে দেয়। স্পেশাল ফটোজার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করি পার্পল ম্যাগাজিন বাংলাদেশে প্রায় ৪ বছরাধিক সময়। আর পাশাপাশি ডেমোটিক্স নামক লণ্ডনভিত্তিক স্ট্রিট ফোটোজার্নালিজম সম্পর্কিত সংবাদ সংস্থায় কাজ করি। এ পর্যন্ত ২৫ টির মত গ্রুপ ও একটি একক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছি। বর্তমানে টেক্সাসের পাখি আর বুনোফুল নিয়ে কাজ করছি।

 

 

 

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here