ফিট্জরয় রিচার্ড সমারসেট (১৮৮৫-১৯৬৪), চতুর্থ ব্যারন র্যাগলান (Fitzroy Richard Somerset, the forth Baron Raglan), যিনি লেখক হিসেবে লর্ড র্যাগলান নামেই বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন ইংরেজ নৃতাত্তি¡ক এবং ফোকলোরবিদ। শুধু তার শিক্ষার জন্য নয় মনন ও বুদ্ধির জন্যও তিনি বিখ্যাত ছিলেন। ‘‘ইতিহাসের ভিত্তি’’ (The Basis Of History)-তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ The Hero : A Study in Tradition, Myth, and Drama (1936)-এর প্রথম অধ্যায়; যেখানে তিনি এই সমস্ত গুণাবলির প্রমাণ দিয়েছেন। এখানে তিনি তার তত্ত¡কে শুধু বিভিন্ন উৎস থেকে উদাহরণ দিয়েই সমর্থন করেন নি উপরন্তু সাধারণ কাÐজ্ঞান দিয়ে ঘটনার বুদ্ধিদীপ্ত বিশ্লেষণ করে যুক্তির দুই প্রধান সূত্র আরোহ এবং অবরোহ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমেও তাকে প্রমাণ করেছেন; যেমন হিউম (David Hume : 1711-1776) করেছেন তাঁর ‘‘অফ ট্র্যাজেডি” (Of Tragedy) প্রবন্ধে।
প্রথম কিস্তি
১. সব সময়ই মানবগোষ্ঠীর অতি ক্ষুদ্র একটি ভগ্নাংশই অতীতকে নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষণ করার অভ্যাস অর্জন করে থাকে। বেশির ভাগ মানুষের কাছে, এমনকি বেশির ভাগ শিক্ষিত মানুষের কাছেও অতীত হলো কেবলই বর্তমানের নান্দীপাঠ। বর্তমান থেকে অতীত যতটা স্বাধীন ততোটা স্বার্থহীন নয়। কিন্তু সম্পূর্ণরূপেই অতীত অবিশ্বাস্যভাবে বর্তমান অভিধার মধ্য দিয়েই গৃহীত। আমাদের নিজেদের অতীত জীবনের ঘটনাবলি স্মরণ করা যেতে পারে; এখন, এই সময়ে সেই ঘটনাগুলোকে আমাদের কাছে যেমন বলে মনে হয় বিষয়গুলো ঠিক তেমন ছিলো না, কিন্তু শুধু পারিপার্শ্বিকতাই আমাদেরকে বর্তমান পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমরা আমাদেরকে প্ররোচিত করতে পারি না, সত্যিকার অর্থে আমরা তেমন কিছু করার উদ্যোগই গ্রহণ করি না, যা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে অথবা বাধ্যতামূলকচিন্তা এবং আশাবাদের চিহ্ন হিসেবে প্রবেশ করে আমাদের জীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করতে পারে। আমরা ধরে নেই আমাদের বিশ্বাস এবং মানসিক প্রণালী এখন যেমন আছে চিরকালই তেমন ছিলো। আমাদের জীবনের গল্পগুলোকে আমরা এখনো ঘনিষ্ঠভাবে পূর্বাপর সংযুক্ত ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত পথ মনে করি না, বিবেচনা করি স্বেচ্ছায় নিয়তি এবং নিজেদের দ্বারা ছেঁটে দেওয়া সেই পথ হিসেবে, যে পথ আঁকড়ে আমরা এখনও পড়ে আছি।
২. অন্যদের জীবনকাহিনি বিবেচনায়ও আমাদের মন একইভাবে কাজ করে। আমরা প্রতিটি ঘটনাকে তার ফলাফল দিয়ে বিচার করি; এবং অনুমান করি, যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের জন্য এই ফলাফল অবশ্যম্ভাবী ছিলো বলেই মনে হয়, যেমন তারা আমাদের ব্যাপারেও অনুমান করে থাকে। আমাদের জন্য এটা বিশ^াস করা কঠিন যে একটি জাহাজ যখন ডোবার উপক্রম হয় তখন যারা ডুবে যায় এবং যারা উদ্ধার হয় সবাই এক রকম ভাবনাই ভাবে; সবাই ভাবে সে বাচঁবে। আমরা বলে থাকি যে সামনের ঘটনা পরের ঘটনার উপর তার ছায়া ফেলে, কিন্তু সত্যিকারভাবে আমরা যেটা বুঝিয়ে থাকি সেটা হলো, পরের ঘটনা আগের ঘটনাকে ঢেকে দেয় অর্থাৎ পূর্বের ঘটনার উপর পরের ঘটনার ছায়া পড়ে; মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির এই ত্রæটির জন্য আমরা সবাই যন্ত্রণা ভোগ করি — এই কথায় এটাই প্রকাশিত হয়েছে ‘‘মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোনো মানুষকে সুখি বলো না,’’ যার প্রায়োগিক অর্থ হলো অল্প কয়েক ঘন্টা বা দিনের দুঃখ অথবা দুর্ভাগ্যের ওজন বছর বছর ব্যাপী সুখ এবং সার্থকতার চেয়ে অনেক বেশি। এই হলো আমাদের তাবৎ ইতিহাস চর্চার চারিত্র্য। পঞ্চদশ লুইস এবং ষোড়শ লুইস এর শাসনকালের ঘটনাপ্রবাহ অবশ্যম্বাবীরূপেই ফরাসী বিপ্লবকে তাড়িত করেছে বলে আমরা বিবেচনা করি, যদিও ভলতেয়ার এবং গিবন আসন্ন বিপর্যের কোনো চিহ্নই দেখেন নি।