এক ডজন অজানা শচীন

শচীন টেন্ডুলকার ক্রিকেটের এক অনবদ্য নাম। যাকে ক্রিকেটের বরপুত্র বলা হয়। নিজের ক্রিকেটীয় শক্তিতে বার বার নিজেই নিজের রেকর্ড ভেঙেছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চমানের ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত তিনি। শচীন সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য তুলে ধরছি পাঠকদের জন্য।

 

১. পাকিস্তানের প্লেয়ার?

সকলেই মোটামুটি জানেন ১৯৮৯ সালে তাঁর ডেবিউ হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই বোধ হয় জানেন না, ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের ভারত সফরের এক ম্যাচে মধ্যাহ্নের সময় মাঠ ছাড়েন জাভেদ মিঁয়াদাদ ও আব্দুল কাদের। এরপর বদলি হিসেবে পাকিস্তান দলের হয়ে ফিল্ডিংয়ে নামেন শচীন। নিজের আত্মজীবনী ‘প্লেয়িং মাই ওয়ে’তে শচীন লিখেছেন, ‘‘আমি জানি না ইমরান খান (সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক ও দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) মনে করতে পারবেন কিনা কিংবা তাঁর কোনো ধারণা আছে কিনা যে, আমি একবার পাকিস্তানের হয়ে ফিল্ডিং করেছিলাম।’’

 

. স্বপ্ন যখন বোলার হবার

ফাস্ট বোলার হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়েই এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে গিয়েছিলেন। তবে, অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি বোলার ডেনিস লিলির নজর কাড়তে পারেননি। ক্রিকেট বিশ্বের সৌভাগ্য সেদিন লিলি শচীনকে ব্যাটিংয়ের ওপর-ই নজর দিতে বলেছিলেন। পরবর্তী কালে  নিজেকে বিশ্বের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

 

. বয়স ২০, সেঞ্চুরি ৫

মাত্র ২০ বছর বয়সেই পাঁচ-পাঁচটি টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল তাঁর দখলে। যা আজও বিশ্ব রেকর্ড।

 

৪. বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সর্ব্বোচ্চ রান

তিনিই একমাত্র ব্যাটসম্যান যার দখলে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ২০০০ এর বেশি রান করার রেকর্ড রয়েছে। মোট ৪৫ ম্যাচে ২২৭৮ রান রয়েছে শচীনের।

 

. শচীনের শত্রু?

শচীনকে সবচেয়ে বেশিবার আউট করেন ব্রেট লি  (সাবেক অজি ফাস্ট বোলার)। তিনি শচীনকে রেকর্ড-সংখ্যক ১৪ বার আউট করেন। যেকোনো বোলারের ক্ষেত্রেই এটাই সর্বোচ্চ।

 

. এক ওভারে এতো ওয়াইড!

১৯৯৭-১৯৯৮ ক্রিকেট মৌসুমে ভারত-পাকিস্তানের একটা ম্যাচে পাকিস্তানের ইনজামামুল হককে আউট করা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। হঠাৎ শচীন বোলিংয়ে এসেই পরপর ৫টা ওয়াইড বল দিয়ে ব্যাটসম্যানের  মনোযোগ নষ্ট করেন। ৬ষষ্ঠ বল  মারতে গিয়েই ইঞ্জি আউট হয়ে যান। পরবর্তী কালে শচীন বলেন, এটা তিনি পরিকল্পিতভাবেই করেছেন। এমন অনেক বার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শচীন ভারতের ব্রেক থ্রো এনে দিয়েছেন।

. কন্যার নাম সারা। কিন্তু কেন?

শচীনের ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ এক উজ্জ্বল অধ্যায় ছিল ১৯৯৭ সাহারা কাপ। ওই টুর্নামেন্টে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে তার ব্যাটে ভর করে জয় পায় ভারত। দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল ফাইনাল এবং এটাই অধিনায়ক শচীনের প্রথম শিরোপা জয়। এজন্য তিনি নিজের কন্যার নাম রাখেন ‘সারা’।

 

. হেরে গিয়েও জিত

ম্যাচ হেরে সবচেয়ে বেশিবার ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হওয়া একমাত্র ক্রিকেটার তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বাধিক ৬২ বার ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার জেতেন শচীন টেন্ডুলকার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন শ্রীলংকার সনাথ জয়সুরিয়া ৪৮ বার।

 

. একজন খেলোয়াড়, অনেক ভ্যেনু

২৪ বছরের ক্যারিয়ারে শচীন টেন্ডুলকার বিশ্বব্যাপী ৯০টি ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যুতে খেলেছেন, যা একজন ক্রিকেটার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভেন্যুতে খেলার রেকর্ড।

 

. গড় রান

শচীন টেন্ডুলকার মোট ৬টি বিশ্বকাপ (১৯৯২-২০১১) খেলেছেন । সব মিলিয়ে শচীন সর্বোচ্চ ২,৫৬০ রান করেছেন ৫৬.৯৫ গড়ে। যেকোনো ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে এটাই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

 

১০. ১০০তম সেঞ্চুরি: কোথায়?

১৯৯০ সালে শুরু, মাঝে ২২ বছরে একের পর এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন শচীন। টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলে সর্বাধিক সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করেছেন শচীন। তার গৌরবের শততম সেঞ্চুরিটি এসেছিল ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে।

 

১১. শচীনের বিপক্ষে কত জন?

শচীন টেন্ডুলকার ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে পক্ষে-বিপক্ষে মোট ৯৮৯ জন ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলেছেন। এর মধ্যে স্বদেশি (ভারতীয়) ক্রিকেটার ছিলেন ১৪১ এবং প্রতিপক্ষের ছিলেন ৮৪৮ জন। যা এখন পর্যন্ত অদ্বিতীয় ক্রিকেটার হয়ে আছেন।

 

১২. বাবার কাছে প্রতিশ্রুতি

২০১০ সালে শচীনকে একটি অ্যালকোহল ব্র্যান্ড তাদের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার জন্য ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২০ কোটি রুপির প্রস্তাব দেয়। শচীন সরাসরি নাকচ করে দেন। কারণ ১৬ বছর বয়সে তার বাবার কাছে তিনি এমন কিছু না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here