কয়েকটি কবিতা

 শুকনো পাতার ছবি : ৩৭

ওবিন ঠাকুর নাকি বলতেন, আকাশ আঁকা

খুবই কঠিন। রাতের আকাশ আর দূরের আকাশ—

সবই ক্যামন একসূত্রে জ্বলজ্বল। তোমার আকাশ

কোথায় হেনা রায়হান? পাতাগুলো ঝিরঝির আর ডালপালা

ছায়াসঙ্গে নির্জীব, নির্বিকার। প্রতিধ্বনির

কথাও তো কেউ-কেউ বলেন; আবছায়া হয়ে রাতের

আকাশের দিকে যাঁরা যাত্রা করেন, তাঁদের কারো-কারো কথা

এই মধ্যদুপুরে এসে মনে পড়ে

 

শুকনো পাতার ছবি : ৩৮

সব কথা যখন খুলে বলবার কোনো উপায় নেই

তখন যা কিছু কাছে-কাছে আছে তা বাতাসে

ভেসে যাক। করুণাময়ী ভাঙা ডালও সবুজ

পাতার স্বপ্ন স্মৃতি নিয়ে একাকী বেঁচে

থাকে। কোন্ কিরণময়ী তুমি, সকাল-দুপুর

দুঃখের জারি-সারি গাও। তোমাকে কি চিনি

আমি? বাতাসে স্বপ্নের পতাকা ওড়ে, দু-চারটে পাখি

কোলাহল করে—সবখানে নিভে আসে আলো

 

শুকনো পাতার ছবি : ৩৯

ভিটেমাটি জড়িয়েই ছিলাম; সে-ও তো অনেকদিন

হলো। আকাশে-বাতাসে ছিলো মোহিনী মগ্নতার সুর। রক্তপাত

থেকে আমরা ছিলাম কয়েক যোজন দূরে

জড়িয়ে ছিলাম ঘাসের বন। বাবা-মায়ের বিবর্ণ ফটোগ্রাফে

মাঝে-মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাতাসে বসন্ত আসে

 

এখন স্মৃতির হাতে অদৃশ্য সব। বাগানে লতা-পাতার হলুদ

ঘ্রাণ আর পায়ে-পায়ে শত্রু আনে নিঃশব্দে

কোথাও কেউ নতজানু নেই আপোসের চিহ্ন নেই

রক্তের দাগ শরীরে মেখে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকেন কামরুল মাস্টার

 

শুকনো পাতার ছবি : ৪০

মুখ খুলবো না; কারা আমাদের বন্ধু, কারা শত্রু

এই নিয়ে আর একটি কথাও নয়। মায়ের কবরের

পাশে হাঁটু মুড়ে বসে থাকেন আমাদের সহযোদ্ধারা; তাদের

চোখে পানিও আছে, বরফও আছে। আর কিছু-কিছু অগ্নিময়

তাজা বারুদ। বাতাসে ঝরে পড়ে হলুদ পাতা, বাগানের পাখিগুলো

অদ্ভুত স্বরে ডাকাডাকি করে। মুখ খুলবো না। বলবো না

কোথায় থাকি কোথায় ছিলাম; গমের বীজ থেকে

ধানের সবুজ দোলানি থেকে যে-ভবিষ্যৎ এসে রুগ্ন বালিকার

কাঁধে হাত রাখে, তার কথাও বলবো না মুখে। এক সমুদ্র রক্তের

নোনা ঢেউয়ে আরো খানিকটা রক্ত ঢেলে চলে যান

মোফাখখার চৌধুরী। তারিখ ষোলই ডিসেম্বর, তারিখ বিজয়

দিবস। বাতাসে-বাতাসে আর্তস্বরে বিউগল বেজে ওঠে

 

শুকনো পাতার ছবি : ৪১

রুগ্ন দেহ থেকে বেরিয়ে আসে অন্ধকার রাত। কার গায়ে

কোন্ রঙের জাম কেউই বুঝতে পারে না। আকাশের তারা থেকে

মায়া ঝরে যেন মৃত মায়ের দোয়া। বন্ধুরব পায়ে-পায়ে একসাথে

এগিয়ে যায়। এদিকে অট্টালিকা ওদিকে ঘাসের জমি—মাঝখান দিয়ে

চলে গেছে পথ, সেখানে সবার মুক্ত চলাচল। বাতাসে পতাকা ওড়ে, স্বপ্ন

আর সহমর্মিতা বিচিত্র সুরে গান গায়। কেউ কারো প্রতীক্ষায় নেই। শুধু

অজানা দীর্ঘশ্বাসে জমে থাকে শৈশবের নদীর গতিপথ। এ-দিন দারুণ দিন

এ-রাত গহন রাত। নভেরা খাতুন তাঁর নিজের পথ দিয়ে একা

হেঁটে যান। কোথায় রাকেশ কামাল, বাবাসকল আমার ছেলেটিকে একটু

দেখতে দিন। রোগাক্রান্ত ক্ষুধার্ত বালকের হাতে হাত রেখে

ডাক্তার টুটুও কিনা লাল পতাকা হয়ে ওঠেন

(১০/৮/২০২০)

1 COMMENT

  1. অনেকদিন পরে সৌভিক রেজা স্যারের কবিতা পেলাম। মুগ্ধতা ভরে গেল।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here