১ যদিও তার মৃত্যুর সময়ে কনফেডারেশন সবচেয়ে সার্থকতা অর্জন করেছিলো তবুও স্টোনওয়াল জ্যাকসন (Stonewall Jackson : 1824-1863)র যুদ্ধকে একটি ঠুনকো ক্ষতিকারক কারণ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। আমাদের মানসিক সংকীর্ণতার জন্যই হোক অথবা আমাদের শিক্ষার দুর্বলতার জন্যই হোক এমনকি পৃথিবীতে ইতিহাসের গতি ধারায় আমাদের মধ্যে যারা অকৃত্রিম ভূমিকা পালন করেছেন, এক কথায় তাদেরকে ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গিতেই বিচার করা হয়।
৩. ইতিহাস সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে, আমার উচিৎ হবে শব্দটির সংজ্ঞা প্রদানের মাধ্যমে এ বিষয়ে আমাদের বৈশ্বিক অনুশীলনের ধরন কী হবে যথার্থভাবে তা নির্ধারণ করা। ইতিহাস হলো অতঃপর জ্ঞাত ঘটে যাওয়া অতীত ঘটনাবলির কালানুক্রমিক পরম্পরার ধারাবাহিক বিস্তারিত বিবরণ। যথাযথ নির্ভুল কালানুক্রমিকতা ছাড়া কোনো ইতিহাস হতে পারে না। মুখ্যত নির্ভুল পারম্পর্যের মাধ্যমে ঘটনাসমূহের মধ্যেকার যথার্থ সম্পর্ক নির্নয় করাই হলো ইতিহাসের সারবস্তু। আমরা অবশ্যই ম্যারেনগোর যুদ্ধ এবং ওয়াটার লুর যুদ্ধ সম্পর্কে কিছু না কিছু জানি, কিন্তু কোনটি আগে ঘটেছে তা না জেনে আমরা কিছুতেই নেপোলিয়নের ইতিহাস লেখার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি না।২
৪. কেন মানুষ ইতিহাস পড়ে এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলি অন্যকে জানানোর জন্য ছড়িয়ে দেয় ? শুধু পাঠ করা এবং ঘটনাকে ছড়িয়ে দেওয়াই ইতিহাসের মর্মবস্তু হতে পারে না। শিক্ষিত লোকেরা নানা কারণে ইতিহাস পাঠ করে থাকে, কারণ তারা এর মধ্যে বর্তমানের একটা ব্যাখ্যা খুঁজে এবং ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা আশা করে। অতীতের টিকে থাকা থেকেই তাদের ইতিহাস সম্পর্কিত কৌতূহলের আবির্ভাব ঘটে; কারণ দীর্ঘকাল থেকে ক্লাসিককেই সব ধরনের জ্ঞানের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এবং ক্লাসিকের জ্ঞান কোনো না কোনোভাবে ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত; তাই দেখা যায় বাইবেল এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ এবং ধর্মসম্পৃক্ত গ্রন্থাবলির মধ্যে ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ আছে, কারণ সেগুলো এসব বইয়ের মাধ্যমেই জীবন্ত হয়ে বেঁচে আছে; আর এই জন্য এবং সম্ভবত অন্যান্য কারণেও ইতিহাস সম্পর্কিত জ্ঞান শিক্ষিত মানুষের মানসিক কলকব্জার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। যেভাবেই হোক এই বইই আমাদের ইতিহাস সম্পর্কিত আগ্রহের সৃষ্টি করে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে ইতিহাস সম্পর্কিত আমাদের এই গ্রন্থনির্ভরতার ব্যাপারটাকে খুব সামান্য পরিমাণেই উপলব্ধি করা হয়েছে, এমন কী শিক্ষিত এবং লেখক যারা বইকে কেন্দ্র করেই বেঁচে থাকেন তারাও। একজন অশিক্ষিত মানুষ, যদি তিনি ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী হন, তাহলে তিনি এটা শুধুমাত্র একজন ঐতিহাসিকের কাছ থেকে শুনেই শিখতে পারেন, অথবা একজন মানুষ যিনি তাকে ইতিহাসের বই পড়ে শোনাতে পারেন, এবং যদি তিনি কোনো ঘটনা ভুলে যান তাহলে তিনি তার