তারুণ্য ও স্বপ্ন

তারুণ্য বলতেই আমার চোখের সামনে ভাসে হাস্যোজ্জ্বল একদল যুবক-যুবতী যারা স্বপ্ন দেখে পরিবর্তন ও সংশোধনের। আমি একটি ছোট্ট মফস্বল শহরে বড় হয়েছি। এখানকার অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর থাকে অসংখ্য সীমাবদ্ধতা। তারুণ্যে পৌঁছানোর আগেই মেনে নিতে হয় কঠিন বাস্তবতা। আমি এমন এক এলাকায় থাকি যেখানে ৭০ভাগ কিশোর ও তরুণ দিনমজুর হিসেবে খেটে খায়।

 

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিতে আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি, এর কিছু সুফল ও কুফল তরুণ-তরুণীদের ওপর পড়ছে। তারুণ্যের শক্তি ভুল পথে পরিচালিতও হচ্ছে। এ সময়ে তরুণরা বিভিন্ন ধরণের মাদকে খুব দ্রুতই আসক্ত হয়ে পড়ছে। যার ফলে এরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ছাত্ররাজনীতির নামে করে বেড়াচ্ছে সন্ত্রাসবাদ,লোক হাসানোর নামে একত্রিত হয়ে ভিডিও বার্তা তৈরির নামে তৈরি করছে গ্যাং কালচার। যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে সমাজে।

 

শিল্প-সাহিত্যের প্রতি কোন ধরণের অনুরাগ এদের তৈরি হচ্ছে না, বই পড়া কিংবা লাইব্রেরিতে যাওয়ার মতো মনোভাব তেমন কারো আজ আর নেই। প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় এরা নতুন বিষয়ের সাথে পরিচিত হচ্ছে ও আসক্ত হয়ে পড়ছে। সংখ্যায় নগণ্য হলেও পারিবারিক শিক্ষা বা সংস্কৃতি অঙ্গনের সাথে জড়িত হয়ে কিছু তরুণ-তরুণী এখনো স্রোতের বিপরীত পথে হাঁটছে।

 

আমি একজন সাহিত্যপ্রেমী, ছোট বেলা থেকেই সময় কেটেছে বই ও লাইব্রেরিতে। তাই আমি স্বপ্ন দেখি দ্রুতই এই দুঃসময় কেটে যাবে। তরুণ-তরুণীরা বুঝতে পারবে জ্ঞান ভিন্ন সমস্ত প্রযুক্তিই অর্থহীন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে সাথে নিজেদের পরিবারের সাথে, বন্ধুদের সাথেও সখ্য গড়ে তুলবে। অলি-গলিতে গড়ে উঠছে সাহিত্যের আসর। সাহিত্য তার পুরনো কদর ও জৌলুস আবার ফিরে পাবে। শুধু সাহিত্যই নয় প্রযুক্তির ভালো ও উপকারী দিকগুলো ব্যবহার করে মানুষের পাশে দাঁড়াবে। ইদানিং কিন্তু এমন হচ্ছেও। অসংখ্য সংগঠন গড়ে উঠছে।

 

মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা অন্যের দুঃখকে কিছুটা হলেও স্পর্শ করতে পারছে, লাঘবের চেষ্টা করছে। আমি নিজেও ‘‘দশকাহন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’’ নামক একটি সংগঠনের সাথে বহুবছর ধরে যুক্ত আছি। এছাড়া সর্বদা মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি যতোটা পারি। ঝরে যাওয়া অনেক পথশিশুর দায়িত্ব আমাদের সংগঠন নিয়েছে। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারদের কিছুটা হলেও সচ্ছলতা এনে দেয়ার চেষ্টা আমরা করেছি। রক্ত দান ও স্বেচ্ছায় রক্তদানে মানুষকে আগ্রহী করে তুলেছি।

 

আমার ভালো লাগে কবিতা,গল্প লিখতে এবং প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, কবিতা পড়তে। ইদানিং একটি ওয়েব ম্যাগাজিন সম্পাদনা করছি। আমি স্বপ্ন দেখি ও বিশ্বাস করি বাংলাদেশের তরুণরা একদিন পৃথিবীর বুকে নিজের ও নিজের দেশের নাম আলোকিত করবে। শিল্প ও সাহিত্যে পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষ জানবে বাংলাদেশের নাম।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here