তারুণ্য ও সমাজ

সমাজ আমাদেরকে তার আকাশে উড়তে দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু ডানা বেঁধে। নাটাই সে কিছুতেই হাতছাড়া করবে না তবে মনোহারিণী কৃতি সে পাই পাই করে আদায় করতে চাইবে। পরস্পরবিরোধী এই অবস্থার শিকার হচ্ছে নওজোয়ানরা। তারুণ্যের সফলতার পরবর্তী অতি রোমাঞ্চকর গল্প যেমন হামেশাই পাওয়া যাচ্ছে তেমনি অতি হতাশা, পারিবারিক, সামাজিক অথবা রাষ্ট্রীয় চাপে ব্যর্থ হয়ে আত্মাহুতি দেওয়ার ঘটনাও কদাচিৎ ঘটছে। মোতাহের হোসেন চৌধুরীর সুশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থা বর্তমান সময়ে এসেও মূল্যবান রত্নের মতো দুষ্প্রাপ্য বলে আন্দাজ হচ্ছে। অনিশ্চিত জীবিকা চিন্তা, অস্বাভাবিক মৃত্যু, দুর্নীতির রমরমা ব্যবসায়, ক্ষমতার অপ-অনুশীলন, মধ্য-বিত্ত পরিবারের মনোবৃত্তি প্রভৃতি বিষয়ের কাছে বর্তমান সময়ের তরুণরা জিম্মি হয়ে আছে। ফলে তারুণ্যের যে সহজাত প্রাণশক্তি আর অদম্য ইচ্ছা শক্তি তা মিইয়ে আসছে।

 

দৃশ্যত আমরা যাকে ডিগ্রিধারী ব্যক্তি বলে অ্যাখ্যা দিচ্ছি অথবা  কতিপয় বিষয়-আশয় কণ্ঠস্থ করে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিকে সহস্রখানেক রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জ্ঞাপন করছি তা সমাজ তথা রাষ্ট্র নিজের জন্য বোধ করি মোটেও মঙ্গলজনক নয়। সেক্ষেত্রে দোষ নিশ্চিত পদ্ধতির। রাষ্ট্র নিজে কৌশলী হয়ে নিজ কাঁধ থেকে অপরাধের জোয়াল ফেলে দিতে চাইলেও রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্ষয় তার নিজের-ই হচ্ছে।

 

সময়ের সাথে সাথে বর্তমানের তরুণ প্রজন্ম অনিয়মকে নিয়ম, বিশৃঙ্খলাকে শৃঙ্খলা, অধীনতাকে স্বাধীনতা, ক্ষমতাকে সত্যিকারের কার্য আদায়ের হাতিয়ার ভেবে নিঃসন্দেহে দিন যাপন করছে। বিনয়ী হওয়া-ও শিক্ষার উদ্দেশ্য বটে, স্বকীয়তা বিসর্জন নয়। কিন্তু পদ্ধতি আমাদের নিজস্ব বলতে যে দুই আনা আছে তা কেড়ে নিয়ে অধীনতার দাস বানাচ্ছে। তাই আমরা সজ্ঞানে না হলেও সিস্টেমের জাঁতাকলে পড়ে পরাধীনতাকেই স্বাধীনতার মর্যাদা দিয়ে আসছি। এ যেনো ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’ চলচ্চিত্রের বাস্তবতার নামে ‘স্বপ্ন জগৎ’ এ বসবাস করা।

 

প্রবীণরা নবীনদেরকে শেখাচ্ছে —’এতো সহজ-সরল হলে চলে বা বাপু!’ ; ক্ষমতাবানরা উপদেশ দিচ্ছে—’এতো দুর্বল হলে তোমার অস্তিত্ব টিকবে কি করে!’ ; পরিবার ধীর গতিতে হলেও নিশ্চিন্তে মাথায় ডুকিয়ে দিচ্ছে—’বাবা, সমাজের নিয়মের বাইরে যাস না, লোকে মানবে না!’ আর যাবতীয় অখাদ্য উপদেশ জীর্ণ হবে না যেনেও আমরা পবিত্র বাণীর মতো স্মরণে রাখছি। ‘আপনার মতো হও,  নিজের ভেতরটাকে জানো’—এসব সত্য বচন বলা ব্যক্তির সংখ্যা নেহাতই কম।

 

চাই সুশৃঙ্খল সমাজ। যে যুবাটি ব্যতিক্রম কিছু ভাবছে বা করছে তাকে সমাজ অনায়াসেই বিশৃঙ্খল বলে অ্যাখ্যা দিয়ে আসছে এবং কি করে তাকে চিন্তা ছাড়া করে সমাজের পথে আনা যায় সেই ব্যবস্থা করে চলছে। কেননা সমাজের শৃঙ্খলার আইনে এই ব্যতিক্রম কিন্তু সার্থক বিষয়টি আগে কখনো ঘটেনি। সুতরাং সমাজ তথা রাষ্ট্রের মগজে থাকা চাই প্রকৃত সংস্কার।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here