শিক্ষককে জিজ্ঞেস করে তা জানতে পারেন, ঘটনাগুলোর কোনো নিরীক্ষা এবং শ্রেণিকরণের ক্ষমতা না থাকায় তার অর্জিত ঐতিহাসিক জ্ঞান পরিমানে স্বল্পই হবে, যে কারণে তার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার অত্যন্ত ক্ষুদ্র সীমানার বাইরের ঘটনাসমূহের কালানুক্রম সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই থাকে না। সমস্ত ইতিহাসই আমি যেমনটি বলেছি (ঠিক তেমনটিই) নির্ভর করে কালানুক্রমের উপর; এবং ঘটনাসমূহকে কালানুক্রমিক পরম্পরায় নিরীক্ষাকরার দৃষ্টিতে দেখা ছাড়া কোনো সত্যিকারের কালানুক্রমের ধারণা গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে না।
৫. আমি যখন আমার পাঁচবছর বয়েসী শিশুপুত্রকে ঘুরে ঘুরে কেয়্যারলিওন/সিয়েরলিওন -এর এ্যামফিথিরেটার (amphitheater) দেখাতে দেখাতে ব্রিটেনে রোমানদের ক্রিয়াকাÐ সম্পর্কে কথা বলছিলাম, তাকে তখন খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল এবং সে আমাকে প্রশ্ন করল, ‘‘তখন তুমি কি সেখানে ছিলে?’’ যখন আমরা আইরিশ বø্যাকস্মিথ (Irish blacksmith) পাঠ করি, তখন আমরা দেখি সে বলছে, স্থানীয় প্রস্তরসমাধীর চেয়েও তার কারখানা অনেক প্রাচীন।৩ এটা ছিলো তার পিতামহের সময়, এবং তিনি অত্যন্ত বৃদ্ধ বয়সে মারা যানÑ অথবা একজন গেঁয়ো ইংরেজ যিনি বলেছেন যে প্যারিস চার্চ (ত্রয়োদশ শতাব্দী) বাস্তবিকই অনেক পুরাতন ছিলো, এবং সেটা ছিলো চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় পূর্বে — আমরা বুঝতে পারি বক্তা একজন ব্যতিক্রমধর্মী বোকা অথবা মূর্খ, কিন্তু অতীত সম্পর্কে তার মনোভাব অস্ট্রেলিয়ান কালোদের মতোই, যারা একটি গল্প শুরুই করে এভাবে,‘বহু বহু আগে, যখন আমার মা একজন শিশু ছিলেন, যখন সারা দিন এবং সারা রাত্রি ধরেই সূর্য প্রজ্জ্বলিত ছিলো এটা অজ্ঞতারই অবশ্যম্ভাবী ফল।৪
৬. তারিখ হিসেবে ১৬০০খ্রিস্টাব্দের কোনো অর্থ আছে এটা একজন অশিক্ষিত মানুষকে বোঝানো মোটের উপর প্রায় অসম্ভব। আফ্রিকা এবং আমেরিকা উভয় দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষই ঘটনার দলিলপত্র বা প্রমাণসমূহকে জীবন্ত অবস্থায় মনে রাখার জন্য এক ধরনের ক্যালেন্ডার দণ্ড ব্যবহার করে, কিন্তু কীভাবে এই সমস্ত প্রমাণকে দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করা যায় তার কোনো উপায় তাদের জানা ছিলো না। তাদের ব্যবহৃত দণ্ডের গুচ্ছ যারা এটাকে একত্রিত করে বেধেঁছে তাদেরকে ছাড়া অন্য কাউকেই কোনো তথ্য পৌঁছাতে পারতো না, এবং আপনি যদি অশিক্ষিত লোকদের বলেন যে একটি দণ্ড দ্বারা এক বছর সময় বোঝানো হচ্ছে, এবং তারপর ৩৩৫টি দণ্ড গণনা করেন, তখন তারা অল্প কিছু বুঝতে পারবে। যদি আপনি তাদেরকে বলেন রানি এলিজাবেথ এবং শেক্সপিয়ার উভয়ই তখন বেঁচে ছিলেন, তাদের পক্ষে আপনাকে বিশ্বাস করা খুব কঠিন হবে, যদিও ইতোমধ্যে শেক্সপিয়ার সত্যিই কিছু প্রাচীন রাজার সংগে সংযুক্ত ছিলেন, যা তার নাটকে সম্পূর্ণ সাম্প্রতিক করে উপস্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু কোনোভাবেই যা প্রমাণযোগ্য নয়। রানি এলিজাবেথ যাকে শেক্সপিয়ার খুব কমই উল্লেখ করেছেন, তার চেয়ে তিনি কিং লেয়ার সম্পর্কে অনেক বেশি বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।
৭. ঘটনা হলো এই কালানুক্রমিকতার ব্যাপারটা যে সম্পূর্ণভাবে পড়ালেখার উপর নির্ভর করে আমাদের ঐতিহাসিকদের কাছে মনে হয় এটা পুরোপুরিই অজানা ছিলো। প্রফেসর চেম্বারস্ -এর মতানুসারে ‘‘সম্ভবত, এমনকি বর্বর যুগেও, লিখিত দলিলের অভাবে, রাজাদের উত্তরাধিকার এবং শাসনকাল বিবেচনাযোগ্য নির্ভুলতার সাথে মনে রাখা হতো।’৫ যদিও তিনি এই ধরনের ঘটনা মনে রাখার কোনো উপায় বা কৌশলের সুপারিশ করেন নি, এগুলো সম্প্রসারণের বা ছড়িয়ে দেবার কোনো সম্ভাব্য করণকৌশলও তিনি বাতলে দেন নি, বরং তিনি আমাদেরকে এ্যাংলো-স্যাক্সন সেটেলমেন্টের কালানুক্রমিকতার ধারণাকে বিশ্বাস করতে বলেন, যা এমনকি এক হাজার বছর পরও তার বংশধরদের কাছে অজ্ঞাত ছিলো।৬ পাস্তন লেটারস্ এর সম্পাদক জানিয়েছেন যে,‘চিঠিগুলোতে লেখকেরা যেভাবে তারিখ দিয়েছেন তাতে স্পষ্টতই দৃশ্যমান হয় যে, আমরা এখন যেভাবে হারিয়ে যাওয়া সময় কে পরিমাপ করি আমাদের পূর্বপুরুষেরা তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে সময়ের বিচ্ছিন্নতাকে পরিমাপ করতো।৭ সেই সময়ে সাধারণ মানুষ খ্রিস্টীয় সালের চলমান বছরের সাথে পরিচিত ছিলো কি না সন্দেহ; সেটা ছিলো এক ধরনের গির্জা বা যাজক সম্পর্কীয় গণনা। তারা মুখ্যত কালে ভদ্রে তাদের চিঠিতে বছর দিয়ে তারিখ লিখতেন এবং যখন তারা এটা করতেন তখন তারা তা করতেন আমাদের প্রভূর বছর দিয়ে নয়,তারা এটা করতেন রাজার শাসনকাল দিয়েই। কোনো সময়ের বর্ষভিত্তিক ঘটনাবলির বিবরণ এবং কালানুক্রম যখন আমাদের প্রভূর বছর দিয়ে করা হতো তখন তা মোটের উপর সব সময়ই সংখ্যায় ত্রুটিতে ভরপুর থাকতো। এবং একই সাথে এটাই প্রমাণিত হতো যে বছরের নিখুঁত গণনার বিষয়টি ছিলো ব্যবহারিক প্রয়োগের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। এই হলো কালানুক্রমের যথার্থতা যা অধ্যাপক চেম্বারস্ পঞ্চম শতাব্দীর অশিক্ষিত স্যাক্সনদের জন্য স্বতঃসিদ্ধ বলে উল্লেখ করেছিলেন, যা পঞ্চদশ শতকের শিক্ষিত ইংরেজের কাছে যা সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিলো, এতে এটাই নির্দেশ করে যে তার স্বীকৃত সত্যটি ভুল বিবেচনাজাত অনুমান ছাড়া বেশি কিছু নয়।
৮.বিভিন্ন লেখক কালানুক্রম সম্পর্কে যে সব ধারণার কথা ব্যক্ত করেছেন অশিক্ষিত ইংরেজদের মোটের উপর সে সব সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিলো না। মি. ফক্স স্ট্রেঞ্জওয়েজ বলেন, ‘ফোকলোরের ইতিহাস সম্পর্কে কোনো ধারণা নাই।’৮ একই গাথায় নেপোলিয়নের সাথে এসটি. জর্জের যে সাক্ষাতের কথা উল্লেখ আছে তাদের কাছে তার কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।’ স্যার ই. কে. চেম্বারস্ আমাদের জানান কর্নওয়ালের ফোক নাটক ‘‘মাইলর’’ (Mylor : Cornwall) এ এগিনকোর্ট ও কুইবেক যুদ্ধের সাথে ১৭৩৯ সালে ভারনন এর পোর্ট বেলো দখলের ঘটনাকে একত্রে মিশিয়ে ফেলা হয়েছে।৯
৯.মি. টিডি বলেন যে, ‘ফোক নাটকে’র আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, জনরুচির সাথে এগুলোর একটি মজার সম্পর্ক আছে। ঐতিহাসিক বোধের অভাবে যাকে অতিক্রম করা সম্ভব হয় না।১০ আমাদের পক্ষে এমন একটি মানসিক গঠনকে অনুধাবন করা সম্পূর্ণ অসম্ভব যেখানে, একটি শতাব্দী, বা পাঁচশো বছর বিচ্ছিন্ন থাকা মোটের উপর কোনো অর্থ বহন করে না; এবং এখন পর্যন্ত যাদেরকে আধুনিক প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদেরও বেশিরভাগের সাধারণ অবস্থা ঐ রকমই। ধন্যবাদ যে আমাদের গ্রামীণ পূর্বপুরুষেরা এই ধরনের মানসিকতার জন্য একশো বছর পূর্বে অসামঞ্জস্য সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা ছাড়াই বোনাপার্টের বিরুদ্ধে এসটি. জর্জকে ঝামেলায় ফেলে দিয়েছিলো, এবং এমনকি চসারের কোনো সাক্ষী প্রমাণ ছাড়াই এটা বিশ^াস করার অনেক ভালো কারণ ছিলো যে আমাদের মধ্যযুগীয় পূর্বপুরুষেরাও একই ধরনের অবিশ্বাস্য বিমূর্ততার জন্য দায়ী ছিলো। ফোকলোরে সর্বোপরি এটা বলাই যায় যে, ‘‘একহাজার বছর পূর্বে আসলে গতকাল।’’
১০.যে কোনো মানেরই হোক এক ধরনের অর্ধশিক্ষিত জনগোষ্ঠীই এই ধরনের নাটকে অভিনয় করেছেন এবং এই সমস্ত গাথা গেয়েছেন বা আবৃত্তি করেছেন। এসটি. জর্জ এবং এগিনকোর্ট সম্পর্কিত ধারণা যদি প্রকৃতই বই থেকে উৎসারিত না হয়ে থাকে তা হলে তাকে অবশ্যই গ্রন্থগত শিক্ষার দ্বারা অধিকতর সমৃদ্ধ করা দরকার। একটি অর্ধশিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত লোকসহ সকল সদস্যই শুধু বইয়ের অস্তিত্ব থেকে লাভবানই হয় না বরং সাধারণভাবে বই ও লিখিত দলিলের তাৎপর্য ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও অনেক কিছু শিখতে পারে, যদিও কেন্দ্রীয় আফ্রিকা অথবা, উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় এখনও সম্পূর্ণ অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী আছে, যেখানে সমাজের পুরো কাঠামোটিই এমন একটি পদ্ধতির ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত যেখানে লেখাপড়া পুরোপুরিই অনুপস্থিত, যে কারণে সেখানে লেখার প্রয়োজনীয়তা শুধু অজানাই নয়, সম্পূর্ণ অভাবনীয়ও বটে। যেখানে যতক্ষণ পর্যন্ত লেখার প্রয়োজনীয়তাই অচিন্তনীয় সেখানে ততক্ষণ পর্যন্ত যে কোনো ধরনের জ্ঞান যা লেখার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা সম্ভব, সেটাও অভাবনীয়। যেকোনো ধরনের জ্ঞান যা অংশতও লিখিত দলিলের উপর নির্ভরশীল, তা অসভ্য বা বর্বরদের জন্য মোটেও কোনো অর্থই বহন করে না। যেহেতু ইতিহাস লিখিত কালানুক্রমের উপর নির্ভর করে, এবং অসভ্যদের যেহেতু কোনো লিখিত কালানুক্রম নেই, তাই অসভ্যদের কোনো ইতিহাস থাকতে পারে না। যেহেতু অতীত সম্পর্কে আগ্রহ মর্মগতভাবেই গ্রন্থ দ্বারা উৎসারিত, তাই অসভ্যরা অতীত সম্পর্কে কোনো আগ্রই বোধ করতে পারে না; সেখানে অতীতের সকল উপাদান সত্যিকার অর্থে সবটুকুই হারিয়ে যায়। আমরা এই ঘটনা আরো ভালোভাবে অনুভব করতে পারবো যদি, আমরা বিবেচনা করি যে কত দ্রæত অতীত আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে যায়, যদিও বইয়ের মাধ্যমে এটা আমাদের কাছে আর ফিরে আসে না । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, sprunking, palatine, farthingale এই শব্দগুলোর অর্থ এখন আর কয়জন নারী জানেন? যদিও খুব বেশি দিন হয় নি যখন এই শব্দগুলো এখনকার jumper শব্দটির মতোই সবার কাছে পরিচিত ছিলো।
১১. উপরন্তু খুব পরিচিত ঘটনাগুলোও দ্রæত ভুলে যাচ্ছে মানুষ। নব্য প্রস্তর যুগে মসৃণ পাথরের কুঠার হাজার হাজারে তৈরি হতো, কিন্তু ধাতুর প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলো সম্পর্কিত সকল জ্ঞানই হারিয়ে যায়, এবং তার অল্প কিছু শতাব্দী পরেই মানুষ এটা মনে করতে শুরু করলো যে যদি কেউ এটা খুজঁতে শুরু করে তা হলে তার উপর বজ্রপাত ঘটবে।১১
১২. সুতরাং যখন আমরা ইংল্যান্ডের অতীত ইতিহাসের প্রতি আমাদের আগ্রহের সংগে তুলনীয় আগ্রহ অসভ্য বা আদিমদের উপরও আরোপ করি , তখন আমরা তাদের উপর এমন একটি রুচি আরোপ করি যা তারা সম্ভবত ধারণ করে না; এবং যদি তারা তা ধারণ করেও তবু তারা সম্ভবত কাউকে পরিতৃপ্ত করতে পারে না। তবুও পুনরায় আদিম বা অশিক্ষিত মানুষকে অতীত সম্পর্কে আমরা যতই তাগিদ দেই না কেনো আমাদের চেয়ে তাদের চেতনা অনেক অগভীরই থাকে। এমনকি তাদের ইতিহাস শিক্ষার ইচ্ছা থাকলেও, যেহেতু তার কোনো উপায় নাই, তাই প্রাচীন বিষয়াদি সেখানে সহজেই ধ্বংস হতে পারে, এবং তারা নিজেদেরকে অতিপ্রাকৃত কোনো উৎসের নিকট উৎসর্গ করে তৃপ্তি বোধ করে; তারা এমন একটি জনগোষ্ঠী দ্বারা তৈরি যাদের সকল রীতিপ্রথাই ছিলো অতিপ্রাকৃত এবং দৈনন্দিন জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট। যদিও অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের নিজের থেকেও বিচ্ছিন্ন ছিলো। নিজেকে জাহির করবার আকাক্সক্ষায় তারা এসব বিষয় সম্পর্কে চিন্তা করলেও তাদের কোনো ব্যবহারিক কাজে লাগতো না বলেই শেষ পর্যন্ত সেগুলোর উপর তাদের সত্যিকারের কোনো আগ্রহ থাকতো না। অতীতের পুরাতাত্ত্বিক নির্মাণের প্রতি বেশির ভাগ ইউরোপিয়ানের মনোভাবই সম্পূর্ণ একই রকম।
অশিক্ষিত সমাজে সকল জ্ঞানের বিস্তারই সনাতনী ঐতিহ্যকেন্দ্রিক এবং সকল ঐতিহ্যই সেখানে শক্তভাবেই উপযোগমূলক। এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলোকে অবশ্যই স্মরণ করতে হয় — সমস্ত কিছু পাওয়ার জন্য, সংরক্ষণ করার জন্য, খাদ্য প্রস্তুত করার জন্য; বাড়িঘর এবং নৌকা তৈরি করার উপায়, অস্ত্রপাতি তৈরি, যন্ত্রপাতি, পোশাক, এবং অলংকার, সকল জাদুকরী কৃত্যানুষ্ঠান, সংগীত, নৃত্য, সকল উৎসর্গ এবং শুদ্ধিকরণ, একই সাথে তেমন সম্পর্কসমূহ যার উপর বিবাহ, উত্তরাধিকার এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা নির্ভর করে এমন সবকিছুর জন্যই। এর সবকিছুই একজন শিক্ষিত ব্যক্তির মধ্যে একটা চমৎকার উপজীব্য হিসেবে কাজ করবে, যারা ঘটনাসমূহ লিখে রাখবে, এগুলোকে উদ্ধৃতির জন্য সাজিয়ে রাখবে এবং তারপর সে তার মন থেকে এসবকে মুছে ফেলে এক সময় ভুলে যাবে, কিন্তু একটি অশিক্ষিত সমাজে এসবের কোনোই মূল্য নাই।
১৩. অশিক্ষিত সমাজে সকল জ্ঞানের বিস্তারই সনাতনী ঐতিহ্যকেন্দ্রিক এবং সকল ঐতিহ্যই সেখানে শক্তভাবেই উপযোগমূলক। এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলোকে অবশ্যই স্মরণ করতে হয় Ñ সমস্ত কিছু পাওয়ার জন্য, সংরক্ষণ করার জন্য, খাদ্য প্রস্তুত করার জন্য; বাড়িঘর এবং নৌকা তৈরি করার উপায়, অস্ত্রপাতি তৈরি, যন্ত্রপাতি, পোশাক, এবং অলংকার, সকল জাদুকরী কৃত্যানুষ্ঠান, সংগীত, নৃত্য, সকল উৎসর্গ এবং শুদ্ধিকরণ, একই সাথে তেমন সম্পর্কসমূহ যার উপর বিবাহ, উত্তরাধিকার এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা নির্ভর করে এমন সবকিছুর জন্যই। এর সবকিছুই একজন শিক্ষিত ব্যক্তির মধ্যে একটা চমৎকার উপজীব্য হিসেবে কাজ করবে, যারা ঘটনাসমূহ লিখে রাখবে, এগুলোকে উদ্ধৃতির জন্য সাজিয়ে রাখবে এবং তারপর সে তার মন থেকে এসবকে মুছে ফেলে এক সময় ভুলে যাবে, কিন্তু একটি অশিক্ষিত সমাজে এসবের কোনোই মূল্য নাই। ভুলে যাবার আগে মানুষের মনে এসবের জন্য তেমন কোনো মূল্যই তৈরি হয় না। আর একবার ভুলে গেলে কখনোই তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না। তার অর্থ এই নয় যে, অশিক্ষিত মানুষেরা মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন অতীতের ঘটনাবলি সরবরাহ করতে অক্ষম; কিন্তু তা না করার কারণ এই যে, এগুলো ছড়িয়ে দেবার বা সরবরাহ করার কোনো উদ্দীপনাই তাদের ছিলো না। তাছাড়া এমন কোনো করণকৌশলই তাদের ছিলো না যার দ্বারা এগুলোকে তারা মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারতো। অনেক বিষয় ছিলো যেগুলোকে তারা স্মরণ করতো । তাদের পিতামহের সময়ের একটি বড়ো অতৃপ্তি ছিলো, কারণ এখনো তাদের গ্রাম থেকে ঐসমস্ত স্থান সম্পর্কে অভিযোগ করা হয় যেগুলো থেকে লোকজনকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো; তারা মনে করতে পারে যে তাদের বাবাদের সময়ে পাশের গ্রামের সাথে একটি বড়ো ধরনের কলহ হয়েছিলো, কারণ এটা বংশপরম্পরায় এমন একটি খুনোখুনিমূলক শত্রæতার দিকে চালিত করেছিলো যা সহজে শেষ হয় নি। কিন্তু যখন সকল অংশগ্রহণকারীই মৃত্যুবরণ করলো এবং যখন জমি জমা সংক্রান্ত সকল দাবি দাওয়ার নিষ্পত্তি ঘটলো. তখন এই কলহের কথা সবাই ভুলে গেলো। এগুলো মনে রাখার আর কোনো উৎসাহই তাদের থাকলো না; এবং এমন কোনো উপায়ও ছিলো না যা দিযে এর স্মৃতিকে সংরক্ষণ করা যেতো।
১৪. কর্নেল ম্যাকনব তার ‘‘চিনস অব বার্মা’’ লেখায় বলেন, যখন একজন মানুষ বৃদ্ধ এবং দুর্বল হয়ে যায় এবং শক্তির সাহায্যে তার যথাযথ প্রাপ্য আদায় করতে অপারগ হয় এবং যখন কোনো উৎসব বা ভোগেই তার কণ্ঠ আর উচ্চকিত হয় না, প্রসারিত হয় না তার শক্তির সাহসী হাত, তখন তার পুত্র ক্রমান্বয়ে তার স্থান গ্রহণ করতে শুরু করে।১২ তখন পুত্র বাবার সাথে আপস করার পরিবর্তে বাবাই পুত্রের সাথে আপস করে; তারপর সকল কর্তৃত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করে শেষ পর্যন্ত এক সময় সে তার ঘর ছেড়ে একটি ছোট্ট কুঁড়ের মধ্যে তার জীবনের ইতি ঘটায়। মৃত্যু তাকে গ্রাস করবার আগেই সে বিস্মৃত হয়ে এক পাশে পড়ে থাকে। একজন মানুষ যৌবনে যার অঢেল জমি ছিলো, সহস্রবার আক্রমণ করার বীরত্ব ছিলো, যিনি অঢেল সম্পদের মালিক ছিলেন, তিনিই তার বার্ধক্যে গুরুত্বহীন এক অসত্তা মাত্র। তিনি হয়ে পড়েন পরিচয়হীন গুরুত্বহীন অস্তিত্বহীন।’মনে হয়ে চৈনিকরা শুধু দূর বিচ্ছিন্ন অতীত নয়, মাত্র ত্রিশ বছর আগের ঘটনাসমূহ সম্পর্কেও সম্পূর্ণভাবে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আমার বিশ্বাস যদি তাদের কোনো ব্যক্তিগত বঞ্চনা যুক্ত না থাকে অশিক্ষিতদের জন্য এটা একটা অতি সাধারণ ঘটনা মাত্র।
১৫. নাইজেরিয়ার জুকুনদের (Jukun Of Nigeria) সম্পর্কে বলত গিয়ে, মি. মিক মন্তব্য করেন,‘অতীতের প্রতি কোনো একক আগ্রহ বা গর্বের অনুপস্থিতি, অথবা কোনো ঘটনা সম্পর্কিত জ্ঞান গত শতাব্দীর পূর্ববর্তী বিষয়।১৩ জুকুনদের মধ্যে তাদের প্রধান শহর ধ্বংস সম্পর্কিত কোনো স্পষ্ট ঐতিহ্য এবং এমনকি এর স্থানও অনিশ্চিত, যদিও বিশ্বাস করা হয় ফুলানি (Fulani)বিজয় মাত্র একশত বিশ বছর আগের ঘটনা।১৪ ইউরোপেও বিষয়গুলো সম্পূর্ণভাবেই একরকম। বলা হয়ে থাকে যে, নেপোলিওনের মৃত্যুর পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই ফ্রান্সের কৃষক সম্প্রদায় তার যোগ্যতম কৃতকার্যময় জীবনের ঘটনাগুলোকে পুরোপুরিই ভুলে গিয়েছিলো, এবং তার দশ বছর আগে তার সম্পর্কিত গানের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া দুরূহ হতো একসময় যার বিশাল বিস্তৃত জনপ্রিয়তা ছিলো।১৫
১৬. নিশ্চিতভাবেই বেশিরভাগ অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীরই ঐতিহ্যবাহী কিছু গল্প আছে , তারা এগুলোকে তাদের বীরদের জীবন সংগ্রাম এবং বীরত্বের গাথা হিসেবে সম্ভবত ঐতিহাসিক ঘটনা বলেই মনে করে। কিছু যুক্তিসিদ্ধকরণ এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে এইসব জীবন সংগ্রাম এবং বিজয় গাথা ঐতিহাসিক পালাবদল এবং বিজয় হিসেবে উপস্থাপনের জন্য তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে, যদিও এই সমস্ত গল্প প্রকৃত অর্থেই পুরাণ। পুরাণ কী সে সম্পর্কে আমরা পরে আলোচনা করবো। এখানে আমি উল্লেখ করতে পারি যে, বিভিন্ন লেখকের লেখা থেকে যে সমস্ত বীরকে উদ্ধৃত করেছি, তাদের মধ্যে ফরাসি ঐতিহ্যের নেতৃত্বদানকারী বীর চার্লিম্যাগনে কিংবা তার সিংহাসনের উত্তরাধিকারীদের কেউই ছিলেন না। এই বীরেরা ছিলেন রোলান্ড গারগানচুয়া এবং লিটল রেড ম্যান।১৬
টীকা ও সূত্র
1.Louis XV and Louis XVI : (1710-1774 and 1754-1793), respectively; kings of France the latter guillotined in the French Revolution. Voltaire : pseudonym of Francois Marie Arouet (1694-1778) ; French philosopher, literary critic, historian, and satirist. Gibbon : Edward Gibbon (1737-1794); English historian.
- Battle of Marengo : battle between Napoleon and the Austrians at Marengo, a village in northwestern Italy, and won by Napoleon (June 14, 1800). Battle of Waterloo : battle between Napoleon and the English and Prussians at Waterloo, in central Belgium, and won by the latter (June 18, 1815).
- 3. Caerleon : village in Monmouthshire, western England, containing the remains of a Roman amphitheater and other vestiges of Roman occupation. dolmen : monument made of huge stones or megaliths forming a chamber, probably a tomb.
4.Folk-Lore (a periodical), xlv, p.233 (Raglan’s note).
- 5. R. W. Chambers, England Before the Norman Conquest, p. 69 (Raglan’s note).
- 6. the Settlement : region, roughly coextensive with modern England, settled by the Anglo-Saxons who migrated from the Continent from the fifth century A.D. on.]
- Paston Letters, ed. J. Gairdner, vol. i, p.ccclxv (Raglan’s note).
- 8. A. H. F. Strangways, Cecil Sharp, p.51 (Raglan’s note). George : (?-c. 303); martyred patron saint of England.
- Agincourt : battle between the England and the French at Agincourt, a village in northern France, and won by Henry (October 25, 1415). Quebec : battle between the English and the French at Quebec, Canada, and won by the English (September 13, 1759). Porto Bello by Vernon : Edward Vernon (1684-1757; English admiral) captured Porto Bello, a seaport village in northern Panama, from the Spanish. E. K. Chambers, The English Folk-play, p. 83 (Raglan’s note).]
- R. I. E. Tiddy, The Mummers’ Play, p. 93 (Raglan’s note).]
- Neolithic age : latter half of the Stone Age, characterized by use of polished stone implements and by such other advances as domestication of animals and weaving (in Britain, c. 2500-c. 1900 B.C.).] A. B. Cook, Zeus, vol. ii. P. 510 (Raglan’s note).]
- D. MacNabb, Report on the Chins, p. 16 (Raglan’s note).
- C. K. Meek, A Sudanese Kingdom, P.21(Raglan’s note). ]
- Ibid., p. 43 (Raglan’s note).]
- A. van Gennep, La Formation des Legendes, p. 193 (Raglan’s note). Ibid.,pp. 185-6 (Raglan’s note).
- Charlemagne : Charles the Great (742-814; Frankish king, 768-814, and emperor of the West, 800-814). Roland : one of the twelve fabulous Paladins, warriors or peers who, in the cycle of the Charlemagne legends, always accompany Charlemagne. Gargantua : kindly giant in French folklore connected with the cycle of Arthurian iegends. the Little Red Man : hero of French folklore.
আলোচনাটা খুব সুস্পষ্ট। ইতিহাসের ভিত্তিতে ঐতিহাসিক সত্যতা ও মানুষের অতীতের জ্ঞান থেকে প্রাপ্ত ধারণা, প্রথা, রীতি, রিচুয়ালস সব কিছুর একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে অনেক শিক্ষামূলক আলোচনা করেছেন স্যার।
খুব সুন্দর লেখা।চিন্তাকে শিক্ষিত করে তোলবার মতো একটি লেখা। ভালো লাগলো।
পড়ে মনে হয় না এটা অনুবা। ভাষা এত সাবলীল ও গতিময়। ইতিহাসেরও ইতিহাস থাকে, ভূগোল, পরিবেশ, বিশ্বাস, অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ কী নেই!